নারীর গোপন স্বাস্থ্য সমস্যা ও সমাধান

মূলত মুখের ব্রণ নিয়েই আমরা ব্যস্ত থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন, হাতের তালু এবং পায়ের তলা ছাড়া আর সব জায়গাতেই হতে পারে ব্রণ। এমনকি নারীর গোপনাঙ্গেও হতে পারে ব্রণ। বিব্রতকর এই সমস্যাটি হতে পারে মাসের যে কোনো সময়েই।

ভ্যাজাইনাল অ্যাকনি হতে পারে ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া জমে এই এলাকার ত্বকের রোমকূপ বন্ধ হয়ে যাবার কারণে। সাধারণত ব্রণের সমস্যা দূর করতে আপনি যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করেন তা এ ক্ষেত্রে কাজ নাও করতে পারে। আর ডাক্তারের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতেও অনেকেই অনিচ্ছুক। আপনাদের জন্যই রইলো কিছু উপায় যাতে এই সমস্যাটি দূর করা যায়।

  • হরমোনাল ইমব্যালেন্স

মুখের ত্বকের মতোই হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে গোপনাঙ্গেও ব্রণ হতে পারে, এর পাশাপাশি দায়ী হতে পারে ব্যাকটেরিয়া। টেস্টোস্টেরোন বা ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যের কারণে এ ধরণের অ্যাকনি দেখা দিতে পারে। এর পাশাপাশি অন্য কোনো মেয়েলী সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে নিরাপদ থাকাই ভালো। এর পাশাপাশি কপি জাতীয় খাবার, অর্গানিক সয়া, উদ্ভিজ্জ ফ্যাট আপনার খাদ্যভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করুন।

  • গোপনাঙ্গে হেয়ার রিমুভার ব্যবহার করবেন না

হেয়ার রিমুভার বা রেজর ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে পারেন। অনেকের কাছেই তা অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। তবে রেজরের কারণেও অনেক সময়ে ব্রণ হয়, নিয়মিত হেয়ার রিমুভালের ফলে ত্বকের নিচে রোম আটকে গিয়ে ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যা তৈরি করতে পারে। এর থেকে দেখা দিতে পারেন ইনফেকশনও।

  • আঁটসাঁট অন্তর্বাস পরিহার করুন

যদিও আঁটসাঁট অন্তর্বাসে আপনার ফিগার ভালো দেখায়, কিন্তু এগুলোর কারণে হতে পারে ব্রণ। রাতে ঘুমানোর সময়ে অন্তর্বাস ছাড়াই থাকুন। এতে আপনার গোপনাঙ্গে যথেষ্ট বাতাস চলাচল করবে এবং ব্যাকটেরিয়া দূর হবে।

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন

গোসলের ক্ষেত্রে সবাই নিয়ম মেনে চলেন। তবে গোপনাঙ্গের একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরী। অরিগানো বা টি-ট্রি অয়েল আছে এমন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ ব্যবহার করতে পারেন এক্ষেত্রে।

  • অন্তর্বাস পরে ঘুমাবেন না

এ ধরণের ব্রণ দূর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অন্তর্বাস পরেনা ঘুমানো। আমাদের শরীর ঘুমের মাঝেই বেশি ঘামে। এ সময়ে ব্রণ দেখা দেয় বেশি। পাতলা কাপড় পরে ঘুমালে ত্বক আরাম পাবে, ব্রণের সমস্যা কম হবে।

  • কিছু সহজলভ্য ওষুধ ব্যবহার করুন

ঘরোয়া প্রতিকারে কাজ না হলে আপনি কিছু ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। মুখে ব্যবহারের কিছু ব্রণের ওষুধ আপনি এক্ষেত্রেও নিশ্চিন্তে প্রয়োগ করতে পারেন। নিশ্চিত হতে চাইলে কথা বলুন ডাক্তারের সাথে।

  • গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধের কারণ ও প্রতিকার
গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ হওয়ার সমস্যাটা অনেকেরই আছে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বেশী এবং এটা এতই বিব্রতকর একটি সমস্যা যে কাউকে বলাও যায় না। আবার সহ্যও করা যায় না। আর এমন সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবার কথা তো কোন নারী চিন্তাও করেন না। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার স্বাভাবিক যৌন জীবনে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ।

