সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দেয়া চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার ফতোয়া নিয়ে আজও তর্কের ঝড় বয়ে চলছে দেশের প্রায় সকল এলাকার ছোট বড় মসজিদ মক্তব ও মাদ্রাসা গুলিতে বিশেষ করে মসজিদের বেলায় তা আরো প্রকোপ, কারণ ফতোয়াটি ছিল নিছক ‘মসজিদে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় জায়েজ হবে না এবং মসজিদে চেয়ার রাখা যাবে না’।মানুষের মাঝে এতদিন একটি বদ্ধমুল ধারনা ছিল যে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি গুরুত্বপুর্ন ও ধর্ম নির্ভশীল প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এহেন একটি রাষ্ট্র সংশ্লীষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যে অজ্ঞ বা নুন্যতম জ্ঞানহীন মুন্সীদের দ¦ারা পরিচালিত হয় তা জানা ছিলনা মোটেও। তাই এ প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ঈদের চাদঁ দেখা, ঈদের নামাজ বা রোজা রাখার ঘোষনায় বিশ্বাসী হয়ে নামাজ পড়া বা রোজা রাখা কিংবা ঈদের নামাজ আদায়ে নির্ভরশীল হওয়া মোটেও সমুচিন হবে বলে মনে হয়না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ইসলামী জ্ঞান পুষ্ট লোকের অভাব থাকলেও আমাদের দেশে যে ইসলামী চিšাÍবিদ রয়েছেন কানায় কানায় ভর্তি সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। উক্ত ফতোয়া দেওয়ার পর পরই দেশের খ্যাতিমান আলেম ওলামাদের নিকট থেকে তার কাউন্টার জবাব আসাটাই তার সুস্পষ্ট প্রমান। শুধু ইসলামী চিন্তাবিদরাই নহেন উক্ত ফতোয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রী এমপি সহ খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেও। সাধারন মানুষের ক্ষুদ্র জ্ঞানেও বুঝে আসেনা কি করে মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এরুপ একটি ফতোয়া দিতে পারেন একটি দায়িত্বশীল চেয়ারে থেকে। দেশের মানুষ তাকে চিনতো না, নিজেকে চেনানোর সখ বা খায়েশ জেগেছে তার মনে এমন ধারনা থেকেও যদি তিনি এরুপ একটি কোন ফন্দি ফিকির আটেন তা হবে অন্য কথা। কিন্তু তার ফতোয়ার স্বপক্ষে একটি যুক্তিও উপস্থাপন করেছেন যা আরো সুনির্দিষ্ট করে বুঝায় যে, মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ কোন ধার্মিক ব্যক্তি নন বরং ধর্মে বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারী একজন বিধর্মী এজেন্ট। আর ধর্মে বিভ্রান্ত সৃষ্টি কারী সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন পবিত্র কোর-আনুল কারীমের সুরা বাকারা-১৯২ নং আয়াতে উল্লেখ করেন,ওয়া ফেতনাতু আশাদ্দু মিনাল কাতলে অর্থাৎ ফিতা ফাসাদ সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপনাধ যেহেতু দ্বীনের ব্যাপারে ফেতান সৃষ্টি করা নর-হত্যার চেয়ের বড় অপরাধ, সুতরাং একটি সুন্দুর ইসলামী পরিবেশে বিভ্রান্ত বা ফেৎনা সৃষ্টি করার অপরাধে তাকে স্বীয় পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে হত্যার অপরাধে অপরাধি হিসাবে শাস্তি দেয়া উচিৎ।
