‘কুড়িগ্রামে বানভাসিদের আর্তনাদ ,অহন আমাগো থাকবার জায়গা নাই

‘সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম।। বাপুরে নদীর পানি আইসা বাড়িঘর তলায়া গেল। অহন আমাগো থাকবার জায়গা নাই।কুনহানে যে যাই,দিশা পাইছি না – গলা সমান পানিতে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বললেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামের ময়না (৩৮)। শাশুড়ি, দুই সন্তান আর স্বামী বসে আছেন নৌকায়। আর ময়না ঘর থেকে পানি ভেঙে জ্বালানি কাঠ ও আসবাবপত্র টেনে টেনে নৌকায় তুলে দিচ্ছেন। সরজমিনে এই চরে এসে দেখা গেছে মানুষের ভোগান্তির চিত্র। প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে বুক সমান পানি। দরজা-জানালাও প্রায় রুদ্ধ হয়ে গেছে। পানির স্রোতে ঘরবাড়ি ভেঙে যেতে পারে এই ভয়ে তারা নৌকায় অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ চলে যাচ্ছেন আত্মীয়স্বজনদের উঁচু বাড়িতে। যাদের পরিচিতজন নেই তারাই আছেন দুশ্চিন্তায়। পানি বাড়ায় ঘরবাড়িতে পানি ওঠে তারা বাড়িঘর ছাড়তে শুরু করেছেন। এই চরের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, ‘নদী ভাঙনের পর ৪ মাস আগে এই হানে উঠছি। নিম্ন জায়গা। মূহূর্তে পানিত তলায়া গেল। অহন আমাগো থাকবার জায়গা নাই। কুনহানে যে যাই। দিশা পাইছি না।’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার ৬টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক গ্রামে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্য সংকট। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, সদর উপজেলার পোড়ারচর গ্রামের দেড়শ পরিবার শুক্রবার বাড়িঘর সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই এলাকার প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।পার্শ্ববর্তী ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান জানান, ধরলার অববাহিকায় আমার ইউনিয়নে ২৫টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে এসব গ্রামের প্রায় ১২৭৩ পরিবারের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পাঙ্গার চর গ্রামে দুইটি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। জেলার রৌমারী উপজেলায় আবারো পানি বৃদ্ধি হওয়ায় এ অঞ্চলের ৩টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে রৌমারী ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেল জানিয়েছেন। দুর্গতদের জন্য ৬ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রশীদ জানান, হঠাৎ করে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার নিম্নাঞ্চাল প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলায় প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলাপর্যায়ে ২০ লাখ টাকা ও ৪০০ মেট্রিক টন খাবার মজুদ রয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