প্রতিটি মানুষের শরীরে স্বাভাবিক একটি ঘ্রাণ আছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় খুব সুক্ষ্মভাবে ঘ্রাণটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। এছাড়াও মানুষের বগল, পায়ের পাতা কিংবা শরীরের অন্যান্য ভাঁজের জায়গায় দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। গোপন অঙ্গটিও বাদ যায় না। তবে গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ হবার পেছনে আছে বেশ কিছু কারণ। যেমন,
*আপনার যদি স্বাস্থ্য ভালো হয়ে থাকে, তাহলে শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ঘাম জমে যায়। সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় ও দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
*এছাড়া গোপন অঙ্গে ইস্ট বা ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন থেকে হতে পারে খুবই বাজে দুর্গন্ধ।
*গোপন অঙ্গ সঠিক ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখা, পিরিয়ডের সময় এক প্যাড দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা ইত্যাদি কারণেও জন্ম নেয় দুর্গন্ধ।
*এছাড়া খুব বেশী টাইট পোশাক দীর্ঘসময় পরিধান করলেও ঘামে দুর্গন্ধ হতে পারে। অনেকের প্রস্রাব লিক করার সমস্যা থাকে। সে কারণেও গন্ধ হতে পারে।

এই দুর্গন্ধ দূর করার চেষ্টা করেও বারবার বিফল হয়েছেন? আসুন জেনে নেই শরীরের স্পর্শ কাতর সেই অংশের দুর্গন্ধ দূর করার কার্যকরী উপায়।
**প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো পরিষ্কার পরিচ্ছনতা রক্ষা করা। নিজের গোপন অঙ্গের যত্ন খুব ভালোভাবে নিন। সর্বদা পরিষ্কার থাকুন। ভালো অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন।
**বাজারে গোপন অঙ্গ পরিষ্কার করার জন্য ভালো কোম্পানির বিশেষ ধরণের সাবান ও বডি ওয়াশ কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করুন।
**গোপন অঙ্গে পাউডার ব্যবহার করতে হলে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও সুগন্ধী পাউডার ব্যবহার করুন। তবে দীর্ঘসময় একই স্থানে পাউডার দিয়ে রাখবেন না।
**নিজের প্যানটি পরার আগে পারফিউম ছিটিয়ে নিন।
**বেশী টাইট পরবেন না পোশাক। গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ হলে ঢিলেঢালা পোশাক পরাই সবচাইতে ভালো।
**ভালো করে খেয়াল করুন। চুইয়ে চুইয়ে প্রশ্রাব এসে কি প্যানটি ভিজে যায়? এমন সমস্যা অনেক নারীরই থাকে। যদি তা হয় তো অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান।
**ভালো কোম্পানির স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করুন। পিরিয়ডের সময় বাড়তি পরিছন্ন থাকুন।
**গোপন অঙ্গ পরিষ্কার করতে উষ্ণ পানি ব্যবহার করুন। যতবার টয়লেট ব্যবহার করবেন, প্রতিবার ভালো করে সাবান দিয়ে পরিছন্ন হোন।
এসবের পরেও যদি গোপন গঙ্গের গন্ধ দূর করতে না পারেন, অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান। এটা হতে পারে অন্য কোন শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত! লজ্জায় নিজের শরীরকে অবহেলা করবেন না। দেশে অনেক ভালো ভালো গাইনি ডাক্তার আছেন। অবশ্যই তাদের পরামর্শ নিন।

  • গোপন অঙ্গে চুলকানির সমস্যা ও প্রতিকার
গোপন অঙ্গে চুলকানির সমস্যা নারী জীবনের অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ঘটনা। বেশিরভাগ নারীই নজ্জায় এই বিষয়টি চেপে যান কিংবা মোটেও গুরুত্ব দেন না। তাঁরা জানেন না যে বেশিরভাগ নারীকেই জীবনে কখনো না কখনো এই সমস্যাটির মোকাবেলা করতেই হয় এবং এটি আসলে রোগের লক্ষণ! একটু খানি সচেতনতাই আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেক গুলো শারীরিক সমস্যা থেকে। লজ্জা নয়, সচেততা জরুরী। চলুন, আজ জানি গোপন অঙ্গে চুলকানির কারণ, প্রতিকার ও আপনার করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত।

