লালমনিরহাটে কোটি টাকার কমলা-মালটা উৎপাদন

জেলা প্রতিনিধি,লালমনিরহাট-উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের কমলা ও মাল্টা চাষে অভাবনীয় সাফল্যে কোটি টাকারও বেশি ফল উৎপাদন হয়েছে। বারি মালটা-১, দার্জিলিং কমলা, চায়না কমলাসহ এসব ফলের ব্যাবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে শত শত মানুষের। স্বল্পমুল্যে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ ও উচ্চভিলাসী ভিনদেশী এসব ফল হাতের নাগালে কিনতে পারছেন এখানকার মানুষ। জেলার সদর উপজেলার হাড়িভাঙ্গা, মহেন্দ্রনগর, আদিতমারী, হাতিবান্ধা, পাটগ্রামে এসব কমলা ও মাল্টা বাগান তৈরি হয়েছে।
এ বছর জেলায় এসব ফলের ভাল ফলন হওয়ায় কমছে আমদানি নির্ভরতা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে রংপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব মাল্টা ও কমলা বিক্রি হচ্ছে। ন্যাযমূল্য ও ভাল বাজার পাওয়ায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করছেন কমলা ও মাল্টা বাগান মালিকরা।
নার্সারি ব্যবসায়ী একরামুল হক। গাছের প্রতি প্রেম থেকে নার্সারি ব্যবসা; একপর্যায়ে জমি লিজ নিয়ে ফল ফলাদির বাগান করতে শুরু করেন। লালমনিরহাটের হাড়িভাঙায় বিমানবাহীনীর ৪ একর যায়গা লিজ নিয়ে দুই হাজারেরো বেশি মাল্টা ও ৫ শো কমলা গাছ লাগান ২০১৮ সালে। তিন বছরের মাথায় গাছে ফল আসায় গত বছর ৭০ লাখেরও বেশি টাকার ব্যবসা করেছেন তিনি। সমতল ভূমিতে সফল ফল বাগান করে তাক লাগিয়েছেন তিনি। এছাড়াও কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীর বিভিন্ন স্থানে মোট ৮০ একর জায়গা জুড়ে ফল বাগান গড়ে তোলেন। কয়েক প্রজাতির কমলা, মালটা, ড্রাগন সহ বিভিন্ন ফলের বাগানে শূন্য হাতে আজ কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। এতে দু শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
একরামুলের মতো জেলার আদিতমারী, হাতিবান্ধা, পাটগ্রামেও গড়ে উঠেছে মালটা ও কমলা বাগান। দৃষ্টিনন্দন বাগানগুলোতে ফুসরত পেলেই পরিবার সহ ঘুরতে আসছেন অনেকেই। ভিনদেশী উচ্চভিলাসী এসব ফলের সারি সারি গাছ ও গাছের রঙ্গীন ফল দেখে অভিভুত হচ্ছেন তারা।
বাগানগুলোতে কয়েকশো মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জেলায় মালটা ও কমলার নতুন বাজার তৈরি হয়েছে। খুচরা ও পাইকারীভাবে বেচাকেনায় প্রতিবছর এসব বাগান থেকে কোটি টাকারও বেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে। বাজার ভাল হওয়ায় ব্যবসার পরিধিও দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন মৌসুমি এ ব্যবসায়।
মাল্টা বাগান ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষিকা সেতু বেগম জানান, লালমনিরহাটের মত যায়গায় এমন বাগান সত্যি প্রশংসার। আমাদের মনে হচ্ছে ভুটানে বেড়াতে এসেছে। খুবই ভাল লাগছে। এমন বাগান আরও হওয়া দরকার।
বাগান মালিক একরামুল হক বলেন, ছোট থেকেই গাছের প্রতি ভালবাসা ছিলো। প্রথমে নার্সারি ব্যবসা পরে ফল বাগান। এখন অনেকটা লাভবান হচ্ছি। দিন দিন বাগান বাড়ানোর চেস্টা করছি। এতে লাভের পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, জেলায় বিভিন  প্রজাতির কমলা ও মালটার বাগান থেকে ভাল উৎপাদন হয়েছে। বাজারে ফলের চাহিদা থাকায় দিন দিন নতুন বাগান তৈরির উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। ফলে ব্যবসার পরিধিও বাড়ছে। আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করছি যাতে আরও উদ্যোক্তা তৈরি হয়।

সর্বশেষ সংবাদ