ফলন বিপর্যয়ের আশংকা রাণীনগরে রোপা-আমন ক্ষেতে রোগ-বালাইয়ের হানা

এ বাশার (চঞ্চল) রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় এবারের বন্যায় রোপা-আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হলেও দ্রুত গতিতে পানি নেমে যাওয়ায় রোপণকৃত প্রায় অর্ধেক ধান রক্ষা পাই। স্থানীয় চাষিরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জমির ধান গুলোতে নিবির পরিচর্চা করে পূণাঙ্গ বড় করার পর বৈরি আবহাওয়া ও স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্তা ব্যক্তিদের দ্বায়িত্বহীনতার কারণে চলতি মৌসুমে উঠতি রোপা-আমন ধানের ক্ষেতে পোঁকা-মাকঁড় আর ইঁদুরের হানাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। কৃষি অফিসের লোকজন মাঠ পর্যায়ে চাষিদেরকে বিপদকালীন পরামর্শ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে কৃষকরা বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধির খপ্পরে পরে তাদের পরামর্শে নানান নামের রোগ-বালাই নাশক ঔষুধ প্রয়োগ করে সুফল না পাওয়ায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরম বিপাকে পরছে কৃষক। চলতি মৌসুমে রোপা-আমন ধানের ফলনে বিপর্যয়ের আশংকা করছে উপজেলার চাষিরা।
রাণীনগর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধান চাষ করা হয়েছিল। মধ্য আগষ্টের বন্যায় নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে নওগাঁ-রাণীনগর-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের রাণীনগর উপজেলার অংশে বেতগাড়ী বাজার থেকে প্রেমতলি পর্যন্ত চার জায়গাই ভেঙ্গে যাওয়ায় লোকালয়ে পানি প্রবেশ করলে ৮টি ইউনিয়নের রোপা-আমন ধানের প্রায় ৮ হাজার ৬ শ’ ৫০ হেক্টর জমির সমদয় ধান পোঁচে নষ্ট হয়ে যায়। পানি কমার সাথে সাথে স্থানীয় কৃষকরা ধানের জমি বাঁচাতে ঝুকিপূর্ণ বিভিন্ন বাঁধে বাঁধে বালির বস্তা দিয়ে শেষ রক্ষা হওয়ায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ৭ শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধান রয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে বৈরি আবহাওয়া, ইঁদুর আর পোঁকা-মাকঁড়ের আক্রমন, ব্যাকটেরিয়া ব্লাস্ট রোগে পাতা মরে যাওয়ার কারণে মাঠের জমিতে ধান গাছের রং বিভিন্ন রকম হয়ে ডেবে যাচ্ছে। নিমিসে তা আবার ছড়িয়ে পড়ে দিনদিন ব্যাপক আকার ধারণ করছে। উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আইপিএম (বালাই সমন্বিত শষ্য ব্যবস্থাপনা) ক্লাবের মাধ্যমে আলোক ফাঁদে এবং আমন ক্ষেতে কুঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে পোকা-মাঁকড় নিধনে কৃষকদের উৎসাহিত করার দাবি করলেও মাঠ পর্যায়ে দৃশ্যমান কোন ফলাফল চোখে পড়ে না।
কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল গ্রামের চাষি জহুরুল ইসলাম জানান, আমার বিলবাড়ি মাঠে পৌনে দুই বিঘা জমির রোপা-আমন ধানে ব্যাপক হারে রোগ-বালাই হানা দিয়েছে, তার সাথে যোগ হয়েছে ইঁদুরের উপদ্রুপ। কৃষি অফিসের লোকজনকে কাছে না পেয়ে বিভিন্ন লোকের পরামর্শে নানা ধরণের কীটনাশক প্রয়োগ করে কোন ফল পাচ্ছি না। জমির মধ্য অংশে ধীরে ধীরে ধান নষ্ট হয়ে ডেবে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত কৃষি অফিসের কোন কর্তা ব্যক্তি ধানের এই রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কোন পরামর্শ বা খোঁজ-খবর নেইনি। কিছুটা বাধ্য হয়ে ফলন বিপর্যয়ের শংকা নিয়েই আছি।
গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর উত্তরপাড়ার বর্গা চাষি খোকা হোসেন জানান, আমি এক বিঘা জমিতে রোপা ধান লাগিয়েছি। বর্ষায় কোন ক্ষতি না হলেও ধান বেড়ে উঠার সাথে সাথে জমির মধ্যাংশের ধান গুলো ধীরে ধীরে লাল বর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না বরং ক্ষতির পরিমাণ দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। কৃষি অফিসের কোন মানুষ আমার জমির অবস্থা দেখে প্রতিকারের কোন পরামর্শ দেয়নি। আমার মত অনেক কৃষকেরই এই অবস্থা।
উপজেলা কৃষি আফিসের কাশিমপুর ইউপি’র এনায়েতপুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি অফিসার আহসান হাবিব রতন জানান, রোপা-আমন ধানের ক্ষেতে আমার এরিয়ার বেশ কয়েক জায়গায় ব্যাকটেরিয়া ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের পাতা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। আমি চাষিদের কে প্রতি বিঘায় ৫ কেজি করে এমওপি সহ ভাল মানের কীটনাশক প্রযোগের পরামর্শ দিচ্ছি।

সর্বশেষ সংবাদ