বগুড়া ডাকঘরে নৈশ প্রহরী খুন

দৌলত,প্রতিনিধি,বগুড়াঃ-বগুড়ার প্রধান ডাকঘরের ভল্ট কেটে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার রাত ২টার পর ডাকাতির চেষ্টা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে সোমবার সকালে পুলিশ নিহত প্রশান্তের ছোট ভাই গোবিন্দ আচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছেন। পাশাপাশি মিন্টু নামের একজন নৈশ প্রহরীকে খুঁজছে পুলিশ। গত রোববার রাতে প্রশান্তের সঙ্গে মিন্টুর ডিউটি থাকলেও তিনি রাতে আসেননি এবং তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বগুড়া শহরের প্রাণ কেন্দ্র সাতমাথায় প্রধান ডাক ঘরের অবস্থান। ঈদের ছুটিতে নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছিলেন অফিস সহায়ক প্রশান্ত আচার্য। তাঁর ছোট ভাই গোবিন্দ আচার্য ডাকঘরের অভ্যন্তরে একটি দোকান পরিচালনা করেন। সোমবার সকাল ৯টার দিকে তিনি ডাকঘরে এসে তাঁর ভাইকে ডাকতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। পরে গোবিন্দ থানায় খবর দিলে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল দেখা যায়, ডাকঘরের পূর্ব পাশের করিডরে মেঝেতে নিজের বিছানায় প্রশান্তের মরদেহ পড়ে আছে। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও কাপড়ের ছেঁড়া অংশ ডান হাত বাঁধা ছিল। দুর্বৃত্তরা ভেতরে প্রবেশ করে ট্রেজারি শাখার বিভিন্ন ফাইলপত্র তছনছ করেছে। ইলেকট্রিক ড্রিল মেশিন দিয়ে ভল্টের দরজায় ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য এবং ৪ ইঞ্চি প্রস্থ করে কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ভল্টের দরজা পুরোপুরি খুলতে পারেনি দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দেয়াল টপকিয়ে ডাকঘর চত্বরে প্রবেশ করলেও ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে তাদেরকে কোনো দরজা কাটতে হয়নি। এ ছাড়াও প্রশান্ত যেখানে বিছানা করে শুয়ে ছিলেন সেখানকার কলাপসিবল গেটের তালা দেওয়া ছিল।
দুর্বৃত্তরা যে সকল ইলেকট্রিক সামগ্রী ব্যবহার করেছে তার আলামত দেখে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে ডাকঘরে গেছে বলে সন্দেহ পুলিশের। এ ছাড়াও ডাকঘরের সিসিটিভি ফুটেজের ক্যামেরাগুলো নিষ্ক্রিয় করা ছিল। তবে একটি ক্যামেরায় একজন দুর্বৃত্তকে মুখোশ পরা অবস্থায় ডাকঘর অভ্যন্তরে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে মনে হচ্ছে দুর্বৃত্তরা বালিশ চাপা দিয়ে প্রশান্তকে খুন করে। পরে ভারী কোনো বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে। মৃত্যুর আগে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে প্রশান্তের কোনো ধস্তাধস্তি হয়েছে তেমন কোনো নমুনা সেখানে নেই। এ ছাড়াও খুন করার পর মাথায় আঘাত করার কারণে রক্তপাত হয়নি।
বগুড়া প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার রাকিব বিশ্বাস বলেন, ‘ঈদের ছুটির কারণে ডাকঘরে কর্মরত তিনজন নৈশ প্রহরী জাহিদুল, বকুল এবং সাইফুল ছুটিতে ছিলেন। এ কারণে অফিস সহায়ক প্রশান্ত এবং তাঁর সঙ্গে এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল (ইডি) কর্মচারী মিন্টু দায়িত্বে ছিলেন। গত রোববার রাতে মিন্টু ডিউটিতে আসেনি এবং তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’
পোস্ট মাস্টার বলেন, ‘সামান্য কিছু টাকা পয়সা খোয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিস্তারিত জানাতে সময় লাগবে।’
এদিকে নিরাপত্তা এবং ঘটনা অনুসন্ধান করতে প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার ছাড়া অন্য কাউকে ডাকঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। এ কারণে ঈদের ছুটির পর সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রথম অফিসে বগুড়া প্রধান ডাকঘরের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘ঘটনাটি ডাকাতির চেষ্টা। দুর্বৃত্তরা ভল্টের কিছু অংশ কাটলে টাকা কিংবা মূল্যবান কিছু নিতে পারেনি বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। পাশাপাশি ডাকঘরের তিনজন নৈশপ্রহরী থাকার পরেও একজন অফিস সহায়ককে কেন দায়িত্ব পালনে রাখা হলো? সে বিষয়গুলো মাথায় রেখে পুলিশ কাজ করছে।

সর্বশেষ সংবাদ