রিক্সা চালকদের প্রতি দয়া নয় বরং ভাল ব্যবহার ও ন্যায্য পাওনা প্রদান করুন

হাফিজুল ইসলাম লস্কর :: মানুষ জীবিকার তাগিদে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নানারকম কষ্টার্জিত কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। মোটকথা যারা কাজ করেন তারাই কাজের লোক বা কর্মজীবি। পৃথিবীতে কোন কাজই ছোট্র নয়। ছোট আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি। আমাদের এই ছোট বড় কাজের বিভাজনের ক্ষেত্রে দায়ী আমাদের সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা।
জীবিকার তাগিদে কেউ অফিসে কেউ ব্যবসার মাধ্যমে আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। অর্থা মানুষ জীবিকার তাগিদে নানা কষ্টার্জিত কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এরকম এক কষ্টার্জিত কাজ হচ্ছে রিক্সা চালনা। রিক্সা চালক নিজে আপনার মত একজন মানুষ হয়ে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে আপনাকে পৌছে দিচ্ছে আপনার গন্তব্যস্থলে।
তিন চাকার একটা যানবাহন রিক্সা। এটা আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি যানবাহন। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই যানবাহনের চলাচল রয়েছে। যদিও কোনো বড় মহাসড়কে এই রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ। কেননা বড় মহাসড়ক বা রাস্তায় এই রিক্সা হতে পারে যানজট বা দূর্ঘটনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। তাই এগুলো এড়াতে কোনো কোনো জায়গা রিক্সা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যথায় বড় জিপ, বাস, কার, সিএনজি ইত্যাদির সাথেই রিক্সার চলাচল রয়েছে।
এই রিকসা চালান একজন চালক, এবং পেছনে সংযুন্ত অবস্থায় থাকে বসার সিট। রোদ, বৃষ্টিতে ভিজেও চালাতে থাকেন রিক্সা ,মাঝে মাঝে চোখে পড়ে ১৪/১৫  বছরের শিশুরাও রিক্সা টানছে, আবার মাঝে মাঝে দেখা যায় বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি যিনি বয়সের ভারে নিজের নিজেই চলতে পারেন না অথচ পেঠের ক্ষিধা নিবারনের জন্য রিক্সা টানছেন।
সব সাধারণ মানুষের চোখে এসব ধরা দেয় না। কারণ এই অবহেলিত সমাজের খুড়িয়ে খুড়িয়ে ও ধুকে ধুকে চলা এই শ্রেণীকে কারো কারো চোখে পড়েনা বা দেখেও অনেকে দেখতে চান না। বা অভজ্ঞার চোখে দেখেন।
কিন্তু আজ আপনি সমাজের একজন হিসাবে চিন্তা করতে হবে সমাজের কথা, রিক্সা চালক শ্রেণী যেহুতো সমাজের অংশ আর আমরাও সেই সমাজের অংশ। তাই সমাজের সদস্য হিসেবে আমাদেরও সমাজের অবহেলিত শ্রেণী রিক্সা চালকদের কথা ভাবতে হবে।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের এই চালক ভাইয়েরা কষ্ট করে রিক্সার পেডেল ঘুরিয়ে নিজেদের আহারের ব্যবস্থা করেন আর আমাদের পৌছে দেন গন্তব্যস্তরে।
কষ্ট করে যাত্রীদের টেনে নিয়ে গিয়েও মাঝে মাঝে তাদের পড়তে হয় বিভিন্ন  অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে। কিছু যাত্রীরা অকারণে ধমক,গালী এমকি ক্ষেত্র বিশেষে গায়ে হাতও তুলেন পেঠের দায়ে রিক্সার পেডেল ঘোরানু চালকদের উপর।
অনেকে যাত্রীরা ন্যায্য ভাড়া থেকেও ভাড়া কমিয়ে দেন। প্রতিবাদ করে কথা বললে রিক্সা চালকদের গায়ে হাতও উঠায়। তখন যাত্রীরা ভুলে যান রিক্সা চালকরাও আমাদের মত মানুষ, এই সমাজের একজন, রিক্সা চালক বলে তাদের ছোট করে দেখা হয়।
প্রতিনিয়তই রিক্সা চালকদের রক্ত ঝড়ছে। কখনো ঘামের সাথে আবার কখনো তথাকথিত নামধারী ভদ্র যাত্রীদের দ্বারা। তাদের এই নিরব আর্তনাদ প্রতিনিয়ত আমাদের চোখে পড়ে, যখন কোনো বৃদ্ধ রিক্সা চালককে সন্তানের সমান কারো কাছ থেকে কটুবাক্য শুনতে হয়, তখন বয়োবৃদ্ধ রিক্সা চালক ব্যক্তির কেমন লাগে জানিনা তবে নিশ্চয় ভাল  লাগেনা। তাই ভেবে আমার খুব খারাপ লাগে এবং নিজেকে তখন খুব অসহায় মনে হয় তাদের জন্য কিছু না করতে পেরে। আমরা যদি সবাই একটু ভাবি তাদের কথা, তারা কীভাবে একজন মানুষ হয়ে পেঠের দায়ে জীবিকার তাগিদে আরেক জনকে মানুষকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো বুঝি কিন্তু না বুঝার ভান করি।
আমাদের সমাজে তথা বন্ধুমহলে অনেক সময় বন্ধুরা মজা করে ৩-৪ জন এক সাথে উঠে রিক্সায়। মনের আনন্দে গান করতে করতে গন্তব্যস্থলে যায়। তখন একটি বারের জন্য চোখে রাখুন তাদের দিকে যারা আপনাদের আরামে আর নিজেদের কষ্টের মাধ্যে ফেলে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে যাত্রীদের পৌছে দেয় নিজ গন্তব্যে। হয়তো বুঝতে পারেন কিন্তু না বুঝার ভাব করেন অথবা বুঝতেই চান না। আর যদি বুঝতে না চান চোখ বন্ধ করে অন্ধের মত সমাজে চলুন। সমাজের আরো ৮-১০জন  অন্ধের মতো আপনিও চলুন, কেউ বাধা দিবে না।
আর সেই সব বিবেকবান ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি যারা এই অবহেলিত নিস্পেষিত রিকসা চালক ভাইদের জন্য ভাবেন। আপনাদের এই একটু ভাবনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। মানুষ ইচ্ছা করলেই ভলো ব্যবহার করতে পারে, ভলো কাজও করতে পারে। এই চালক ভাইদের জন্য খুব বেশি কিছু নয়, একটু ভলো ব্যবহার আর তাদের কষ্টসাধ্য এই কর্মের প্রাপ্য সম্মানীটুকু যেন সঠিকভাবে পাচ্ছে কিনা সেই দিকে একটু দৃষ্টি রাখুন।
পরিশেষে শুধু এই কথাই বলবো রিক্সা চালকদের দয়া নয় তাদের উপার্জনটুকু সঠিকভাবে তাদের প্রদান করুন এবং তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন। সকলের প্রতি এই নিবেদন রেখে আজকের মত এই লেখার এখানেই সমাপ্তি। আমার এই লেখাটি মন দিয়ে পড়ার জন্য পাঠকদের জানাই ধন্যবাদ।

সর্বশেষ সংবাদ