যে ছয় আমলে মন প্রফুল্ল রাখবেন

পারিবারিক ও সামাজিক নানা কারণে আমাদের মন খারাপ হয়। কারো থেকে আঘাত পাওয়া, কাউকে খুশি করতে না পারা, হতাশ হওয়া ও রাগ করাসহ মন খারাপের বিবিধ কারণ থাকে আমাদের। ইসলামের শিক্ষা হলো নেতিবাচক এ বিষয়গুলো মনে বেশিক্ষণ পুষে না রাখা। সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার মাধ্যমে এসব ভুলে প্রফুল্ল ও হাসিখুশি থাকা। আজ এমন কয়েকটি সুন্নত বা উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষা করে। আমাদের আনন্দিত ও প্রফুল্ল রাখে।

এক. হাসিমুখে কথা বলা : নানা প্রয়োজনে একে অন্যের মুখোমুখি হওয়া সামাজিক বাস্তবতায় স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে পারস্পরিক এ সাক্ষাতের অনন্য সৌন্দর্য হলো হাসিমুখে কথা বলা। যারা এ গুণের অধিকারী, তাদের সবাই পছন্দ করে। তা ছাড়া সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা নবীজির স্বভাবজাত সুন্নত। কারণ তিনি সাক্ষাতে সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। এর মাধ্যমে মনও বেশ প্রফুল্ল থাকে। আবদুল্লাহ ইবনে হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, মুচকি হাসিতে নবীজির চেয়ে অগ্রগামী কাউকে আমি দেখিনি। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ২২৭)

দুই. পারস্পরিক সালাম আদান-প্রদান : পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি ও অন্তরের প্রশান্তি লাভের অনন্য উপায় হলো বেশি পরিমাণে সালাম আদান-প্রদান। এর মাধ্যমে একে অপরের জন্য শান্তির দোয়া করা হয়। পুরুষদের মধ্যে এ গুণটি দেখা গেলেও নারীদের পরস্পর সাক্ষাতে সালাম আদান-প্রদানের বিষয়টি খুব কম লক্ষ করা যায়। অথচ নারী-পুরুষ সবাইকে উদ্দেশ করে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৪)

তিন. উপকারী কথা বলা : অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করে উপকারী কথা বলা বুদ্ধিমানের পরিচয়। এটা মানসিক প্রশান্তি লাভেরও অনন্য উপায়। আর অনর্থক কথাবার্তা ও অর্থহীন গল্পগুজব অনেক সময় মানুষকে বড় বিপদ ও অস্থিরতায় ফেলে দেয়। এ কারণে আমাদের উচিত অনর্থক কথাবার্তা পরিত্যাগ করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮)

চার. সুধারণা পোষণ করা : পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, মানসিক প্রশান্তি ও সমাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় একে অন্যের প্রতি সুধারণার বিকল্প নেই। সুধারণা সমাজে কল্যাণ বয়ে আনে, ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট রাখে। তাই আমাদের প্রত্যেকের আবশ্যক একে অন্যের প্রতি সুধারণা রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯৩)

পাঁচ. সামর্থ্য অনুযায়ী উপঢৌকন দেওয়া : সামর্থ্য অনুযায়ী উপঢৌকন দেওয়া রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। এতে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এবং অন্তরে প্রফুল্লতা সৃষ্টি হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের পারস্পরিক হৃদ্যতার পথনির্দেশ করেছেন এভাবে—‘তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া-তোহফা দাও। এতে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৯৪)

ছয়. পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো : পরিবারের সঙ্গে সময় দিলে মন প্রফুল্ল থাকে, অন্তরে প্রশান্তি আসে। তা ছাড়া পরিবারকে সময় দেওয়া, পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা রাসুল (সা.)-এর   গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুল (সা.) ঘরের মধ্যে কী কাজ করতেন? জবাবে তিনি বলেন, তিনি ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন, অর্থাৎ গৃহস্থালি কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো নামাজে চলে যেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার মানসিক অশান্তি দূর করে মনে প্রশান্তি দান করুন।

সর্বশেষ সংবাদ