২৯ মরদেহ উদ্ধার, দুই তদন্ত কমিটি

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া এমভি সাবিত আল হাসান লঞ্চে থাকা ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল লঞ্চটিকে ক্রেন দিয়ে টেনে তীরে তুলে আনে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। এরপর লঞ্চ থেকে ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যায় নদীতে ভেসে উঠলে আরো দুজনের মরদেহ উদ্ধার করেন উদ্ধারকারীরা। এর  আগে রোববার লঞ্চডুবির ঘটনায় পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের স্বজনদের কাছে এসব মরদেহ হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক জানান, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার সময় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় লঞ্চের ভেতর থেকে ২২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রোববার রাতে ডুবুরিরা লঞ্চ থেকে পাঁচ নারীর মরদেহ উদ্ধার করেন। সন্ধ্যায় আরো দুটি মরদেহ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে।

নিহতরা হলেন মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার রুনা আক্তার (২৪), সদর উপজেরার চৌহদ্দামোড় এলাকায় সোলায়মান (৬০), বেবী বেগম (৬০), সুনিতা সাহা (৪০), মানসুরা বেগম,  পাখনা (৪৫),  বিথি (১৮), আরিফা (১), পতিমা শর্মা (৫৩), শামসুদ্দিন (৯০), রেহেনা বেগম (৬৫), হাফিজুর রহমান (২৪), তাহমিনা বেগম (২০), নারায়ণ দাস (৬৫), পারবতী রানী দাস (৪৫), আজমীর (২), শাহ আলম মৃধা (৫৫), মহারানী (৩৭), আনোয়ার হোসেন (৫৫), মাকসুদা বেগম (৩০), ছাউদা আক্তার লতা (১৮), আব্দুল খালেক (৭০), জবু (১৩), খাদিজা বেগম (৫৩), মো. নয়ন (২৮), সখিনা বেগম (৪৫), সাদিয়া (১১) ও মানসুরা (৭) ও বিকাশ চন্দ্র দাস।

গতকাল বেলা দেড়টার দিকে উদ্ধার করা মরদেহগুলো ট্রলার ও স্পিডবোটে করে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিমতীর কয়লাঘাট এলাকায় নিয়ে আসা হয়। সেখনে নিহতের স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করে। মরদেহ দাফন-কাফন ও পরিবহনের জন্য নিহতের স্বজনদের ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় এসকে-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়। ওইদিন রাত থেকেই উদ্ধারকাজ শুরু হয়। রাত ৩টার দিকে উদ্ধার তত্পরতা বন্ধ করে দেয়া হয়। গতকাল সকাল ৮টায় পুনরায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, নৌ-পুলিশ ও উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় উদ্ধার তত্পরতা চালায়। এছাড়া দুপুর থেকে র্যাবের একটি চৌকস দল হেলিকপ্টারযোগে উদ্ধার তত্পরতায় অংশ নেয়।

এদিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও বিআইডব্লিউটিএ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি এবং বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববিকে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর সাদেক জানান, বিআইডব্লিউটিএর  পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা) রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করে অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। নৌ চ্যানেলটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

মুন্সীগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস প্রশাসনের কাছে শীতলক্ষ্যার সরু চ্যানেলে লাইটার জাহাজ নোঙর করে রাখা বন্ধ এবং নৌ দুর্ঘটনা রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

সর্বশেষ সংবাদ