এই দেশে পোশাকের পর হ্যান্ডসেট রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনা দেখছেন,মো.আশরাফ উদ্দীন

ডেস্ক নিউজ: হাজী মো. আশরাফ উদ্দীন একজন সৎ কর্মঠো প্ররিশ্রমী মেধাবী সফল উদ্যোক্তা নিরসন্দেহে বলা যায়,বাংলাদেশ সরকারের সকল  বিধি-বিধান মেনে বৈধ ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে সফল হয়েছেন তিনি ২০০৮ সালে চীন থেকে হ্যান্ডসেট আমদানির মাধ্যমে মোবাইল ফোনের ব্যবসায় আসেন মো. আশরাফ উদ্দীন। লিফোন, খেচোদাসহ কয়েকটি চীনা ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন আমদানি শুরু করেন।
২০১১ সাল থেকে নিজেদের ব্র্যান্ডে (ইউনস্টার, ডিসকভারি) চীন থেকে মোবাইল সংযোজন করে দেশের বাজারে বিক্রি শুরু করেন। চীনাদের কারখানা পরিদর্শনের সময় স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজেই একটি মোবাইল কারখানা গড়ে তুলবেন। এরপর ২০১৮ সালে এসে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে ফেললেন সাহসী উদ্যোক্তা মো. আশরাফ উদ্দীন। আনিরা ইন্টারন্যাশনাল, ইউনস্টার মোবাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আশরাফ উদ্দীন এখন সরকারের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ স্বপ্ন বাস্তবায়নকারীদের একজন সহযোগী।
মোবাইল ফোন সংযোজনের অনুমতি পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ভিন্নিপাড়ায় কারখানা স্থাপন করেছে ইউনস্টার মোবাইলের মূল কম্পানি আনিরা ইন্টারন্যাশনাল। সেখানে কাজ করছেন ৪৭০ জন কর্মী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানায় মোবাইল সংযোজন শুরু করেছে ইউনস্টার মোবাইল। দুটি ইউনিট এখন চালু আছে, আরেকটি ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। সব মিলে প্রায় এক লাখ বর্গফুটের কারখানায় এখন প্রতিদিন ছয় হাজার ফোন সংযোজন হয়।
মাসে দেড় লাখ ইউনিট ফোন উত্পাদনের সক্ষমতা বাড়িয়ে তিন লাখ করা হবে বলে জানালেন মো. আশরাফ উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘ব্যাবসায়িক কারণে প্রায়ই চীনে যেতে হতো। আমাদের পার্টনাররা তাঁদের মোবাইল ফোনের কারখানা দেখাতে নিয়ে যেতেন। এই সুবাদে চীনের শীর্ষ কয়েকটি ব্র্যান্ডের কারখানা দেখার সুযোগ হয়। মোবাইল ফোন সংযোজনে সরকারের কর ছাড়ের ফলে কারখানা করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়।
বিশ্বের মোবাইল শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু চীনে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রথমে ট্রেডিং ব্যবসা। এরপর সংযোজন। সেখান থেকে উত্পাদনকারী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন ইউনস্টার মোবাইলের মূল কম্পানি আনিরা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দীন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মাসুদ রুমী
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব ব্র্যান্ডের ফোন দেশেই সংযোজন করছি। পিসিবি (মাদারবোর্ড) তৈরির মেশিনারিজ সংযোজন করতে যাচ্ছি। আমরা এসএমটি মেশিন নিয়েছি, তিন মাসের মধ্যে তা চালু হবে বলে আশা করছি। তখন উত্পাদনকারী হিসেবেও আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হবে।
এই উদ্যোক্তা বলেন, এখন আমাদের পাঁচটি লাইনে উত্পাদন কার্যক্রম চলছে। এটি বাড়িয়ে ১৫টি অ্যাসেম্বলি এবং পাঁচটি প্যাকিং লাইন করব। এ ছাড়া একটি চার্জার এবং ব্যাটারি কারখানা করার পরিকল্পনাও আছে।
