বড় বৌয়ের তালাক দিতে ছোট বৌকে ৭ টুকরো করে জুয়েল

প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে দ্বিতীয় স্ত্রীর বোনের মাধ্যমে পরিবারের কাছে মোহরানা বাবদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন স্বামী। পরিবার ওই টাকা দিতে অস্বীকার করায় দ্বিতীয় স্ত্রী রেহনাকে নির্মমভাবে হত্যা করে মরদেহ সাত টুকরো করেন স্বামী জুয়েল।

এ ঘটনায় জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে, জয়দেবপুর থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত রেহানার ভাই হোসেন। ঢাকার গাজীপুরে স্বামীর হাতে খুন হওয়া ওই গৃহবধূ রেহানা আক্তারের বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পশ্চিম মেরুয়াখলা গ্রামে। চাঞ্চল্যকর ওই খুনের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বামী জুয়েলের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগে রেহানার স্বামী জুয়েল সলুকাবাদ ইউনিয়নের কাজীরগাঁও গ্রামের তাছলিমা আক্তারকে বিয়ে করেন। তিনি এক মেয়ের জননী। তাকে তালাক দেয়ার জন্য দ্বিতীয় স্ত্রী রেহানার বড় বোন নূরজাহানের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা দিতে না পারায় রেহানাকে নির্মমভাবে হত্যা করে মরদেহ সাত টুকরো করেন জুয়েল।

সোমবার (০৮ মার্চ) দুপুরে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ধনপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মেরুয়া খলা গ্রামে রেহানাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রেহানার মরদেহের অপেক্ষা করছেন পরিবারের স্বজনরা। পশ্চিম মেরুয়াখলা গ্রামের রাজমিস্ত্রী আব্দুল মালেক ও দিলারা বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে যমজ ভাই হোসেন শহীদ ও রেহানা আক্তার।

স্বজনরা জানায়, একই উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের কাঁচিরগাতি গ্রামের জুয়েলের বড় ভাইয়ের কাছে রেহানার বড় বোন নূরজাহানের বিয়ে হয় কয়েক বছর আগে। আত্মীয়তার সূত্র ধরে এক সন্তানের জনক তালতো ভাই জুয়েল রেহানাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো। বাড়িতে আসা যাওয়ার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবারের লোকজন তাদেরকে এ সম্পর্ক থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানায়। কিন্তু পরিবারের লোকজনের কথা না শুনে রেহানা ও জুয়েল সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকে। তারা মোবাইলে নিয়মিত একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো।

আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে নিজ বাড়িতে মেরুয়াখলায় তারা দেখা স্বাক্ষাৎ করতো। ৮ মাস আগে রেহানা এক সন্তানের জনক জুয়েলের হাত ধরে পালিয়ে যায়। পরে তারা জানায় ঢাকায় বিয়ে করে গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছে তারা।

রেহানার বড় বোন নূরজাহান বেগম বলেন, বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে এ পথ থেকে ফিরে আসার কথা বলায় পরিবারের সঙ্গে তেমন কোনও যোগাযোগ রাখেনি তারা। এর আগে জুয়েল তাকে ফোন করে বলে, বড় বউকে তালাক দেয়ার জন্য মোহরানা বাবদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর ওই টাকার ব্যবস্থা যেন তারা করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে রেহানার বাবা মায়ের সঙ্গে আলাপ করতে বলে জুয়েল। রেহানার বাবা মা জুয়েলের দাবীকৃত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি রেহানা ও তার স্বামী জুয়েল।

ধনপুর আছমত আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও রেহানার বান্ধবী রুবিনা আক্তার জানায়, রেহানা স্কুল জীবনে খুব ভালো ছাত্রী ছিল। পরিবারের অভাব অনটন এবং সম্পর্কের কারণে অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর স্বেচ্ছায় লেখাপড়া বাদ দিয়ে দেয়। সে খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। কারও সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করত না।

বান্ধবী লিপি আক্তার জানায়, রেহানা দেখতে সুন্দর হওয়ায় তার প্রতি আকৃষ্ট হয় তালতো ভাই জুয়েল। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

রেহানার দাদী ফুলবানু বলেন, জুয়েল মদ, গাজা খেতো। উগ্র মেজাজি প্রতারক প্রকৃতির ছেলে। প্রায়ই সে রেহানাকে মারধোর করতো।

পলাশ হাজেরা খাতুন মুসলিম টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী রেহানার ফুফাতো ভাই জাকির হোসেন বলেন, তার সহজ সরল বোনকে নানান প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করেছে। সে আগে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে বিয়ে করেছে।

রেহানার  ফুফু কল্পনা খাতুন জানান, জুয়েল বখাটে প্রকৃতির ছেলে। সুন্দরী মেয়ে দেখলে সে উত্যক্ত করতো।

প্রতিবেশী সাফিয়া খাতুন বলেন, রেহানার বাবা একজন রাজমিস্ত্রী। তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসার চালান। রেহানাকে নিয়ে তার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। জুয়েল তার স্বপ্নের সমাধি করেছেন।

অভিযুক্ত জুয়েলের বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা জড়িত থাকলে তার ফাঁসি হওয়া দরকার। আমি তার শাস্তি চাই। আর জড়িত না থাকলে খালাস পাওয়া উচিৎ।

বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুরঞ্জিত তালুকদার বলেন, ঘটনাস্থল গাজীপুর সেখানে সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এখানে বিশেষ কিছু করার নেই।

সর্বশেষ সংবাদ