চিরনিদ্রায় গ্রামীন জনপদের হেজাক বাতি

কারিমুল হাসান, ধুনট (বগুড়া):-আবহমান গ্রামীন জনপদে আজ চিরনিদ্রায় যেতে বসেছে এক সময়কার বহুল ব্যবহৃত হেজাক বাতি। এই বাতি মুলত সিলবার বা পিতল দিয়ে তৈরী করা হয়ে থাকে। যার ওজন দুই থেকে আড়াই কেজির মতো হয়। এই বাতি জ্বালাতে কেরোসিন তেল অথবা প্যারাফিন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাতির নিচের দিকে হেরিকেনের মতই তেল ধারণ করার ট্যাংকার রয়েছে। এ ছাড়াও হেজাকের ওপরের দিকে আছে বার্নার এবং মধ্যদেশে মেন্টেল হোল্ডার চেম্বার রয়েছে। যেখানে সুতোর তৈরী জালের মত দেখতে মেন্টাল লাগিয়ে ট্যাংকের তেলে হাওয়া দিয়ে গ্যাস প্রক্রিয়ায় আলো জ্বালানো হয়। মেন্টাল যেন বাতাসে পড়ে না যায় সেজন্য গোলাকার কাঁচের বার্নার লাগানো হয়। তেলের ট্যাংকার ভরা থাকে তাহলে একটানা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বাতি জ্বলে। তবে মাঝে মাঝে বায়ুর চাপ দিয়ে আলোর বিচ্ছরণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়। বলা হয়ে থাকে একটি ত্রুটিমুক্ত হেজাক ৩০০ ওয়াটের বৈদ্যুতিক বাতির সমপরিমাণ আলো দিতে সক্ষম হয়। এ হেজাক বাতির উদ্ভাবন অনেক আগে হলেও, মুলত ১৯১৬ সাল থেকে এই বাতির ব্যবহার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে।

আবহমান গ্রাম বাংলায় এক সময় হেজাক বাতির ব্যাপক চাহিদা ছিল। বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, যাত্রা, সার্কাস, পালাগান, হাট-বাজার ও মেলা গুলোতে এই বাতির ব্যবহার ছিলো সর্বাধিক। এছাড়াও উৎসাহি মাছ শিকারীদের কাছেও হেজাক খুব পছন্দনীয়। সাধারনত বাড়িতে হেরিকেন ব্যবহৃত হলেও, রাতে মাছ শিকারের প্রস্তুতি হিসেবে গ্রামের উঠনে বসে যেত হেজার জ্বালানোর ধুম। গ্রাম বাংলায় বিদ্যুতের প্রসার ঘটার পর এই বাতির এখন নেই কোন ব্যবহার। এক সময়কার জনপ্রিয় আলোকবাতি হলেও, বর্তমান প্রজম্মের অনেকেই এই বাতি দেখা তো দুরের কথা, নামটাও শোনেনি। গ্রামীন ঐতিহ্যের রাজকীয় হেজাক বাতি হয়তো দেখা যেতে পারে কোন জাদুঘরে। দেশীও ভাষায় কেরোসিন বা প্যারাফিন প্রেসার লন্ঠন বলা হলেও, আন্তর্জাতিকভাবে পেট্রোম্যাক্স ল্যাম্প নামে ব্যাপক পরিচিতি।

গ্রাম বাংলার হাট বাজারে রেডিও মেকানিক্সের মতই হেজাক মেকানিক্সরাও ষ্টল বসিয়ে মেরামতের কাজ করতো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার চিরাচরিত এই শিল্প। ঘটেছে প্রযুক্তির উন্নতি। হেরিকেন বা হেজাকের বিকল্প হিসেবে মানুষ এখন আইপিএস, জেনারেটর, চার্জার বাতি ব্যবহার করে।

সর্বশেষ সংবাদ