মো. আশরাফ উদ্দীন বলেন, ‘আমরা এখন ইউনস্টার ও ডিসকভারি ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন সংযোজন করছি। ’
স্মার্টফোন সংযোজন সম্পর্কে জানতে চাইলে আনিরা ইন্টারন্যাশনালের এমডি বলেন, ‘আমরা নিজস্ব ব্র্যান্ড ইউনস্টারের মাসে ৩০ হাজার স্মার্টফোন সংযোজন করছি। এসব স্মার্টফোনের দাম আড়াই হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে। এতে এক বছর বিক্রয়োত্তর সেবা ছাড়াও ৬০ দিনের রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা আছে। এ ছাড়া বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে প্রত্যেক জেলায় ইউনস্টার কেয়ার আছে। ’
তিনি বলেন, আমাদের দেশের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করতে দেশের প্রতিটি তরুন প্রজন্মের হাতে স্বল্প মূল্যে স্মাট ফোন পৌছে দিতে পারাটা আমার উদ্দেশ্য কেননা দেশের অধিকাংশ তরুন বেকার তাদের ভালো কোনো আতের উৎস নেই বলে তারা বেশি দামের হ্যান্ডসেট ব্যবহার করতে পারছে না কেননা তরুণ প্রজন্ম স্মার্টফোনের দিকে ঝুঁকছে। এ কারণে আমরা স্মার্টফোনের দিকে জোর দিচ্ছি। আমাদের এসএমটি মেশিন চালু হলে আরো ভালো কোয়ালিটির ফোন উৎপাদন করতে পারবো। একই সঙ্গে ফিচার ফোনের বাজার আরো অনেক দিন থাকবে বলে মনে করি। ’
মোবাইল ফোনের বাজারে দিন দিন প্রতিযোগিতা বাড়ছে, দামও কমছে বলে জানালেন মো. আশরাফ উদ্দীন। তিনি বলেন, কে কার চেয়ে কম দামে ফোন বিক্রি করবে এই প্রতিযোগিতা চলছে, যা এই শিল্পের বিকাশে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো নয়।
দেশে মোবাইল ফোনের সংযোগ শিল্প গড়ে না ওঠাকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন আনিরা ইন্টারন্যাশনালের এমডি। তিনি বলেন, জানুয়ারির মধ্যে আমাদের এসএমটি মেশিন বসাতেই হবে। যদিও আমাদের দেশে সংযোগ শিল্প (ভেন্ডর) গড়ে ওঠেনি। ফোনের ক্যামেরা, ব্যাটারি, স্পিকার, বডি এসব ব্যাকুয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তুলতে বিনিয়োগ প্রয়োজন। এসব শিল্প গড়ে তুলতে হলে সরকারের আরো সহায়তা প্রয়োজন।
ইউনস্টার মোবাইল কার্ডফোনসহ ছোট ছোট ফোন সংযোজন করে বিক্রি করছে, যা তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে জানালেন মো. আশরাফ উদ্দীন। তিনি বলেন, এটি মানি ব্যাগের মধ্যে রেখে সহজেই ব্যবহার করা যায়। একবার চার্জ দিয়ে সাত-আট দিন ব্যবহার করা যায়। আবার কেউ কেউ স্মার্টফোনের সঙ্গে ব্লুটুথ সংযুক্ত করে ক্ষুদ্রাকৃতির এসব ফোন ব্যবহার করছেন।
‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ফোনের বিক্রি আরো বেড়েছে বলে জানালেন মো. আশরাফ উদ্দীন। তিনি বলেন, ক্রেতারা মেড ইন বাংলাদেশ শুনে আরো খুশি হয়ে ফোন কিনছেন, যা আমাদের জন্য খুব আনন্দের।
তৈরি পোশাকের পর দেশে মোবাইল ফোন শিল্পে বড় সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা। তাঁর মতে, বিশ্ববাজারে সাশ্রয়ী দামে পোশাক সরবরাহ করে সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে মোবাইল শিল্পেও একইভাবে আমরা জায়গা করে নিতে পারব। ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে রপ্তানি বাজারেও ভালো করার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের।

সর্বশেষ সংবাদ