দীর্ঘ ৬৭ বছর উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী গ্রামে

সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃছিটমহল না হলেও ছিট মহলের মতই ভারতের সাথে সীমানা জটিলতায় দীর্ঘ ৬৭ বছর উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী গ্রামের মানুষ। বাংলাদেশী ভুখন্ড হলেও ভারত সরকারের দাবীর কারনে ছিটবাসীদের মত জীবন কাটাতে হয়েছে এ গ্রামের ৬শতাধিক মানুষকে। অবশেষে ছিটমহল বিনিময়ের সময় সীমানা পুর্ননির্দ্ধারন হওয়ায় বাংলাদেশ তার ভূখন্ড ফিরে পেলেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি সীমান্ত ঘেঁষা এ গ্রামটিতে।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম বড়াইবাড়ী। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর থেকেই এই গ্রামের ২শ ২৬ একর জমি ভারত সরকার তাদের অংশ বলে দাবী করে আসছিল। এ কারনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ প্রায় সময় এ গ্রামে প্রবেশ করে অত্যাচার নিপীড়ন করে গ্রামবাসীদের গ্রাম ছাড়া করে গ্রামটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে আসছিল। এমনকি গ্রামটি দখলে নিতে ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল রাতের আধারে বিএসএফ বড়াইবাড়ী গ্রামে অতর্কিতভাবে প্রবেশ করে নারকীয় তান্ডব চালায়। তৎকালীন বিডিআর ও গ্রামবাসীর মিলিত প্রতিরোধের মুখে পিছু হটে বিএসএফ। পরে ২০১৫ সালের ১ আগষ্ট ভারত-বাংলাদেশ ছিট বিনিময়ের সময় বড়াইবাড়ী গ্রামটি বাংলাদেশের অংশ বলে স্বীকৃতি দেয় ভারত সরকার। তারপর থেকে এ গ্রামের মানুষজন শান্তিতে বসবাস করলেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি এখানকার মানুষের জীবন যাত্রায়।
তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টায় ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে বড়াইবাড়ীসহ সীমান্তবর্তী পাঁচ গ্রামের ৬শ’ ৪৯ জন মানুষের ভাগ্যন্নয়নে শুরু হয়েছে। এরমধ্যে দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১.৭৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার কাজ চলছে। চলছে দুই কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ধরণী নদীর উপর ৬৬ মিটার ব্রীজ নির্মাণের কাজ।
সম্প্রতি বড়াইবাড়ি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্রীজ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে সংসদ সদস্য মো: রুহুল আমিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামালপুরস্থ ৩৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্নেল মোহাম্মাদ আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ, রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: শফিউল আলম, রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায়, রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) মোঃ সিরাজুল ইসলাম, পল্লী বিদ্যুৎ এর ডিজিএম মোঃ আক্তারুজ্জামান, রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম, রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম, রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম শালু প্রমুখ।
বড়াইবাড়ি গ্রামের আমেনা বেগম জানান, আগে এই গ্রামে বিএসএফ’র অত্যাচারে শান্তিতে থাকতে পারতাম না। এখন বাংলাদেশ হওয়ার পর শান্তিতে বসবাস করছি।
একই গ্রামের শাহেব আলী জানান, এখানে কোন রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক কিছুই নাই। বর্তমানে বিদ্যুতের সংযোগ পেয়ে আমরা খুবই খুশি। ব্রীজের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা চাই এখানে স্কুল ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হোক।
এই প্রথম উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় এখানকার মানুষ স্বপ্ন দেখছেন এগিয়ে যাওয়ার। একসময় বিএসএফ’র ভয়ে প্রায় সময় বাড়ী ঘর ছেড়ে থাকতে হলেও এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন এই গ্রামের মানুষজন। তবে বাংলাদেশী ভুখন্ডের স্বীকৃতি পেলেও জমির আইনি জটিলতায় এখনও মেলেনি তাদের মালিকানার কাগজ।
রৌমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু জানান, বড়াইবাড়ি গ্রামটি ভারতের সীমান্ত ঘেষা হওয়ায় এবং ভুমি নিয়ে জটিলতা থাকায় এই গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সম্প্রতি এ গ্রামে বিদ্যুতায়ন ও ধরনী নদীর উপর ব্রীজের কাজ শুরু হলেও এখনও গড়ে ওঠেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভার্ট। আমার দাবী উন্নয়ন বঞ্চিত এ গ্রামটি উন্নয়নে নজর দেবে সরকার।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ রুহুল আমিন জানান, ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী এলাকার ২২৬ একর জমি বাংলাদেশ পাওয়ার মধ্যে দিয়ে এখানকার মানুষের বিজয় হয়েছে। দীর্ঘদিনের বঞ্চনার ইতিহাসের পরিসমাপ্তি পর শুরু হয়েছে ভাগ্যেন্নোয়ন। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলার মধ্যে দিয়ে ঘুচে গেছে ৬৭ বছরের বিড়ম্বিত জীবনের অবসান। অবহেলিত এই গ্রামের মানুষের উন্নয়নে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আশা করছেন স্থানীয় এ সংসদ সদস্য।

দীর্ঘ দিনের মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এ গ্রামের মানুষকে দেশের উন্নয়নের মুল ¯্রােতের সাথে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের দ্রুত পদক্ষেপ নেবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা এখানকার মানুষের।

 

সর্বশেষ সংবাদ