ঘটনাপ্রবাহে পথ হারায় থ্রিলার

একটা সফল ছবি রিমেক করার পিছনে যুক্তি থাকে। কিন্তু যে ছবিটি সে ভাবে শোরগোল ফেলেনি, সেটি রিমেকের ব্যাখ্যা ঠিক কী? পরিণীতি চোপড়া অভিনীত ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’ ছবিটি দেখতে দেখতে এই প্রশ্নটাই মাথায় আসে। পলা হকিন্সের লেখা একই নামের বইটি জনপ্রিয়। কিন্তু তাকে সিনেম্যাটিক রূপ দিতে গিয়ে প্রথমে পথভ্রষ্ট হয়েছেন টেট টেলার। দ্বিতীয় বার ঋভু দাশগুপ্ত।

ট্রেন আর মেয়েটির সে অর্থে কোনও সম্পর্ক নেই। বরং প্লটের সঙ্গে রেল লাইনের সম্পর্ক আছে। একটি কাহিনির সমান্তরালে আর একটি চলে। কখনও তারা মিলে যায়, আবার কখনও আর একটা শাখা বেরিয়ে আসে। লন্ডনে থাকে সফল আইনজীবী মীরা (পরিণীতি) এবং তার স্বামী শেখর (অবিনাশ তিওয়ারি)। একটি মামলা হাতে নেওয়াকে কেন্দ্র করে বদলে যায় তার জীবন। সন্তান হারাতে হয় অন্তঃসত্ত্বা মীরাকে। ভেঙে যায় বিয়েও। ক্রমশ সে অ্যালকোহলিক হয়ে পড়ে এবং অ্যামনেশিয়ায় ভুগতে থাকে। বিদেশে এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত রোগীকে রিহ্যাবে দেওয়া হয়। এখানে শুধুই মনোবিদের দ্বারস্থ হয় মীরা। এর পাশাপাশি চলতে থাকে নুসরতের (অদিতি রাও হায়দরি) প্লট। ট্রেনে করে যাওয়ার সময়ে রোজ নুসরতকে দেখতে পায় মীরা। সেই দেখায় এবং দুটো প্লটের মিলে যাওয়ার পিছনে বেশ কিছু কাকতালীয় ঘটনা রয়েছে। যে ভাবে গোটা জিনিসটা জুড়েছেন পরিচালক, তাতে থ্রিলারের মুচমুচে ব্যাপারটাই মিইয়ে গিয়েছে। টুইস্টগুলোও ধাক্কা দেয় না। ইংরেজি ছবির ত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার অবকাশ ছিল এখানে। উল্টে আরও ত্রুটিপূর্ণ হয়ে উঠল ঋভুর ছবিটি। আর নির্মাতারা বোধহয় ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’ নামটার বাইরে আর কিছু নিয়ে মাথা ঘামাননি।

হলিউডের ছবিটি উতরে গিয়েছিল এমিলি ব্লান্টের জন্য। কিন্তু এখানে পরিণীতির চরিত্রটাই নিজের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারল না ছবিজুড়ে। এর দায় ছবির লেখক ছাড়া আর কারও নয়। এলোমেলো চুল আর ধেবড়ে যাওয়া কাজল দিয়ে চরিত্র নির্মাণ করা যায় না। পরিণীতির চরিত্রের দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে দর্শক একাত্ম হওয়ার সুযোগই পেলেন না। অদিতি, কীর্তি কুলহারি বা টোটা রায়চৌধুরীর চরিত্র নিয়েও আলাদা করে কিছু বলার নেই।

করোনা-পর্ব না এলে ছবিটি সিনেমা হলে মুক্তি পেত। কিন্তু সফল হত কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। নির্মাতাদের এ বার বুঝতে হবে, গত এক বছরে ওটিটিতে দেশ-বিদেশের অজস্র সিনেমা-সিরিজ় দেখে ফেলা দর্শককে এখন যা খুশি খাইয়ে দেওয়া যাবে না।

সর্বশেষ সংবাদ