আদিতমারীতে শতবর্ষী স্কুলের সাফল্যগাথা গল্প

এস সুজন রায়,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা হতে দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার দূরে তিস্তার তীরবর্তী একটি গ্রাম মহিষাশহর। জনস্রুতি আছে কাকিনার রাজা মহিমা রঞ্জন এর মহিষের পাল বা সর এই পথ দিয়েই যেত প্রতিনিয়ত। সেখান থেকেই এই চরাঞ্চলের নাম হয় মহিষাসর যা পরবর্তিতে মহিষাশহর নমে প্রচলন হয়। এই মহিষাশহর গ্রামেই তখনকার ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৪২ সালে ১.৭৯ একর জায়গার ওপর চন্দ্রনাথ বর্মনকে প্রধান শিক্ষক করে, তারই হাত ধরে গড়ে ওঠে মহিষাশহর প্রাথমিক বিদ্যালয়।তখন এই জাগাটিতে মানুষের বসতি ছিল হাতে গোনা গুটি কয়েক। সেই সময় দূর-দূরান্ত থেকে এখানে লেখা-পড়া করতে আসতেন অতি আগ্রহী আর শিক্ষানুরাগী শিক্ষার্থীরা। সেই সময় মহিষাশহর ছিল তিস্তার গর্ভে থাকা একটি চর মাত্র। কালের খেয়ায় আজ সেখানে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে,দেশের ভাল ভাল স্কুল-কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন স্থানে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন। জায়গা করে নিচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি সব উচ্চপদে।
এই ধারাবাহিকতায় উকি দেয় নবদিগন্তের নতুন আলোক রেখা। যুক্ত হতে থাকে একের পর এক সাফল্যের পালক। খেলা ধুলা থেকে সব দিক দিয়েই এগিয়ে যেতে থাকে এই গ্রাম্য পাঠশালাটি। বালিকা ফুটবলের মত দল তৈরি হয়।স্থানীয় টি-স্টলে বসে,টি-স্টলের মালিক পঙ্কজ সহ দুতিনজন অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায় স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোঃ মশিউর রহমান সুমন ২০১৭ সালে যোগ দেয়ার পর, বালিকা ফুটবল দলটি যখন তৈরি করতে চান,তখন অনেকেই আপত্তি জানায়। পরে শিক্ষক মোঃ মশিউর রহমান সুমনকে শর্ত দেন, মশিউর রহমান যদি নিজে ঐ বালিকা দলটিকে তৈরি করার দায়িত্ব নেন, তাহলে তাদের মেয়েদের ফুটবল খেলার অনুমতি দিবেন। মশিউর রহমান সুমন তা মেনে নিয়েই দলটিকে প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। দলটি পরে ইউনিয়ন ও ক্লাস্টার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত গৌরব অর্জন করে।
এরপর সাফল্যের পালক যোগ হতেই থাকে স্কুলটির অর্জনের তালিকায়। ২০১৮ সালে উপজেলা পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনে মনিনুর ও মৃনাল ১ম ও ২য় স্থান অধিকার করেন। জাতীয় সংগিত গাওয়ার প্রতিযোগীতায় ইউনিয়নে ১ম,উপজেলায় ১ম স্থান অর্জন করে জেলাতেও অংশগ্রহণ করে। এমন কোন প্রতিযোগীতা নেই যেখানে তারা সাফল্যের সাক্ষর রাখছেন না।
এরপর পরই স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদেন জিয়াউল হক। তারপর জিয়ায়ুল এবং মশিউরের  উৎসাহে  একের পর এক যোগ হতে  থাকে সাফল্যপালক।
স্কুলটির পাশের হার বর্তমানে শতভাগ। ২০১৩ সালে জিপিএ ৫ পায়৪৮ জনে ৫জন,২০১৪সালে ৫৮ জনে জিপিএ ৫ পায় ৩জন,২০১৫ সালে ৫৯ জনে ৫ জন জিপি৫ এর মধ্যে ৩ জনই ট্যালেন্ট,২০১৬ সালে ৫১ জনে ৫ জন ২ জন ট্যালেন্ট,২০১৭ সালে ৪৯ জনে ৫ জন একজন ট্যালেন্ট,২০১৮ সালে ৫৮ জনের মধ্যে ১৬ জন জিপিএ ৫ পায় যারমধ্যে ট্যালেন্ট ৭ জন,২০১৯ সালে ৪০ জনের মধ্যে ১৩ জন জিপিএ ৫ পেয়েছেন।
স্কুলটিতে গিয়ে দেখা গেলো,তাদের মিড ডে মিল, ইউনিফর্ম,ইউনিফর্মের নেমপ্লেট,সোলজার ব্যাচ,স্কুলের মনোগ্রাম সম্বলিত প্রায় শতভাগ উপস্থিতি।
স্কুলটির সাফল্যের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (টিও)এন এম শরীফুল ইসলাম খন্দকার জানান, আমাদের স্কুলগুলোর মধ্যে মহিষাশহর স্কুলটি খুব ভাল করছে। এমন নয় যে, আমরা অফিস থেকে বিশেষ কিছু করছি। স্কুলটির একেরপর এক সাফল্য শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। আমি মনে করি, শিক্ষকরা চাইলে  সব পারেন। স্কুলটির শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাচ্ছে। এতে আমি ভীষণ খুশি, তারপরও বলবো ওখানকার প্রধান শিক্ষক এবং মশিউর সাহেব সহ সব শিক্ষকই খুবেই আন্তরিক। তাদের অারো সাফল্য আসে বলে আমি এমনতাই প্রত্যাশা করি।

সর্বশেষ সংবাদ