ইভ্যালির গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের বিষয়ে যে নির্দেশনা দিলেন হাইকোর্ট

দেশের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে অর্থ ফেরতের জন্য আগামী ছয় মাস কোনো জোরাজুরি না করতে গ্রাহকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে কোনো গ্রাহক চাইলে পাওনার কথা বোর্ডের কাছে বা আদালতের জানাতে পারবেন। ইভ্যালি পরিচালনার জন্য বোর্ড গঠন সংক্রান্ত লিখিত আদেশে এ কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১০ পৃষ্ঠার লিখিত আদেশ প্রকাশ করেন। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আলোচনায় থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি দেখভাল করতে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশে এমন নির্দেশনা এসেছে। এর আগে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের কোম্পানি কোর্ট ১৮ অক্টোবর ওই বোর্ড সদস্যদের নাম ঘোষণা করে আদেশ দেন। আদেশ অনুসারে পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অপর সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. রেজাউল আহসান (স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগ), আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব (ওএসডি) মাহবুব কবির। মাহবুব কবিরকে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আদালত। গত মে মাসে ইভ্যালিতে ইলেকট্রনিকস পণ্য অর্ডারের পর অর্থ পরিশোধ করে পণ্য ও টাকা না পেয়ে কোম্পানিটির অবসায়ন চেয়ে গ্রাহক ফরহাদ হোসেন গত ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন। এতে ইভ্যালি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বোর্ড গঠনের আরজিও জানানো হয়। এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক আদেশে ১২ অক্টোবরের মধ্যে ইভ্যালির নথিপত্র আদালতে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী নথি দাখিল করা হয়। সে আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ১১ অক্টোবর ইভ্যালির সব নথি হাইকোর্টে দাখিল করে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ। প্রসঙ্গত, ইভ্যালিতে পণ্য অর্ডার করার পাঁচ মাস পরও তা বুঝে না পাওয়ায় পর এক গ্রাহকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব ধরনের সম্পদ বিক্রি এবং হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় নথি তলবের আদেশ দেন বলে জানান আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। ২২ সেপ্টেম্বর আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানিয়েছিলেন, আবেদনকারী ইভ্যালি অনলাইন শপিংমলে মে মাসে একটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের অর্ডার করেন। অর্ডারের সময় তিনি মোবাইল ফোন ভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবার মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করেছেন। এরপর কোম্পানিটি অনলাইনে তাকে একটি পণ্য কেনার রশিদও দিয়েছে। কিন্তু এতদিনেও তারা পণ্যটি বুঝিয়ে দেয়নি। আবেদনকারী যোগাযোগ করার পর তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু পণ্যটি দেয়নি কিংবা টাকাও ফেরত দেয়নি ইভ্যালি। যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি আবেদনকারী। তাই তিনি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। আবেদনে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আবেদনটি অ্যাডমিট করেন। এছাড়া আদেশে ইভ্যালির যত সম্পদ রয়েছে, সেটা যেন বিক্রি অথবা হস্তান্তর না করা যায়। আদালত একটি নোটিশ ইস্যু করেন, কেন ইভ্যালিকে অবসায়ন করা হবে না। আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে ইভ্যালি লিমিটেড, রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-ক্যাব অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বেসিস, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে। প্রসঙ্গত, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তারা কারাগারে আছেন। প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