এমপি লিটন হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল সাবেক এমপি কাদের খানসহ ৮ জন অভিযুক্ত

আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকেঃ সুন্দরগঞ্জের বহুল আলোচিত সরকার দলীয় সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।
রোববার বিকেলে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমান ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আবু হায়দার মোঃ আশরাফুজ্জামান গাইবান্ধা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আলামতসহ জব্দকৃত যাবতীয় উপকরণ দাখিল করেন। আলোচিত এই মামলায় জাপার সাবেক এমপি কর্ণেল ডাঃ আব্দুল কাদের খানসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে সোহেল রানা, শাহিন মিয়া, মেহেদী হাসান, কাদের খানের ব্যক্তিগত সহকারি (পিএস) শামছুজ্জোহা সরকার, গাড়ি চালক আব্দুল হান্নান, উপজেলা আ’লীগ সাবেক দপ্তর সম্পাদক চন্দন কুমার সরকার ও তার দুলাভাই কসাই সুবল চন্দ্র সরকার। থানার ওসি আতিয়ার রহমান জানান-দীর্ঘ ৪ মাস ধরে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে সাবেক এমপি লিটন হত্যা মামলার চার্জশিট তৈরি করে তা আদালতে দাখিল করা হয়। মামলার আলামত হিসেবে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল, পিস্তুল, পিস্তুল রাখার ট্রাংক, মোবাইল সেট, ম্যাগজিনসহ যাবতীয় জব্দকৃত মালামাল জমা দেয়া হয়। জব্দকৃত মালামাল ছাড়াও এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ষড়যন্ত্রকারিদের কথোপকথনের তথ্য উপাত্ত জমা দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামের মাস্টারপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে এমপি লিটন দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন সন্ধ্যায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এনিয়ে এমপি লিটনের ছোট বোন ফাহ্মিদা বুলবুল কাকলী বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তাসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য দিন-রাত কাজ করে। প্রাথমিক অবস্থায় জামাত-শিবির ও পারিবারিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরই একপর্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে জামাত-শিবির ও বিএনপি’র ৮৫ জনকে বিভিন্ন এলাকা হতে গ্রেফতার করে। তবে এমপি লিটন হত্যা সন্দেহে ৩৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তদন্ত চলাকালিন সময় পিআইবি’র মোবাইল ট্রেকিং ও ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে বহুল আলোচিত এমপি লিটন হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জাপার সাবেক এমপি আব্দুল কাদের খানের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ওই সূত্র ধরে পুলিশ প্রথমে কাদের খানের গাড়ি চালক আব্দুল হান্নানকে আটক করে। এরপর হান্নানের স্বীকার উক্তি মোতাবেক খুনের সাথে জড়িত কাদের খানের ভাড়াটে কিলার মেহেদী হাসান, শাহিন মিয়া, সোহেল রানা, সুবল চন্দ্র, শামছুজ্জোহাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মামলার মুল পরিকল্পনাকারী আব্দুল কাদের খানকে গ্রেফতার করে। কাদের খানসহ ৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে লিটন হত্যার দায় স্বীকার করে। এদিকে চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামী চন্দন কুমার সরকার বর্তমানে ভারতে পলাতক রয়েছে। অন্যান্য আসামীরা জেল-হাজতে। মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা আবু হায়দার মোঃ আশরাফুজ্জামান জানান-চন্দনকে ভারত থেকে ফিরে আনার প্রক্রিয়া চলছে। চার্জশিটে বলা হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে আব্দুল কাদের খান এমপি লিটনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে পরবর্তীতে এমপি হওয়ার ক্ষেত্রে যাতে করে কেউ তার প্রতিদ্বন্দ্বী না আসতে পারে। সে কারণে লিটনকে খুন করা হয়। মামলার চার্জশিট দাখিলের ব্যাপারে বাদি ফাহ্মিদা বুুলবুল কাকলী জানান-আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে কোন কিছু গোপন রাখার সুযোগ নেই। পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সহিত অল্প সময়ে আমার ভাই হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে। এ জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ জানাই। তিনি অভিযুক্তদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের সু-দৃষ্টি কামনা করেন। নব-নির্বাচিত সরকার দলীয় এমপি ও উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ জানান- আইন তার নিজ গতিতে চলে। পুলিশ অল্প সময়ের মধ্যে বহুল আলোচিত এমপি লিটন হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করায় আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

সর্বশেষ সংবাদ