বুড়িমারীতে দুই শ্রমিকদের অসন্তোষে স্থলবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত 

জেলা প্রতিনিধি, লালমনিরহাট-লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দরে লোড-আনলোড/পণ্য বোঝাই-খালাসে নিয়োজিত শ্রমিক সংগঠনের সাইনবোর্ড ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনায় দুই শ্রমিকদের ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও লোড-আনলোড থেকে বিরত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বন্দরটির স্বাভাবিক কার্যক্রম। গতকাল সন্ধায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও রোববার (২৮ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লোড-আনলোড বন্ধ করে প্রতিবাদ জানায়।
শ্রমিকদের দুইটি সংগঠনের সাইনবোর্ড টানাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
এস্থলবন্দরের সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের ঘটনায় এ পর্যন্ত চার দফা ধর্মঘট ও অবরোধের ডাক দেন সাধারণ শ্রমিকেরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, এ স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন গঠন করা হয়। ২৪ জন সর্দার এ সংগঠনটি পরিচালনা করেন। গত কয়েকমাস হতে এ সংগঠনের সর্দারদের নামে সাধারণ শ্রমিকরা অর্থ আত্মসাৎ, সংগঠনের নির্বাচন না দিয়ে নিয়ন্ত্রণ, ন্যায্য মজুরী না দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। এ সকল ঘটনায় শ্রমিকরা গত ৪ ফেব্রুয়ারি নায্য মজুরী ও শ্রমিকদের টাকার হিসাবের দাবিতে ধর্মঘট করে। মার্চ মাসে বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সমিতি নামে একটি সংগঠন গঠন করে। এতে সর্দাররা ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ শ্রমিকদের শ্রমিক পরিচয়পত্র কেড়ে নেয় ও হুমকি দেয়। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে গত ২১ ও ২২ মার্চ ধর্মঘট করে সাধারণ শ্রমিকরা। পরবর্তীতে সাধারণ শ্রমিকদের অগোচরে গোপনে ওই সর্দাররা তাঁদের নিকট আত্মীয়দের দিয়ে গঠিত বুড়িমারী স্থলবন্দর লোড-আনলোড লেবার ইউনিয়ন, বুড়িমারী স্থলবন্দর ও স্টেশন কুলি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বুড়িমারী শ্রমিক ইউনিয়ন নামে সংগঠনের সাইনবোর্ড স্থলবন্দরের বিভিন্ন স্থানে টানিয়ে দেন ও প্রকাশ করেন। এতে সাধারণ শ্রমিকেরা গত ১০ মে বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী স্থলবন্দর শাখার অনুমোদিত কমিটির একটি সাইনবোর্ড ২৭ মে সকালে স্থলবন্দরের সিরিয়াল কার্যালয়ের পাশে টানান। একইদিন টানানো বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের একটি সাইনবোর্ড পাশাপাশি স্থানে টানানো হয়। বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী শাখার সাইনবোর্ডটি ভেঙ্গে ফেলে দূর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে ও সড়ক অবরোধ করে। এতে দূর পাল্লার নৈশ কোচ ও পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পরে। রাত ৮ টায় পাটগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মুত্তালিব সরকার অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বললে অবরোধ তুলে নেয় শ্রমিকরা। রোববার আবারও সাইনবোর্ড টানানোর দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। বেলা ১২ টায় একই স্থানে সাইনবোর্ড টানানোর পর কাজে ফিরে যায় শ্রমিকেরা।
বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজোয়ান হোসেন রাজু বলেন, ‘সর্দারদের ইন্ধনে দুস্কৃতিকারীরা আমাদের সংগঠনের সাইনবোর্ড ভেঙ্গেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ছফর উদ্দিন বলেন, ‘না আমরা কোনো ইন্ধন দেইনি। উনাদের দুই সংগঠনের মধ্যে কে ভেঙ্গেছে জানি না।’
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদ বলেন, ‘এভাবে বার বার ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ করায় বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকার রাজস্ব  হারাচ্ছে। তাঁদের যে সমস্যা এটা তো সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। কিছু ক‚চক্রি মহল লেবারদেরকে ক‚বুদ্ধি দিয়ে লেলিয়ে দিচ্ছে। এর আগে ইউএনও, ওসি ও প্রশাসনসহ লেবারদেরকে নিয়ে বসে কথা বলা হয়েছে কথায় কথায় অবরোধ বা ধর্মঘট না করতে।

সর্বশেষ সংবাদ