বগুড়ায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষক নূর মোহাম্মদের পাশে দাঁড়ালেন এসপি সুদীপ

সঞ্জু রায়, বগুড়া: ৭২ বছর বয়সে শিক্ষকতা করে বেশ সুখেই দিন অতিবাহিত করছিলেন বগুড়া উত্তরণ উচ্চ বিদ্যালয় নারুলীর সহকারী শিক্ষক (অবঃ) শেখ নূর মোহাম্মদ। সারাজীবনের উপার্জন জমিয়ে করা দুটি বাসা ও গ্যারেজের ভাড়া দিয়ে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন এলাকায় সাদামাটা ও নিরহংকারী মানুষ হিসেবে পরিচিত এই শিক্ষক।
কিন্তু ঈদের আগে হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয় আর তিনি পরে যান দুঃখের অতল সাগরে। জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে শহরের দক্ষিণ নারুলী এলাকায় তার একটি ভাড়া বাড়িতে আগুন লাগে। সেখান থেকে তার নিজের থাকার বাড়িসহ আয়ের একমাত্র উৎস অটোরিকশা গ্যারেজসহ সকল স্থাপনা অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বৃদ্ধ বয়সে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পরিবারের সকলে নিজেদের জীবন বাঁচাতে পারলেও বাসার ভিতর থেকে নিতে পারেনি পরনের একটি কাপড়ও। শিক্ষক নূর মোহাম্মদের পরিবারে বর্তমানে রয়েছে তার স্ত্রী, ৪০ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে যিনি দুই বছর ধরে প্যারালাইসড হয়ে আছেন, পুত্রবধু এবং নাতি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই কিন্তু অভাগা এই পিতা গত দেড় বছরের ব্যবধানে বড় মেয়েসহ তার দুই মেয়ে জামাইকেও হারিয়েছেন। সীমাহীন এই নিদারুণ কষ্টের মাঝে আগামীকাল পবিত্র ঈদ উল ফিতর উদযাপন যেন শিক্ষক নূর মোহাম্মদ এর কাছে দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। কিন্তু ঠিক এই অসহায় মূহুর্তেই সহায় হয়ে তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবত্তীর্ বিপিএম।
সোমবার দুপুরে শিক্ষক নূর মোহাম্মদ ও তার পরিবারের সকল সদস্যের জন্য ঈদের নতুন জামা-কাপড় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ তিনটি বাড়ি ও গ্যারেজ পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবত্তীর্। এসময় তিনি নূর মোহাম্মদের হাতে উপহার হিসেবে ঈদ সামগ্রী ও নগদ টাকা তুলে দেন। শুধু তাই নয় ভালবাসার এই উপহার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি তার এই বিপদের মূহুর্তে জেলা পুলিশ পরিবারের পক্ষে তিনি তাকে দিয়েছেন সাহস এবং আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা।
জেলা পুলিশ সুপারের দেওয়া ঈদ উপহার ও নগদ সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জানান, ঈদের আগে এভাবে এসপি মহোদয় তার কাছে ছুটে আসবেন তা তিনি কখনও ভাবেননি। সৃষ্টিকর্তা যেন তার মঙ্গল করেন।
জেলা পুলিশ সুপারের মানবিক এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে উত্তরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালক ও সাবেক প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষক নূর মোহাম্মদ একজন সাদামাটা ও ক্রীড়ামোদী মানুষ। এখনো তিনি নারুলী গোরস্থানের সাধারণ সম্পাদক এবং নারুলী কেন্দ্রীয় মসজিদের সহ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার এই বিপদে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি প্রতিষ্ঠানের সকলের পক্ষ থেকে এসপি সুদীপ চক্রবত্তীর্ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবত্তীর্ বলেন, খুব সামান্য উপহার নিয়ে একজন স্কুল শিক্ষকের পাশে তিনি দাঁড়াতে পেরেছেন এটি সবচেয়ে প্রশান্তির বিষয়। বগুড়া জেলা পুলিশ সর্বদাই সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি সকলকেই মানবিক কাজে সর্বদা একে অপরের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এসময় অন্যান্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম, ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোস্তম আলী, উত্তরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালক ও সাবেক প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন, সহকারী শিক্ষক যথাক্রমে মাহফুজুল ইসলাম তালুকদার বাদল, সাইফুল ইসলাম ও আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষক নূর মোহাম্মদ এর ছাত্র দৈনিক চাঁদনী বাজারের স্টাফ রিপোর্টার সঞ্জু রায় প্রমুখ।

সর্বশেষ সংবাদ