মাতৃভাষার বিকাশ ও আমাদের মানসিকতা

এ,এইচ,খোকন চলনবিল প্রতিনিধিঃ মাতৃভাষা বলতে ঐ ভাষাকে বুঝায় যে ভাষায় সন্তানের মা কথা বলে৷ শিশুদের  কথা বলার প্রথম সঙ্গী হলেন মা। সুতরাং মা যে ভাষায় কথা বলে সেটিই তার জীবনের প্রথম ভাষা । মায়ের ভাষাই হলো মানুষের মাতৃভাষা।
১৯৫২ সালের  ভাষা শহীদদের মহান আত্মত্যাগের ফলেই অর্জিত হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। ভাষা শহীদরা কাউকে আমাদের মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে দেয়নি। তারা নিজেদের প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছে বাংলা ভাষাকে। তাদের মত করে কি কখনও দেশকে ভালবাসতে আমরা পারব? সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও নাম না জানা অনেকের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এ ভাষার আজকের বর্তমান প্রজন্ম কতটা সম্মান করি?

ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক পর্যায়ে ও কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় বাংলা ভাষার প্রতি অনেক ক্ষেত্রে যথাযোগ্য সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা তো প্রকাশ পায়ই না, কখনও কখনও চরম অবজ্ঞার ভাবও ফুটে ওঠে।  আমাদের সন্তান-সন্ততি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়বে, অনর্গল ইংরেজি বলতে পারবে, এটা তো আমাদের জন্য আনন্দ ও গর্বের বিষয়। তবে তা অবশ্যই বাংলা ভাষাকে অবমূল্যায়ন করে নয়। অনেক অভিভাবককে অহরহ বলতে শুনি- ‘আমার সন্তান তো বাংলা জানে না।’ এই ‘জানে না’ বলার মধ্যে একধরনের গর্ববোধ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা থাকে। এই ‘বাংলা জানে না’ বাক্যটি প্রয়োগ করে বোঝানোর চেষ্টা কর ওরা যেন ইংরেজির পণ্ডিত ৷
আমাদের বর্তমান জীবনে কতটা আছে একুশের প্রভাব? বছরের এই একটি বিশেষ দিন ছাড়া আমরা তাদের ত্যাগের কথা মনে কি রাখি? ১৯৫২ এর তারুণ্যের আন্দোলনের মূল বিষয় ছিল বাংলা ভাষা। বর্তমান তারুণ্যের কাছে কি বাংলা ভাষার ততটা মর্যাদা আছে যতটা ৫২’ এর তারুণ্যের ছিল? বাংলা ভাষা আমাদের গৌরব অথচ আমরা এই ভাষার অপমান দেখি বিভিন্ন সময়ে।বিভিন্ন ভাবে।
আমাদের দায়িত্ব কি শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিতে খালি পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারের মূল বেদিতে ফুল দেয়া? আবার সেই শহীদ মিনারে অন্যান্য দিনগুলিতে জুতা পায়ে বসে থাকা? বন্ধুবান্ধব মিলে আড্ডা দেওয়া! এসব কোন ছোট ব্যাপার নয় যে আমাদের শিশুরা যারা বাংলা ভাষা শিখার আগে হিন্দি ভাষা শিখে ফেলছে। এমনটা হতে থাকলে তাদের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কিভাবে বাড়বে?

সর্বশেষ সংবাদ