কালাইয়ে স্বপ্নের বোরো ধান কাটা শুরু

কালাই(জয়পুরহাট)প্রতিনিধি: উত্তর বঙ্গের শস্য ভান্ডার খ্যাত জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কৃষকরা এখন আগাম জাতের বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত। বিঘা প্রতি ফলন গত বারের তুলনায় কিছুটা কম। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় সে ঘাটতি পুষে নিতে পারছেন কৃষকরা।
কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার আহম্মেদাবাদ, মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট ও জিন্দারপুর ইউনিয়নের  বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। হালকা হাওয়ায় দুলে উঠছে ধানের শীষ। সেই সাথে আনন্দে নেচে উঠছে কৃষাণ-কৃষাণীর মন। ধানকে ঘিরে নানা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জাল বুনে চলেছেন তারা। কেউ কিনবেন নতুন জামা-কাপড়; কেউ কেউ তৈরী করবেন রকমারি পিঠা-পুলি আর সুস্বাদু পায়েশ। কেউ আবার ধান বিক্রি করে মহাজনের ধার-দেনা আর ব্যাংক ঋণ শোধ করতে চান। অনেকে কিনতে চান নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানান, চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ২শ’ ৫৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৬শ’ ৮০ হেক্টরে। ফলে উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪শ’ ২৭ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ আরও জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে কাল বৈশাখী এখন পর্যন্ত এ উপজেলার কৃষিক্ষেত্রে খুব একটা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারেনি। বাতাসে কিছু কিছু ক্ষেতের  ধান গাছেন পাতা ফেটে যায়। সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়া জনিত পাতা মড়া রোগও দেখা দেয়। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও তৎপরতায় কৃষকরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
পৌরসভার থুপসাড়া মহল্লার কৃষক আব্দুল মোমেন ও উপজেলার ইমামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর জোব্বার জানান, ঝড়ের পরে তাদের হাইব্রিড ধানের ক্ষেতে পাতা মড়া রোগ দেখা দিলে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ওষুধ স্প্রে করায় সুফল পেয়েছে। রোগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
নওপাড়ার কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন,  গত বারের চেয়ে এবার ধানের ফলন কিছুটা কম। আগাম জাতের ব্রি-ধান-২৮ ও কাটারি ভোগ ধান কেটেছি। এবার বিঘা প্রতি গড় ফলন পেয়েছি ২২ মণ। গত বারে বিঘা প্রতি গড় ফলন পেয়েছিলাম ২৬ মন। তবে ধানের দাম বেশি থাকায় সে ঘাটতি পুষে নেয়া যাচ্ছে।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মোজাফ্ফর রহমান জানান, ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তারা কৃষকদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। এ জন্য উঠান বৈঠক, মাঠ দিবস, মাঠ স্কুলসহ ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে ফসলের যে কোন সমস্যায় তারা সুপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রেজাউল করিম জানান, শস্যের ভাল ফলনের জন্য কালাই কৃষি বিভাগ কৃষকদের অব্যাহতভাবে কিছু কার্যকরি দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এ জন্য তারা কৃষকদের সঠিক বয়সের চারা রোপন, জৈব ও সুষম সার ব্যবহার, লাইনে চারা রোপন,  লীফ কালার চার্ট, পারচিং ও আলোক ফাঁদ ব্যবহারসহ  গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার অধিকাংশ কৃষকই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী শস্য উৎপাদন করছেন। তাই তিনি আশা করেন, বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হবে।

সর্বশেষ সংবাদ