যেসব কারণে হতে পারে চুলকানি

সাধারণ যেসব কারণে গোপন অঙ্গে চুলকানি হতে পারে সেগুলো হচ্ছে অ্যালার্জি। টাইট কাপড় পরিধান, কোন সাবান বা পারফিউমের রিঅ্যাকশন, ঘামে ভেজা কাপড় দীর্ঘ সময় পরে থাকা ইত্যাদি। এছাড়াও ইস্ট ইনফেকশন বা ব্যাকটেরিয়ার কারণেও হতে পারে এই চুলকানি।হতে পারে হরমোনের সমস্যা বা কোন ত্বকের রোগের কারণেও। মেনোপজের পরও গোপন অঙ্গে হতে পারে এমন চুলকানি। গোপন অঙ্গ যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পরও যদি প্রতিদিন ঘনঘন চুলকানি হতে থাকে যা মোটেও স্বাভাবিক নয়, তাহলে আপনার উচিত এখনোই সচেতন হয়ে যাওয়া।
কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে?
যদি গোপন অঙ্গে গন্ধ ও চুলকানির উপস্থিতি একত্রে টের পান, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই উত্তম। পশ্চাৎ দেশের মত যোনিতেও অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকটেরিয়া থাকে। কিন্তু খারাপ ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ যখন বাড়তে থাকে তখন বাজে গন্ধ ও জ্বালাপোড়া হতে থাকে, এটা একটি রোগের লক্ষণ যাকে বলে bacterial vaginosis। অন্যদিকে ইস্ট ইনফেকশনের কারণে যদি চুলকানি হয়ে থাকে, তাহলে চুলকানির সাথে গন্ধ থাকতে পারে, থাকবে ঘন সাদা স্রাব। ইস্ট ইনফেকশন অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। যৌন সম্পর্ক, অ্যান্টি বায়োটিক খাওয়া, এমনই দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণেও হতে পারে এই সমস্যাটি। এগুলো সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে তো যাবেনই, চুলকানির সাথে যদি প্রস্রাব ত্যাগেও কষ্ট হয় বা যৌন মিলনে ব্যথা অনুভব করেন, তাহলেও দেরি না করে দ্রুত যাবেন ডাক্তারের কাছে।
এছাড়াও ঘরে যা করতে পারেন১) সর্বদা বিশেষ অঙ্গটি পরিষ্কার রাখবেন। অন্যদের চাইতে একটু বেশিই যত্ন করবেন। প্রত্যেকবার টয়লেটের কাজ সারার পর উষ্ণ পানি ও ভালো সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ভালো করে মুছে জায়গাটি শুকনো রাখবেন।২) একদম ঢিলেঢালা সুতির অন্তর্বাস পরিধান করুন। দিনে দুবার অন্তর্বাস বদলে ফেলুন। এছাড়া ঘামে ভেজা অন্তর্বাস বেশি সময় ব্যবহার করবেন না।

৩) গোপন অঙ্গের জন্য একদম মাইলড কোন সাবান বা পরিশকারক ব্যবহার করুন। নিউট্রিজেনার লিকুইড সোপ বা গন্ধ বিহীন বিদেশী সাদা ডাভ সাবান ব্যবহার করতে পারেন। এমন কিছু ব্যবহার করবেন যাতে সুগন্ধী নেই।

৪)মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাবেন। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারও কম খাবেন। ইস্ট ইকফেকশন হয়ে থাকলে এতে অনেকটাই কাজ দেবে।

৫) রাতের বেলা অন্তর্বাস পরে ঘুমাবেন না। বিশেষ করে গরমের দিনে।

৬)গোপন অঙ্গে পাউডার ব্যবহারের অভ্যাস থাকলে বেবি পাউডার ব্যবহার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