ঝিনাইদহে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোষ্টে যানবাহনের চাকায় পিষ্ট ড্রাইভার

স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ শহরের যুব উন্নয়ন অফিসের পাশে বৃহস্পতিবার বিকালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবু (২১) নামে এক ট্রাক ড্রাইভার নিহত হয়েছেন। তিনি সাতক্ষিরার কৈখালী গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। ঝিনাইদহ সদর থানার এস আই সুজন জানান, পাশে গাড়ি থামিয়ে নাস্তা সেরে রাস্তা পার হওয়ার সময় হানিফ পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করে।

তবে প্রত্যাক্ষদর্শী জানান, ট্রাফিক পুলিশ সেখানে চেকপোষ্ট বসিয়ে কাগজপত্র যাচাই করছিলো। বাবু গাড়ির কাগজপত্র দেখিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে আহত হন। পরে তাকে পুলিশ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ সময় টিএসআই প্রদিপ কুমার, কনস্টেবল শুকুমার ও সারোয়ার উপস্থিত ছিলেন। তবে ঝিনাইদহ ট্রাফিক বিভাগের টিআই কৃষ্ণ জানান, ঘটনার সময় সেখানে কোন ট্রাফিক পুলিশ ছিল না।

গাড়ির হেলপার লাবসা গ্রামের আইয়ুব আলী জানান, আমি এখন থানায় আছি। আমি কিছুই বলতে পারবো না। হেলপারের এই রহস্যময় নীরবতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি অনুসন্ধান করেত বৃহস্পতিবার রাতে লাউদিয়া যুব উন্নয়ন অফিসের পাশের দোকানদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় চেকপোষ্টে থাকা পুলিশরাই ড্রাইভার বাবুকে নিয়ে যান। টিএসআই প্রদিপ কুমার জানান, আমি আওয়ামীলীগ নেতা হানিফ সাহেবের নিরাপত্তার ডিউটিতে বাইপাসে ছিলাম। তাই এ সমপর্কে কিছুই জানি না।

বৃহস্পতিবার রাতে ঝিনাইদহ সদর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, হেলপার নজরবন্দি। সেন্ট্রি দুই কনস্টেবল জানালেন, হেলপারকে কড়া নজরে রাখা হয়েছে। তার সাথে কথাও বলা যাবে না। স্যারেরা বলেছে সেই আসামী। এ সময় দুই কনস্টেবল হাত উচিয়ে সাংবাদিকদের বাইরে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ করে। এখন প্রশ্ন উঠেছে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে ড্রাইভার। কিন্তু হেলপার আইয়ুবকে কেন কড়া নজরে রাখা হবে ? তাহলে কি গাড়ির কাগজ চেক করতে গিয়ে ড্রাইভার বাবু সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে ? এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেও তার কোন উত্তর মেলেনি।

এদিকে যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ের নামে ঝিনাইদহের বিভিন্ন সড়কে চরম অর্থ বানিজ্য, গাড়ির মালিকদের হয়রানী ও নাজেহাল করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। গাড়ির কাগজপত্র থাকার পরও অনেক মালিকের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের নজীর রয়েছে। কোটচাঁদপুর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের আসলাম অভিযোগ করেন, তার গাড়ির কাগজপত্র থাকার পরও ১২’ টাকা জরিমানা করে। এর আগে তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবী করা হয়।

অনেক মটরসাইকেল মালিক অভিযোগ করেন, তাদেরকে কোন সময় দেওয়া হচ্ছে না। অথচ হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে গাড়ির মালিকরা ১৫ দিন পর্যন্ত সময় পাবেন। অভিযোগ রয়েছে নসিমন করিমন চালকরা মালামাল ঝিনাইদহ শহরে নামিয়ে খালি গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। অথচ মালামাল নিয়ে আসার সময় তাদের আটক বা সতর্ক করা হচ্ছে না।

এ ভাবে জরিমানা আদায়ের ফলে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শোনা যাচ্ছে একজন টিআই ও একজন সার্জেন্টকে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। সেই টাকা তুলতে গিয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কতিপয় ট্রাফিক পুলিশ, এটিএসআই ও টিএসআইরা। তবে এ সব অভিযোগ খন্ডন করে টিআই কৃষ্ণ জানান, আইন মেনেই চেক পোষ্টে গাড়ির কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এখানে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি করা হচ্ছে না।

সর্বশেষ সংবাদ