রাজশাহীর ১৩ পৌরসভায় আগাম নির্বাচনী নির্বাচনী হাওয়া

মোঃ হাযদার আলী, রাজশাহী: রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে আগামী ডিসেম্বর মাসে ১৩টি পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
ইসির একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ইউপি রয়েছে ৪ হাজার ৫৭১টি। এসব আসনে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ মার্চ থেকে ৪ জুনের মধ্যে কয়েক ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে সবগুলোর মেয়াদই প্রায় শেষের দিকে। নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে শূন্য আসনগুলোতে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধি রয়েছে। তাই আগামী বছরের মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে কয়েক ধাপে এসব আসনে সাধারণ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।
এছাড়া অপসারণ, পদত্যাগ, মৃত্যুসহ বিভিন্ন কারণে ইতোমধ্যে শূন্য হওয়া ইউপি আসনের সংখ্যা প্রায় ৫০০। তাই এসব আসনে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উপনির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে ইসি।
অন্যদিকে পৌরসভা রয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক। এগুলোতে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। ফলে এগুলোর মেয়াদও প্রায় শেষের দিকে। এছাড়া স্থগিত, অপসারণ, পদত্যাগ, মৃত্যুসহ বিভিন্ন করণে ইতোমধ্যে শূন্য পৌরসভা আসন রয়েছে ১৮৭টি। তাই চলতি বছরের অক্টোবর থেকেই শূন্য হওয়া পৌরসভাগুলোতে উপনির্বাচন ও সাধারণ নির্বাচন শুরু করা হবে।
পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগেই তফিসিল ঘোষণা করতে হয়। তাই মাঠ পর্যায় থেকে তালিকা সংগ্রহ করা, সীমানাসংক্রান্ত জটিলতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা খতিয়ে দেখার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নির্বাচন আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন সূত্র। এর পর থেকে প্রার্থীদের ব্যাপক আনাগোনা শুরু হয়েছে।
রাজশাহী জেলার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট ও গোদাগাড়ী বাঘা উপজেলার আড়ানী, তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা ও তানোর, মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট, বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর ও ভবানীগঞ্জ, চারঘাট, দুর্গাপুর, পুঠিয়া এবং পবা উপজেলার কাটাখালী ও নওহাটা পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শুধুমাত্রা বাঘা উপজেলা নির্বাচনে পরে হওয়ায় এ দফায় নির্বাচন হচ্ছে না। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দিবসকে লক্ষ্যে রেখে ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। জানা গেছে, এগুলোয় সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসেবে চলতি বছরের শেষের দিকে নির্বাচন হওয়ার কথা। আর সময়ের অঙ্ক কষেই নেতারা মাঠে নেমেছেন। পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন নিতে বেশ কয়েক মাস ধরে বড় দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা লবিং ও গ্রুপিং শুরু করেছেন। জেলা ও কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের আশীর্বাদ পেতে তারা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন। আর স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন পেতে বাড়িয়েছেন সাংগঠনিক তৎপরতা। সর্বশেষ ইদ শুভেচ্ছা জানিয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে অনেকে আলোচনায় এসেছেন। ফলে রাজশাহীর পৌরসভাগুলোতে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা জানান, আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। দলীয়ভাবে যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে, নেতাকর্মীরা তাদের পাশেই থাকবেন।
পৌরসভা নির্বাচন সম্পর্কে রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার জানান, আগামী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না তা দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত দেবে। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপি নেতারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা গেছে, গোদাগাড়ী পৌরসভায় গোদাগাড়ী পৌরসভার আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, গোদাগাড়ী পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি, মাটিকাটা আর্দশ মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আকবর আলী, গোদাগাড়ী পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রবিউল আলম, বর্তমান মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু এবং গোদাগাড়ী সরকারী স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যাক্ষ মোঃ এনামুল হক।  গোদাগাড়ী পৌরসভা বিএনপির সিনিয়ার সহ-সভাপতি  পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে  কুরিয়ার সার্ভিসের মালিক গোলাম কিবরিয়া রুলু, তিন বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর সাবেক  যুবদল নেতা মোঃ মাহাবুবুর রহমান বিপ্লব, জামায়াতের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও জামায়াত নেতা আব্দুল খালেকের নাম  শোনা যাচ্ছে।  গোদাগাড়ী উপজেলার অপর পৌরসভা কাঁকনহাটের বর্তমান মেয়র কাঁকনহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ মাষ্টার  আবারও নির্বাচন করবেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন যুবলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ হিল কাফি। আর বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউল হক জিয়া  ও হাফিজুর রহমান।
তানোরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ইমরুল হক এবং আবুল বাশার সুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজান। তানোরের অপর পৌরসভা মুণ্ডমালার বর্তমান মেয়র তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী আর নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন গোলাম মোস্তফা, সাইদুর রহমান ও শরিফ খান। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোজাম্মেল হক, ফিরোজ কবির ও আতাউর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
পবা উপজেলার দুটি পৌরসভা নওহাটা ও কাটাখালি। নওহাটায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল বারী খান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল কবির রুনুর নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র মকবুল হোসেন, ওয়াদুদ হাসান পিন্টু ও মামুনুর সরকার জেড। কাটাখালি পৌরসভার বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলী আবারও মেয়র প্রার্থী। বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সিরাজুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম।
মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ, বর্তমান কাউন্সিলর রুস্তম আলী প্রামাণিক এবং শাহিনুর আলমের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কেবল সাবেক মেয়র আলাউদ্দিন আলোর নাম শোনা যাচ্ছে।
বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবদুল মালেক ও মামুন অর রশিদ মামুন। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মেয়র আবদুর রাজ্জাক প্রামাণিক ও শাহিনুর রহমান শাহিন। বাগমারা উপজেলার অপর পৌরসভা তাহেরপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে কেবল বর্তমান মেয়র আবুল কালাম আজাদের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মেয়র আবু নাঈম শামসুর রহমান মিন্টু।
দুর্গাপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান মেয়র তোফাজ্জল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান ফিরোজ, আবদুর রাজ্জাক ও আজাহার আলী। বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জার্জিস হোসেন সোহেল ও সাইদুর রহমান মন্টু।
পুঠিয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র রবিউল ইসলাম রবি, খালেদ হোসেন লালন, হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ইব্রাহিম সরকারের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে মামুন খান, আসাদুল হক আসাদ ও বাবুল হোসেন আলোচনায় রয়েছেন।
চারঘাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মধ্যে একরামুল হক ও কাজী মাহমুদুল ইসলাম মামুনের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া বিএনপির একমাত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র জাকিরুল ইসলাম বিকুল মাঠে রয়েছেন।
বাঘা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী, মাসুদ রানা তিলু, শাহিনুর রহমান পিন্টু ও ওয়াহেদ সাদেক কবির। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র আবদুর রাজ্জাক ও কামাল হোসেন। আড়ানি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র মুক্তার আলী, শহীদুজ্জামান শহীদ, মতিউর রহমান মতি এবং রিবন আহম্মেদ বাপ্পী মাঠে রয়েছেন। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম ও সুজাত আহমেদ তুফান। উল্লেখ্য ২০১৫ ইং সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত  প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন ছিল বেশ উৎসবমুখর এবারও তেমনটা আশা করছেন সাধারণ ভোটারগণ।

সর্বশেষ সংবাদ