তানোরে আশা এনজিও গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা নিয়ে উধাও

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে আশা এনজিওর এক মাঠ কর্মী গ্রাহকের লাখলাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উপজেলার মুন্ডুমালা   আশা এনজি শাখার অর্ধশত গ্রাহকের পরিশোধিত ঋণ ও সঞ্চয়ের প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন মাঠকর্মী গোলাম রাব্বনী। তিনি গত বৃহস্পতিবার মুন্ডুমালা শাখা থেকে উধাও হয়েছেন।  গত রোববার ঘটনা জানাজানি হলে মুন্ডুমালা শাখার কয়েক হাজার গ্রাহক তাদের জমানো সঞ্চয় নিয়ে চরম আতঙ্কে পড়েছেন। অধিকাংশক্ষেত্রে  এসব সদস্যরা শাখায় এসে তাদের আমানত ঠিক আছে কিনা তা যাছাই বাছাই করছেন। অনেকে আবার সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলনে হুড়োহুড়ি শুরু করেছেন।এতে হাজার হাজার গ্রাহকের মাঝে এনজিও আশার চরম ভাবমূর্তি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় গত রবিবার  আশা মুন্ডুমালা শাখার ম্যানেজার সিহাব উদ্দিন বাদি হয়ে  থানায় মাঠকর্মী গোলাম রাব্বানী বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এদিকে একইদিন রাজশাহী জেলা আশা অফিস থেকে দুইজন শাখা ম্যানেজার ও দুইজন আরএম মোট চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।গত সোমবার তদন্ত কমিটি সরেজমিন মুন্ডুমালা আশা শাখায় এসে গ্রাহকদের সঞ্চয় ও পরিশোধীত ঋণ যাচাই  বাছাই শুরু করেছেন। প্রথম দিনেই  তদন্ত কমিটি মুন্ডুমালা শাখার সদস্যদের পরিশোধীত ঋণের টাকা ও সঞ্চয় নিয়ে মাঠকর্মী অফিসে জমা দেখাইনি এমন ১২ থেকে ১৫ জনের তালিকা পেয়েছেন। তাতে পাঁচ লাখ ৫২ হাজার ৫২০ টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি সত্যতা পেয়েছেন বলে তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে গত সোমাবার আশা মুন্ডুমালা শাখায় প্রায় অর্ধশতাধিক  সদস্য এসেছিলেন তাদের আমানতের জমানো সঞ্চয় ঠিক আছেন কিনা তা জানতে। কেউ কেউ আবার এসেছিলেন সঞ্চয়ের টাকা ফেরত নিতে। উপজেলার বাধাইড় ইউপির খাড়িকল্ল্যা গ্রামের সিমা নামের এক সদস্য জানান গত এক সপ্তাহ আগে মাঠকর্মী গোলাম রাব্বানীর হাতে ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য দিয়েছেন। কিন্ত অফিসের খাতায় তা জমা হয়নি বলে তাকে জানানো হয়েছে।মুন্ডুমালা গ্রামের সাফিউল ইসলাম জানান, তিনি ৬ মাস মেয়াদী ঋণের এক লাখ টাকা মাঠকর্মীর হাতে দিয়েছেন। তবে এখন দেখছেন অফিসের খাতায় তা জমা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  এক মাঠকর্মী জানান,আশা এনজিও একটি উচুঁ মানের প্রতিষ্ঠান। এখানে সদস্যদের আমানতের টাকা খোয়া যাওয়ার কোনো সুয়োগ নাই। কিন্ত রাজশাহী জেলা ম্যানেজার আব্দুল রাজ্জাক শাখা কার্যালয়গুলোর
ম্যানেজার থেকে মাঠকর্মীদের কাছে  নানা উছিলায় অবৈধ সুবিধা নিয়ে থাকেন, নইলে বিনা দোষে তাদের নাজেহাল করেন ও তাকে বিভিন্নভাবে সন্তুষ্ট করতে না পারলেই সে কর্মীকে বদলী করে পাঠান বিভিন্ন প্রান্তে। জেলা ম্যানেজারের এমন আচারণে ক্ষিপ্ত হয়ে গোলাম রাব্বানী এমন কাজ করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জেলা ম্যানেজারকে না সরালে আবারো এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে আশার অভিযুক্ত মাঠকর্মী গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাই। এবিষয়ে আশা মুন্ডুমালা  শাখার ম্যানেজার সিহাব উদ্দিন জানান, তার ব্রাঞ্চের মাঠকর্মী গোলাম রাব্বানীকে গোদাগাড়ী উপজেলার পালপুর শাখায় বদলী করা হয়েছিল। গত ২ মার্চ তিনি এ শাখা হতে ছাড়পত্র নিয়ে বিদায় হয়েছেন। কিন্ত সেখানে তিনি যোগদান করেনি। পরে আমরা জানতে পারলাম এ শাখার অনেক সদস্যদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। তার মোবাইল ফোন  বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে রবিবার তানোর থানায় জিডি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক তার বিরুদ্ধে উঙ্খাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,মাঠকর্মী গোলাম রাব্বানীর বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত কমিটি সোমবার পর্যন্ত ১০ সদস্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে গেছে এমন সত্যতা পেয়েছেন। আমরা মাঠকর্মী গোলাম রাব্বানীর বাড়ি জেলার বাগমারা উপজেলায় খোঁজ নিয়ে তার পরিবারে সঙ্গে কথা বলেছি। টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। তবে বিষয়টি সামান্য এটা নিয়ে লেখা লেখির কিছু নেই। আর মাঠকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়া জানান, অভিযোগের ঘটনা জানা নেই, খোজ নিয়ে অভিযোগ হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন।

সর্বশেষ সংবাদ