দেশখ্যাত দিনাজপুরের লিচুর বাম্পার ফলনের পর প্রতিকুল আবহাওয়ায় স্বাদ ও দামে ধ্বস

দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥ অনুকুল আবহাওয়ায় দেশখ্যাত দিনাজপুরে লিচুর ভালো ফলন হলেও পাকার মুহুর্তে লাগাতার ঝড়-বৃষ্টি পরবর্তীতে প্রচন্ড তাপদাহে লিচুর স্বাদ ও দামে ধ্বস নেমেছে। ঝরে পড়া রোধ ও পোকা থেকে রক্ষা পেতে লিচুর পরিপুর্ন আকার ও রং আসার আগেই এবার লিচুর বেচা-কেনা শেষ হতে চলেছে।
এই অবস্থায় বাজারের এবার সুস্বাদু মিষ্টি লিচুর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ক্রেতারা। একই কারনে লিচুর বাগান যারা আগাম কিনেছে, তারা এবার লোকসানের মুখে পড়েছে। দনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, গত ২০০৯ সালে দিনাজপুরে লিচু চাষের জমির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫০০ হেক্টর। ২০১০ সালে তা এসে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৮০ হেক্টরে, ২০১১ সালে ১ হাজার ৯৫৬ হেক্টর এবং ২০১২ সালে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর।এর পর থেকে লিচু চাষ এতটাই বেড়ে যায় যে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তালিকায় ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে লিচু হচ্ছে।দিনাজপুর সদরের মাশিমপুর এলাকার লিচু বাগান মালিক মোঃ ফজিবর রহমান জানান, এবার লিচুর ফলন ভালো হলেও পাকার মুহুর্তে প্রতিকুল আবহাওয়ার কারনে পরিপুর্ন আকার ও রং আসার আগেই ঝরে পড়া ও পোকা থেকে রক্ষা পেতে কম দামে লিচু বিক্রি করতে হয়েছে। বোম্বাই ও মাদ্রাজি জাতের লিচু এবার প্রথম পর্যায়ে প্রতি এক’শ লিচু দুই’শ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৬০ টাকায় নেমে এসেছে। অথচ এই লিচু গত বছরে বিক্রি করেছেন দেড়’শ থেকে দুই’শ টাকায়। আগাম মুল্যে লিচুর বাগান ক্রেতা বীরগঞ্জ উপজেলার শীতলাই গ্রামের মোঃ লিয়ন জানান, বিগত বছরের বাজার দর অনুপাতেই বাগান কিনেছি ৬০হাজার টাকায়। বাগানের পরিচর্যা এবং শ্রমিকদের বেতন বাবদ আরও খরচ হয়েছে ৩৫হাজার টাকা। ফলনও হয়েছে প্রচুর। কিন্তু প্রতিকুল আবহাওয়ার কারনে গাছের লিচু আগেই কম মুল্যে লিচু বিক্রি করতে হয়েছে। বাগান থেকে মাত্র মোট ৪২হাজার ১শত টাকার লিচু বিক্রয় করেছি।শহরের কালিতলা ফল বাজারের লিচু ব্যবসায়ীরা মোঃ আতাউর রহমান জানান, লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রতিকুল আবহাওয়ায় বাজারে একসাথে প্রচুর পরিমানে লিচু আমাদানির কারনে দামে ধ্বস নেমেছে। বেদনা ও চাইনা থ্রি জাতের প্রতি এক’শ লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে ৪ থেকে ৫’শ টাকায়। অথচ এই লিচু গত বছরে বিক্রি হয়েছে ৮/৯’শ টাকায়। আর এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজার লিচু শুন্য হয়ে যাবে বলে জানালেন এই লিচু ব্যবসায়ী। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল হান্নান জানান, চলতি বছরে দিনাজপুর জেলায় ৪ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু লিচু পাকার আগ মুহুর্তে দিনাজপুরে কয়েকদিন লাগাতার ঝড়-বৃষ্টি এবং পরবর্তীতে প্রচন্ড তাপদাহে লিচুর উৎপাদন কিছুটা ক্ষতি করেছে।

সর্বশেষ সংবাদ