সুরমার তীর সিণ্ডিকেট’র দখলে……

সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেটবাসীর কর্মব্যস্ত জীবনে একটু অবসর ও বিনোদনের জন্য কর্মযজ্ঞের বাহিরে একটু শান্তির পরশ এবং হাঁটাচলা ও বেড়ানোর সুযোগ করে দিতেই নগরীর চাঁদনীঘাট এলাকায় সুরমার তীরের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছিলো।
সে সময় উচ্ছেদ করা হয় ওই এলাকার অনেক অবৈধ স্থাপনা। তবে সংস্কারকৃত এই এলাকাও এখন আর অবসর ও নিরিবিরি সময় কাটানোর জায়গা নয় বরং বিরক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে। সিলেট নগরীর চাঁদনীঘাট-সুরমার তীর এখন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ও প্রেমিক-প্রেমিকাদের দখলে। চটপটি-ফুচকার ব্যবসা বসিয়ে তারা দখল করে রেখেছেন সুরমার তীর।
আর সন্ধ্যে নামলেই জড়ো হয় সেখানে উঠতি বয়সী তরুন-তরুনীরা, তাদের ঢলাঢলি ও ভ্রম্যমান ব্যবসায়ীদের উৎপাত’র কারনে সুরমার তীরে একটু শান্তির পরশের বদলে সেখানে গেলে অশান্তিই ভাষা বাদে মনে।
ছয় দশেক আগে আলী আমজদের ঘড়ি ও সার্কিট হাউসের পার্শ্ববর্তী সুরমা নদীর পূর্ব পার সংস্কার করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এরপর থেকে অনেকেই বিকেলে নির্মল বাতাস ও বেড়ানোর জন্য ভিড় করেন সেখানে।
তবে এখন সংস্কারকৃত পুরো এলাকা দখল করে রেখেছেন ফুচকা ও চটপটি বিক্রেতারা। সারি সারি চেয়ার আর টেবিল বিছিয়ে রেখেছেন পুরো নদীর তীরে। ফলে ফুচকা বা চটপটি খাওয়ার সময়টুকু ছাড়া নদীর তীরে দাঁড়ানোরও সুযোগ নেই।
সিলেটের উপশহরের মাশহুদ আহমদ বিকেলে বেড়াতে গিয়েছিলেন চাঁদনীঘাটে সুরম নদীর তীরে। নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন ‘দাঁড়িয়ে নদী দেখার মতো কোন জায়গা নেই। নদীর দেখতে এলে ফুচকা বা চটপটি খেতে হবে। পুরো নদীর তীর এখন তাদের দখলে। সিলেটে আর কোন জায়গাও নেই যে বিকালবেলা কিছু সময় কাটাবো। তাই এখানে আসি। কিন্তু এখানে এসে নদী দেখার বদলে ফুচকাওয়ালাদের নৈরাজ্য দেখতে হয়।’
পঞ্চাশ বছর ছুই ছুই খলিল মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্বিন ব্রিজের নিচে নদীর পারে কিছু সময় কাটানোর জন্য। খলিল মিয়া বলেন ‘এখানে আসলে দাঁড়ানো যায় না। চটপটি বা ফুচকা খেয় সাথে সাথে আবার উঠে যেতে হয়। তা না হলে বিক্রেতারা অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। ফলে এখানে এসে চটপটি খাওয়া ছাড়া আর কিছু করার সুযোগ নেই। পুরো নদীর তীরে তারা চেয়ার বিছিয়ে রেখেছে। যেন নদীর তীর ফুচকাওয়ালারা কিনে বসেছে।
গত কয়েকদিন ধরে ক্বীনব্রীজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পূর্ব পাশের চাঁদনীঘাট এলাকার সার্কিট হাউসের সামনের অংশে নদীর পারের পুরোটা জায়গা জুড়ে ফুচকা ও চটপটি বিক্রেতারা সারি সারি চেয়ার টেবিল বসিয়ে দখল কর রেখেছেন। চাঁদনিঘাট থেকে শুরু করে কালিঘাট এলাকার গণশৌচাগারের কাছাকাছি পর্যন্ত পুরো জায়গাই চেয়ার আর টেবিল দিয়ে দখল করে রেখেছেন তারা। কোথাও মানুষ দাঁড়ানোর জায়গা ফাঁকা নেই।
নদীর তীরে ঘুরতে আসা সকল মানুষ কোথাও দাড়াঁনোর জায়গা না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে বসছেন ফুচকা বিক্রেতাদের চেয়ারে। খাবার শেষ করে বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট পর টাকা পরিশোধ করে আবার উঠে যেতে হচ্ছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় নদীর তীর দখলে এই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের নেপথ্যে রয়েছে সিলেট হকার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রকিব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সেতুর নিচ থেকে শুরু করে সার্কিট হাউস কালিঘাটের পার্শ্ববর্তী গণশৌচাগারের পাশ পযর্ন্ত মোট ৭টি চটপটির দোকান ও দুটি চায়ের দোকান রয়েছে।
এ ৯ টি দোকানের ৪টিরমালিকই হকার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রকিব, ১ টির মালিক কোতোয়ালি থানার বাবুর্চি আহাদ এবং বাকি ৪ টি দোকান সাধারণ বিক্রেতাদের।
তবে হকার্স ব্যবসায়ীদের কাছে ‘ভাই’ হিসেবে পরিচিত আব্দুর রকিবের নিজের ৪ টি ও কোতোয়ালি থানার বাবুর্চি আহাদের একটি দোকান চলে বেতনভোগী কর্মচারী দিয়ে। আব্দুর রকিব ও আহাদ এর দোকান থাকায় এখানকার অন্য সাধারণ ৪ দোকানের বিক্রেতারাও ভাড়া বাবদ রকিবকে টাকা দেন বলে জান যায়।
তবে হকার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রকিব বলেন, এখানে একটি দোকান আমার, আরো তিনটি দোকানের পার্টনারশিপ আছে। তবে এতে নদীর তীর দখল হচ্ছে না বলে জানান রকিব।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মুসা (মিডিয়া) বলেন, নদীর পারে মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করবে এটা মানুষের অধিকার। কিন্তু মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নদীর পার দখল করা এটা অবশ্যই অন্যায়। বিষয়টি আমি কোতোয়ালি থানায় অবগত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এব্যাপারে সিলেট সিসিকের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এখানে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নদীর তীর দখল করে রাখা হয়েছে, যা আমার নজরে এসেছে। দখলকারী যতই প্রভাবশালী হোকনা কেন আমি তাদের উচ্ছেদ করব।

সর্বশেষ সংবাদ