বগুড়ায় বিমানবন্দরের রানওয়ে আরও ৩৫০০ ফুট সম্প্রসারণের পরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার:বগুড়াবাসীর বহু কাঙ্ক্ষিত বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান রানওয়েকে আরও ৩ হাজার ৫০০ ফুট সম্প্রসারণ করার জন্য বিমান বন্দর সংলগ্ন ৪টি মৌজায় সম্ভাব্য ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি জরিপও চালানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য দিয়ে বলছে, সম্প্রসারিত হলে বিমান বন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ৪০৫ দশমিক ৮ ফুটে উন্নীত হবে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য ঠিক কত ভূমি প্রয়োজন তা নির্ধারণের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় বিমানবন্দরের পশ্চিমের গ্রামগুলোতে জরিপ চালিয়েছেন। জরিপকারীরা জমির ধরণ জানার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্যও সংগ্রহ করেন।এর আগে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত বছরের ১৫ নভেম্বর বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন। তখন তাদের সঙ্গে থাকা বগুড়া-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বেবিচকের কর্মকর্তারা বগুড়া বিমানবন্দরকে বাণিজ্যিভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ আশাবাদী। তবে রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য কিছু জমি অধিগ্রহণ এবং অবকাঠামোগুলো আধুনিকায়নের প্রয়োজন হতে পারে।বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচলের জন্য ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এবং কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বড়মোহরসহ কয়েকটি গ্রামের ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ওই বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে ওই বিমানবন্দরে বেসরকারি বিমান চলাচলের কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে সেটিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে সেটি বিমান বাহিনীর ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টরস স্কুল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।বগুড়া বিমানবন্দর থেকে বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের দাবি দীর্ঘদিনের। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক বগুড়ায় আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বগুড়া সড়ক পথে ঢাকা যাতায়াতে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা এবং কখনও কখনও তার চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। একই অবস্থা রেলপথেও। সড়ক ও রেলপথে যাতায়াতের এমন ভোগান্তিতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের কষ্ট লাঘবে রাজশাহী কিংবা সৈয়দপুর থেকে বিমানে ঢাকা যাতায়াত করে থাকেন।এমন পরিস্থিতিতে বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়েকে সম্প্রসারণ করে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে সংসদে বক্তব্য রাখেন। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীকে একটি ডিও লেটারও দেন। তার পর পরই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করেন। পরবর্তীতে সিভিল এভিয়েশন সম্পত্তির শাখার প্রধান ইশরাত জাহান পান্নার নেতৃত্বে বেবিচক-এর ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত বছরের ১৫ নভেম্বর বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন।রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য সম্ভাব্য জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জরিপ কার্যক্রমে সহায়তাদানকারী বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ হাসান আলী প্রামাণিক জানান, বিমানবন্দরের পশ্চিম অংশে যেখানে রানওয়ের শেষ অংশ রয়েছে সেখান থেকে উত্তর দিকে ২০০ ফুট, দক্ষিণে ২০০ ফুট আর পশ্চিম দিকে অর্থাৎ সামনে সাড়ে ৩ হাজার ফুট সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য বর্তমানে রানওয়ের শেষ অংশ বড়মোহর গ্রামে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন অংশ থেকে পশ্চিম দিকে তারাতগাড়ি গ্রাম সংলগ্ন ইটভাটা পর্যন্ত চারটি মৌজার জায়গা অধিগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। তার মধ্যে দুই শতাধিক বসত-বাড়ি ছাড়া অন্যগুলো ফাঁকা জায়গা রয়েছে। তিনি অবশ্য বলেন, ‘২০১৭ সালে করা জরিপের ভিত্তিতে নতুন করে তথ্য নেওয়া হয়েছে। তবে এটা কিন্তু চুড়ান্ত কিছু নয়। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যেটা জেনেছি যে, এগুলো একটা প্রাথমিক পদক্ষেপ।’বিমানবন্দর সংলগ্ন শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আফতাব হোসেন জানান, বিমান বন্দরের লোকজন রানওয়ে বড় করার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তার বাড়িতেও গিয়েছিলেন। ইয়াছিন আলী নামে অপর এক বাসিন্দা জানান, বিমানবন্দরের জন্য বাড়ির জায়গা দিতে তাদের আপত্তি নেই। তবে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাদের প্রতিবেশি আনছার সরদার বলেন, যাদের বসত-বাড়ির জায়গা নেওয়া হবে তাদেরকে অন্যত্র এক সঙ্গে বসবাসের সুযোগ দিতে হবে।বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক জানান, সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা গত বছরের ১৫ নভেম্বর বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শনের পর নতুন আর কোন তথ্য তার জানা নেই। রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য সম্ভাব্য জমি অধিগ্রণের কোন প্রস্তাবনা এসেছে কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না। এখন পর্যন্ত আসেনি। যখন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে তখন হয়তো এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আমাদের কাছে পাঠানো হবে।’

সর্বশেষ সংবাদ