ইউএলওর দেখানো স্বপ্নে ৭৬ খামারি নাস্তানাবুদ

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের  আদিতমারীতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য দুধেল গাভির খামার। এই সব খামারকে ছোট খামার না বলে ঘরোয়াখামার হিসেবে পরিচিত। আদিতমারী উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই এসব ঘরোয়া খামার লক্ষ্য করা গেছে। অনেকটা সখের বসে, কেউবা পরিবারের প্রতিদিনকার বাজার-সদাই থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ পর্যন্ত চালাচ্ছেন এমন সব খামারি। যারা সখের বসে একটা-দুটা দুধেল গাভি কিনেছিলেন শুধুমাত্র বাড়ির আঙ্গিনার শোভা কিংবা পরিবারের দুধের খরচ চালাবার জন্য,তারও এখন আর এসব খামার থেকে মুখ ফেরাতে নারাজ। সখ থেকে তারা বরং হয়ে যাচ্ছেন পেশাদার খামারি। এসব খামারির তালিকায় বাদ নেই অন্য যে কোন পেশার মানুষের নাম। সরকারি-বেসরকারি চাকুরে থেকে শুরু করে বাদ নেই ছাত্র এবং গৃহিণীরাও। তারা সবাই তাদের নবদিগন্তে আলোর ঝলকে স্বপ্ন দেখছেন।
সেই স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় ৭৬ জন খামারির সমন্নয়ে গড়ে উঠেছে আদিতমারী খামারি সমিতি। এই খামারিরা মূলত গাভি পালন করে থাকেন। অল্প সংখ্যক খামারি গরুমোটাতাজা করার সাথে জড়িত। সমিতির সভাপতি মোখলেছুর রহমান বাবুলের কথায় জানা যায় এসব খামারি মূলত প্রান্তিক খামারির মত করে,অনেকটা সাধারণ ব্যবস্থাপনায় খামার করে আসছেন। যদিও তারা যথেষ্ট আধুনিক, কিন্তু তাদের খামারে নেই কোন আধুনিক বৈজ্ঞানিকতার ছোঁয়া। যদি এসব খামারি আধুনিক চিকিৎসাসেবা এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিতি ঘটিয়ে, খামারকে আধুনিকায়ন করতে পারে, তাহলে বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যতে দিগুণ লাভের মুখ দেখতে পারবেন।
এই সমিতি গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান,আমাদের অঞ্চলে দুধ বাজারজাত করাটা একটা বড় রকমের বিড়ম্বনার কাজ। তাই, আদিতমারী উপজেলার নতুন লাইভস্টক অফিসার মোশারফ হোসেন আসার পরে একটি সমিতি করার তাগিদ দেন, তিনি জানান সমিতি করলে দুধ বাজারজাত করার সুবিধার কথা। কিন্তু সমিতি করার ৫/৭ মাস হয়ে গেলেও তেমন কোন উদ্দোগ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। সমিতির শুরুর প্রথম দিনই ৭৬ জন খামারিকে নিয়ে প্রাণি সম্পদ অফিসে মিটিং হয়েছিল,  কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর মিটিং অনুষ্ঠিত হয়নি। কাজেই যতই দিন চলে যাচ্ছে সমিতির কার্য্যক্রম ভেঙে যাচ্ছে। তিনি যে মিল্কভিটা, আড়ং এর মত প্রতিষ্ঠানে দুধ বাজারজাত করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন,তা যদি সত্যি সত্যি কোন একদিন বাস্তবে হয়,তাহলে রুপকথার গল্পের মত পাল্টে যাবে আদিতমারী উপজেলার গাভি পালনের চিত্র এবং গড়ে উঠবে অসংখ্য ছোট-বড় খামার।
আদিতমারী প্রাণিসম্পদ অফিসের কাছাকাছি  ফাতেমা বেগমের ৪টি গরু নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি খামার। তিনি জানান মোট পাঁচটি গাভি নিয়ে একটি দুধেল খামার তৈরির করবেন।  এরপর গরু মোটাতাজাকরনের দিকে এগিয়ে যাবেন।
আদিতমারী সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে আব্দুর রাজ্জাক ৩ বছর পূর্বে একটি বকনা বাছুর সহ দুধেল গাভি কিনেছিলেন, এখন তার গাভির সংখ্যা দুইটি এবং ষাঁড় রয়েছে তিনটি।তিনিও প্রতিদিন ১৫ লিটার দুধ বাজারজাত করে আসছেন। তিনি তার এই ছোট খামারটি নিয়ে দেখছেন,বাস্তবের নিরিক্ষে রঙিন স্বপ্ন।

সর্বশেষ সংবাদ