বিয়ে না করলে ট্যাক্স!

মঙ্গোলিয়াতে এক সময় আঠারো বছর বয়সে বিয়ে করা বাধ্যতামূলক ছিল। না করলে এর জন্য অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হত।

এই মঙ্গোলিয়া থেকেই কুখ্যাত তাতার গোষ্ঠীর উৎপত্তি। ইতিহাসের কুখ্যাত চেঙ্গিস খান ছিল তাতারদের রাজা। চেঙ্গিস খানের আসল নাম ছিল তিমুজিন, চেঙ্গিস খান ছিল তার পদবী।

পরাক্রমশালী মঙ্গোলিয়ানরা সময়ের প্রেক্ষিতে দুর্বল হয়ে গেলেও জাতিগত চেতনা তাদের এখনো প্রকট। এই কারণে তারা বাইরের গোষ্ঠীতে বিয়ে করে না।

এই গোঁড়ামির কারণে মঙ্গোলীয়দের সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। এই অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে তারা আঠারো বছর বয়সেই বিয়েকে উৎসাহিত করেছে। এই জন্য তাদের রয়েছে নানা রকম প্রোন্যাটালিস্ট পলিসি।

এমনকি যেসব মায়ের চারটি সন্তান হয়, তাদের জন্য রয়েছে অর্ডার অভ ম্যাটারনাল গ্লোরি নামক মেডেল।

সন্তান ধারণের সক্ষমতার হিসাব করা হয় সাধারণত টিএফআর (Total fertility rate) দিয়ে।

যদি কোন দেশের টিএফআর ২.১ হয়, অর্থাৎ প্রত্যেক সক্ষম মহিলা গড়ে ২ দশমিক ১ করে বাচ্চা নেয়, তাহলে সেদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকে। অর্থাৎ জনসংখ্যা বাড়েও না, কমেও না।

এর অর্থ হল, কোন দেশে সন্তানদানে সক্ষম (১৫ থেকে ৪৯ বছর) নারীর মোট সংখ্যা যদি ১০০০ হয়, তবে তাদের বাচ্চার সংখ্যা হতে হবে ২১০০, গড়ে ২ দশমিক ১।

২ দশমিক ১ এর বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর ২ দশমিক ১ এর কম হলে জনসংখ্যা কমতে থাকে।

জাপানের টিএফআর ১ দশমিক ৪। এর ফলে একদিকে জাপানে জনসংখ্যা যেমন কমছে, তেমনি গড় আয়ু বাড়ার কারণে সেখানে বৃদ্ধদের সংখ্যাও বাড়ছে।

এভাবে চলতে থাকলে একসময় জাপানে বেশিরভাগ জনগণই হবে বৃদ্ধ। এসব অক্ষম লোক তখন জাপানের উন্নয়নের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, তাদের অর্থনীতি ধসে পড়বে।

২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে বৃদ্ধদের সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বেশি হবে।

শুধু জাপানেই নয়, রাশিয়াতেও একই অবস্থা। এমনকি রাশিয়াতে বাচ্চা নিলে বাড়ি পর্যন্ত দেওয়া হয়।

ইউরোপ, আমেরিকার অবস্থাও একই। ইউরোপে টিএফআর ১ দশমিক ৫, কানাডায় ১ দশমিক ৬, আমেরিকা ১ দশমিক ৮।

কানাডার যে অবস্থা, তাতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ করে লোক কমছে নিম্ন জন্মহারের কারণে। এই ঘাটতি মেটানোর একমাত্র উপায় অভিবাসী নেওয়া। এই কারণে প্রতি বছর কানাডা অভিবাসী নিচ্ছে জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য।

এমনকি বাচ্চা হলে আলাদা করে তার জন্য মাসিক ভাতাও প্রদান করছে।

তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে উদ্দেশ্যে অভিবাসী নেওয়া, সে উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। অভিবাসীরা সেখানে গিয়ে বেশি সংখ্যক বাচ্চা না নিয়ে আরো কম বাচ্চা নিচ্ছে।

এই তো গেল বিশ্ব। এবার আসি বাংলাদেশের প্রেক্ষিত। বিডিএইচএস ২০১৪ অনুযায়ী, বর্তমানে আমাদের দেশে টিএফআর ২ দশমিক ৩ অর্থাৎ একজন মেয়ে গড়ে সন্তান নিচ্ছে ২ দশমিক ৩। অথচ ১৯৭৫ সালে এটি ছিল ৬ দশমিক ৩।

উন্নত দেশ যখন তাদের জনসংখ্যার কমতি নিয়ে চিন্তিত, এই সময় আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত জনশক্তি।

বর্তমান সময় হল বাংলাদেশের জন্য গোল্ডেন পিরিয়ড। পপুলেশন পিরামিড বানালে দেখা যায়, দেশের মোট জনগনের মাঝে এই সময়ে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাই বেশি। দেশের ৬০ ভাগের বেশি লোক ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী।

প্রত্যেক দেশের ক্ষেত্রেই এই সময় আসে, যাকে সে দেশের গোল্ডেন পিরিয়ড বলে। এই সময় যারা তরুণ জনশক্তিকে কাজে লাগাতে পারে, তারাই সফল দেশ হিসেবে খাতায় নাম লেখায়। এটাকে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ বলে।

আমাদের দেশের লোকের মেধা আছে, কিন্তু আমরা তাদের মেধার সঠিক প্রয়োগ করাতে পারি না।

এদেশের লোকদের আমরা অলস, অকর্মা বলি। অথচ আমাদের দেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের কারনেই মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক উন্নত দেশের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরছে।

অধিক জনসংখ্যা আমাদের জন্য সমস্যা নয়, সমস্যা হল ইকোনোমিক্যালি নন-প্রোডাকটিভ জনসংখ্যা। আমরা এদের কাজে লাগাতে পারছি না, কিংবা তাদের কাজে লাগানোর কোন চেষ্টাও করছি না।

আমাদের যে পরিমাণ লোকবল রয়েছে, এদের অর্ধেককেও যদি কাজে লাগানো যায়, পৃথিবীর এক নম্বর জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

সর্বশেষ সংবাদ