সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তি হলো জনগণের বিশ্বাস অর্জন’-ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার

সঞ্জু রায়, নয়া দিল্লী (ভারত) থেকে:-ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তি হলো জনগণের বিশ্বাস অর্জন। কাজের স্বাধীনতা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যাই বলেন না কেন, বিষয় একটিই- সেটি হলো বিশ্বাস। ভারতের নির্বাচন কমিশন সবার কাছে আস্থাশীল। এটি একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের প্রমাণ করতে হয়েছে তবে এখনো তারা নিজেদের আরো গোছাতে কাজ করে যাচ্ছে। আর ইদানিংকালে কমিশনের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজব মোকাবেলা তবে তা তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই আমরা উত্তরণ করে যাচ্ছি।
নিউ দিল্লীর নির্বাচন ভবনে ভারত সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে সভায় বাংলাদেশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রাজীব কুমার বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে ভোট হয়েছে। সেখানে সরকারি দল কিছু জায়গায় সামান্য ভোটে পরাজিতও হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো পরাজয় নিয়ে প্রশ্ন করেনি। এটাই বিশ্বাস।’গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যা হলো প্রথমত তথ্য উন্মুক্ত করা বা প্রকাশ করা। নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য যে কোনো কার্যক্রম রাজনৈতিক দল এবং মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করতে হবে, যেন তাদের মনে কোনো সন্দেহ না থাকে।’ ‘কোনো বুথ স্থাপন কিংবা কোনো নির্বাচনী নিয়ম-নীতি জারি করতে গেলে সবাইকে নিয়ে করতে হবে। সব দলের কাছে পৌঁছাতে হবে। সংযোজন, সংশোধন, বিয়োজন সবকিছু জানাতে হবে। প্রত্যেক প্রক্রিয়া সবাইকে অবহিত করতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া যদি শতভাগ স্বচ্ছ হয় নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হবে।’
চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রশ্ন করলে রাজীব কুমার বলেন‘এই মুহূর্তে যে কোনো নির্বাচন ব্যবস্থাপকের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় যা অনেক সময় জটিলতা সৃষ্টি করে। তবে ভারতে নির্বাচন আরও প্রাণবন্ত, বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নেওয়ায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এরই মধ্যে ভোটার হেল্প লাইন অ্যাপ, ভোটার টার্ন আউট অ্যাপ, ভোটার পোর্টাল, পলিটিক্যাল পার্টি অ্যান্ড ট্র্যাকিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, বুথ অ্যাপ প্রভৃতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান সিইসি।

সভায় রাজীব কুমার বাংলাদেশের নির্বাচন কিংবা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সরাসরি কোনো কোনো কথা না বললেও তাদের নির্বাচন ব্যবস্থা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং দুর্বলতা কোথায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশে মোট ভোটারের কথা শুনে বলেন, ভারতের কোনো কোনো রাজ্যেও এর চেয়ে বেশি ভোটার আছে।
সভায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের (ডিরেক্টর জেনারেল মিডিয়া), বালা সুব্রামানিয়ান নারায়ানান , পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী, উপসচিব (পাবলিক রিলেশন্স) বাসুদেব রবি, পাবলিসিটি অফিসার পবন শরণ, নির্বাচন কমিশনের ডিরেক্টর যুবেন্দ্র সিং, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের প্রেস, ইনফরমেশন অ্যান্ড কালচার অফিসার শিলাদিত্য হালদার প্রমুখ। সভাশেষে বাংলাদেশী সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সদস্যদের ভারতে ইভিএমে ভোট প্রদান প্রক্রিয়া দেখানো হয়। এছাড়াও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে যা যা পদক্ষেপ ভারত সরকার নিয়ে থাকে তা বর্ণনা করেন ভারতের নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। বৈঠকে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের মাঝে এসময় ছিলেন জনকণ্ঠের সম্পাদক ওবায়দুল কবির মোল্লা, ডিবিসি নিউজের প্রণব সাহা, মাছরাঙা টিভির রেজওয়ানুল হক রাজা, একাত্তর টিভির শাকিল আহমেদ, নিউজ২৪ এর রাহুল রাহা, দিপক আচার্য্য, বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাজী শাহেদ, দেশ টিভি ও দৈনিক চাঁদনী বাজারের রিপোর্টার সঞ্জু রায়, যমুনা টিভির  শিবলী নোমান, ডিবিসি নিউজের সিলেট প্রতিনিধি প্রত্যুশ তালুকদার, আলোকিত বাংলাদেশের দিপক দেব, জাগো নিউজের আসিফ আজিজসহ মোট ২৮ জনের প্রতিনিধি দল।

সর্বশেষ সংবাদ