হরিণাকুন্ডুতে ক্রমেই বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা!

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ-ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে ক্রমেই বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে চলতি বছরের ৩ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত উপজেলায় আত্মহত্যা করেছেন ৩১জন। এর আগের বছরের তুলনায় এ সংখ্যা দ্বিগুণ। ২০২০ সালে উপজেলায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। গত বছরে আত্মহত্যা করা ৩১জনের মধ্যে ১৬জন নারী ও ১৫জন পুরুষ। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর পক্ষে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আত্মহননকারী নারীদের বয়স ১৪ বছর থেকে শুরু করে ৪৬বছর এবং পুরুষদের ১৭ বছর থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত। এসব নারী-পুরুষরা অধিকাংশই নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। থানা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়াদের অধিকাংশের জীবনে ছিলো না কোনো শিক্ষার আলো। এর সাথে রয়েছে পারিবারিক অস্বচ্ছলতাও। একদিকে সচেতনতার অভাব অন্যদিকে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এসব পরিবারে রয়েছে নানা অশান্তি। ফলে বিষাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে এসব পরিবারের সদস্যরা। আবার কম বয়সী নারীদের মধ্যে অতি আবেগের কারণেও ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা। গত ২৮ জানুয়ারি উপজেলার হামিরহাটি গ্রামে লিজা খাতুন নামে ১৯ বছর বয়সের এক নারী গলাই ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেণ। মাত্র সাত মাস আগে তার বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ের পর সুখে শান্তিতেই চলছিলো তাদের সংসার। স্বামী-সংসারের প্রতিও ছিলো তার দরদ। নিজের বাবার কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বেকার স্বামীর ব্যবসার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি। তবে ওই নারী সবসময় স্বামীকে ঘরমুখী দেখতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজন ও প্রতিবেশিরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই মনোমালিন্য দেখা দিতো। ঘটনার দিন তার স্বামী জেলা শহরে যেতে চাইলে এ নিয়েও তাদের মধ্যে মান-আভিমান দেখা দেয়। পরে স্বামী বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই তিনি আত্মহত্যা করেণ। গত ২ ফেব্রয়ারি উপজেলার তাহেরহুদা গ্রামে লাভলি খাতুন নামে ৪৬ বছর বয়সের এক নারী বিষ পানে আত্মহত্যা করেণ। ওই নারীর স্বামী, সন্তান, নাতি নাতনি সবই রয়েছে। স্বামী পরিত্যক্ত মেয়েকে নিয়ে মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগে তিনি আত্মহত্যা করেণ। আর ৩ ফেব্রয়ারি তিন মাস বয়সের একমাত্র শিশু সন্তানকে রেখে গলাই ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেণ মনিকা খাতুন নামে ১৯ বছর বয়সের আরও এক নারী। স্বামীর প্রতি অতি আবেগে তুচ্ছ ঘটনায় এই আত্মহত্যার ঘটনা বলে দাবি পরিবারের। গত ১৭ জুলাই অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনতে না পেরে বাবা-মার প্রতি অভিমানে আত্মহত্যা করেণ বাহাদুরপুর গ্রামের ১৭ বছর বয়সের কিশোর মেহেদি হাসান। আত্মহত্যা প্রতিরোধে চাই সামাজিক সচেতনতা শিক্ষার অভাব, আবেগ প্রবণতা, বাল্য বিবাহ, অর্থনৈতিক দৈন্যতাসহ নানা কারণে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেয়েদেরকে কর্মমুখী করে তোলা এবং পুরুষদের মধ্যে সামাজিক সচেনতার মাধ্যমে এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব বলেও মনে করেণ এই মানবাধিকার কর্মী। হরিণাকুন্ডু থানার ওসি আবদুর রহিম মোল্লা বলেন, প্রতিটি আত্মহত্যার পরেই ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা থানায় অপমূত্যু মামলা করেণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারণ উদঘাটনের জন্য পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পারিবারিক অশান্তি, আবেগ প্রবণতা, অর্থনৈতিক সমস্যা, শিক্ষার অভাব, অল্প বয়সে বিয়ের পর শশুর-শাশুড়ির সাথে বনিবনা না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এজন্য গ্রামে গ্রামে সচেনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক নানা প্রোগাম করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝেও এর কুফল নিয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর বাল্য বিবাহ নিরোধেও চলছে কার্যক্রম। নারীদেরকেও কর্মমূখী করে তুলতে কাজ করছে প্রশাসন।

সর্বশেষ সংবাদ