বিদেশে পাসপোর্ট হারালে কী করবেন?

ভ্রমণে গিয়ে টাকা পয়সা হারিয়ে চুরি গেছে বা হারিয়ে ফেলেছেন, এর চেয়ে ভয়ানক অবস্থা হতেই পারে না, ভাবছেন হয়ত আপনি। কিন্তু আরও একটা ভয়ানক ব্যাপার হতে পারে, সেটা হল, ভ্রমণে গিয়ে টাকা পয়সার সাথে সাথে পাসপোর্টও হারিয়ে ফেলেন, আপনি আসলেই ভয়ানক অবস্থায় পড়েছেন বলে ধরে নিতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে যে কারোই মাথা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তবে মাথা খারাপ করে আসলে লাভ নেই। টাকা পয়সা ও পাসপোর্ট চুরি যদি হয়ে যায়, আসুন দেখা যাক আপনার করণীয় কি আছে।

কী করবেন?

যে মুহূর্তে বুঝতে পারবেন যে পাসপোর্ট সাথে নেই, খুঁজে পাচ্ছেন না বা চুরি গেছে, সাথে সাথে নিকটস্থ থানায় সেটা জানান এবং আপনার পাসপোর্টের নাম্বার ও সম্ভব হলে ফটোকপি দিয়ে একটি জেনারেল ডায়েরি বা জিডি করে ফেলুন।

এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে উল্লেখ করতে হবে যে আপনার পাসপোর্টে কোন কোন দেশের ভ্যালিড ভিসা রয়েছে। অনেক সময় একজনের পাসপোর্টে আর একজনকে বাইরে পাচার করিয়ে দেয়া হয়, আর এইসব পাচার হয়ে যাওয়া মানুষরা সাধারণত ক্রিমিনাল হয়ে থাকে। তাই নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য হলেও আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব পাসপোর্ট হারিয়ে বা চুরি যাবার বিষয়টি জানাতে হবে, নয়ত বিদেশে জেল জরিমানা যে কোন কিছুই হতে পারে আপনার।

টাকা পয়সা হাতে না থাকলে সামান্য বিপদও সাংঘাতিক বিপদ বলে মনে হতে পারে। তবে এখনও মানুষ পাষাণ হয়ে যায়নি, আর তাই এখনও আপনি বিপদে পড়লে কেউ না কেউ আপনার সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে, আপনাকে আশ্রয় দেবে বা তার সাধ্যমত টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করবে। আর পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বাংলাদেশি আছে, আজকালকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে এদের সাথে যোগাযোগ তৈরি করাও সম্ভব হতে পারে একটু চেষ্টা করলেই। আপনি দরকারে তাদের সহযোগিতাও নিতে পারেন।

পাসপোর্ট চুরি বা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে নিকটস্থ থানায় জেনারেল ডায়েরি করার পরে আপনার কাজ হবে দেশে যোগাযোগ করা। দেশ থেকে জরুরী ভাবে টাকা নিয়ে আসা যায় কি না সেটা দেখুন। হাতে টাকা থাকলে অনেক খারাপ পরিবেশই সহজ হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও সেই দেশে থাকা বাংলাদেশি মানুষজন আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে।

টাকা পয়সা হাতে আসতে আসতে আপনি যোগাযোগ করে ফেলুন সেই দেশে থাকা বাংলাদেশ হাই কমিশনে। এখানে আপনি যেসব দেশে বাংলাদেশ এর দূতাবাস রয়েছে, তার একটি তালিকা দেখতে পারবেন। হাই কমিশনে আপনি সকল তথ্য দিয়ে সহায়তা চাইবার পরে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। আপনার দেয়া তথ্য যাচাই করার পরে আপনাকে একটি সাময়িক সনদ প্রদান করা হবে, যেটা দিয়ে আপনি দেশে ফিরতে পারবেন। আর এই অপেক্ষার সময়টায় আপনাকে অবশ্যই সাথে থানায় করা জিডি এর কপি সাথে রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে পাসপোর্টের ফটোকপি। এগুলো আপনার সাময়িক আইডি এর মত ব্যবহার হবে।

হাই কমিশন থেকে সাময়িক সনদ দিয়ে আপনি তো দেশে ফিরতে পারলেন, দেশে ফেরার পরে আপনাকে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট দেখিয়ে, যার মাঝে থাকতে পারে থানায় করা জিডি এর ফটোকপি, সাময়িক সনদের ফটোকপি বা মূল কপি।

দুর্ঘটনা যে কোনও সময়েই ঘটতে পারে মানুষের জীবনে, আর তাই আপনাকে বিদেশে ভ্রমণ করতে গেলে সমস্যা হতে পারে এই চিন্তা করে কিছু আগাম সর্তকতা বজায় রাখতে হবে।

* ডকুমেন্ট ফটোকপি: আপনি আপনার বিভিন্ন ডকুমেন্ট এর ফটোকপি, যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, এনডোর্সমেন্ট, বিভিন্ন রকম টিকিট ইত্যাদি জিনিসের ফটোকপি করে নিজের কাছে ও ভ্রমণ সঙ্গীর কাছে রাখতে পারেন।

* ডকুমেন্ট এর ডিজিটাল কপি: ফটোকপি করার পাশাপাশি, এই ডকুমেন্টগুলো স্ক্যান করে ড্রপ-বক্স, গুগল ড্রাইভ ইত্যাদি জায়গায় সেভ করে রাখতে পারেন। দরকারে ডাউনলোড করে নিন।

* ডকুমেন্ট এর ছবি তুলে রাখা: স্ক্যান করার সুযোগ না থাকলে ডকুমেন্ট গুলোর পরিষ্কার ছবি তুলে সেগুলো ফেসবুকের ইন-বক্সে বা আপনার মোবাইলে রেখে দিন।

* কাউকে মেইল করে রাখা: ছবি বা স্ক্যান করা ডকুমেন্টগুলো এটাচ করে বিশ্বস্ত কাউকে ইমেইল করে দিন ও জানিয়ে রাখুন যে দরকারে তাকে এই তথ্যগুলো অন্য কোন ঠিকানায় আপনি পাঠাতে বলতে পারেন।

বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা হতেই পারে, তবে মাথা ঠাণ্ডা রাখলে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে সহজেই। সুবিধার জন্য, আবারও একবার দেখে নিন ভিনদেশে বাংলাদেশ এর হাই কমিশন এর তালিকা।

সর্বশেষ সংবাদ