দেশের চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এমনি একটি হঠকারী ফতোয়া দেওয়া দেশের জঙ্গিগুষ্ঠিকে আবারো আগলে তোলা বা জ্বালাও পোড়াও পরিস্থিতির দিকে দেশকে ঠেলে দেয়ার আলামত বহন করছে। মুফতি সাহেব তার ফতোয়াকে দাড় করানোর জন্য উল্লেখ করছেন যে, রাসুল পাক (সাঃ) অসুস্থতার সময় বসে নামাজ আদায় করেছেন, কিন্তু মসজিদে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেননি। এক্ষেত্রে মুফতি সাহেবকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, রাসুল পাক(সাঃ) তো মসজিদে কোন মাইক ব্যবহার করেননি,তিনি তো কখনও চোখে দুরবীন লাগিয়ে আকাশে ঈদের চাঁদ দেখেননি, তিনি তো কখনও মসজিদে নয়ন জুড়ানো বৈদুতিক ঝাড়বাতি লাগাননি বা অনুমতিও দেননি ইত্যাদি হাজারো আইটিম আছে যা হুজুর পাক সাঃ এর জামানায় ছিল না এখন সে গুলি ইসলামের এক একটি সুকঠিন উপাদান হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সে গুলিকে মুফতি সাহেব কি ভাবে দেখছেন।
এখানে মসজিদ সংক্রান্ত একটি হাদীস বা ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়,একদিন আমার প্রিয় নবীজি মসজিদে নববীতে বসে ফজরের নামাজ শেষে ছাহাবী কেরামদের নিয়ে বায়েন করছিলেন, কিন্তু যারা নবী করিম সাঃ এর নিকটে বসেছিলেন তারা সুন্দর ভাবে ওয়াজ নছীহত শুনলেও যাঁরা পিছনে বসে ছিলেন তারা বার বার উঁকি মেরে অর্থাৎ মাথা উচুঁ করে নবীজির চেহারা মোবারক দেখার চেষ্টা করতেন এবং ওয়াজ নছীহৎ শুনতেন। ঐদিন উক্ত মজলিশে একজন সাহাবী ছিলেন যিনি পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। উক্ত কাঠমিস্ত্রি সাহাবী বিষয়টি অবলোকন করে বাড়ীতে গিয়া চিন্তা ভাবনা করে তিন ধাপ বিশিষ্ট একটি কাঠের টুল বানিয়ে পরের দিন মসজিদে নববীতে জামায়াতে হাজির হয়ে নামাজ আদায় শেষে যখন নবীজি নিত্যদিনের ন্যায় বায়েন করার প্রস্তুতি নিলেন ঠিক তেমনি সময়ে উক্ত (কাঠ মিস্ত্রি) সাহাবী তার বানানো টুলটি নবীজির সামনে হাজির করলেন। নবীজি দেখে বললেন এটা কি এবং কেন এনেছো। উক্ত সাহাবী তখন আরজ করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি প্রতিদিন যখন বক্তব্য রাখেন তখন আমরা যারা পিছনে বসে থাকি তারা আপনার চেহারা মোবারক ঠিক মত দেখতে পাইনা এবং আপনার চেহারা মোবারক নাদেখে আমরা পরিপুর্ন তৃপ্তিও পাইনা, তাই এই টুলটি বানিয়ে এনেছি,আপনি এই টুলের উপরে বসে কথা বললে আমরা সবাই আপনার চেহারা মোবারক দেখতে পাবো,হাদীস শরীফে এসেছে (হাদিসে মসনদ) নবী করিম সাঃ ঐ সাহাবীর পিঠে আদরের থাবা দিয়ে তার দেয়া টুলটি সাদরে গ্রহন করেন যে টুলটি আজও পৃথিবীর সকল মসজিদে মেম্বার হিসাবে স্থান লাভ করে আছে। প্রিয় পাঠক,বিশ্ব জুড়ে আমাদের মসজিদ গুলিতে ইমাম সাহেবদের বসার জন্য যে মেম্বার টি দেখতে পাই তা আল্লাহ পাক এর নাযিলকৃত বা রাসুল পাক সাঃ এর বানানো বা হুকুমের নয়, তা নিছক একজন সাহাবীর বুদ্ধিমত্তা থেকেই প্রাপ্ত এবং যা ছিল বিশেষ প্রয়োজন স্বাপেক্ষে এবং যা রাসুলে পাক সাঃ এর অনুমোদিত ও সমর্থন পুষ্ট একটি সুন্নত বটে।
মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হয়তো অনুধাবন করতে পারেননি যে, ইসলাম একটি প্রগতিশীল ও প্রযুক্তিশীল এবং বিজ্ঞানময় ধর্ম বা জীবন বিধান যা মানুষের কল্যানে পবিত্র কোর-আন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং ভবিষ্যৎ পরিচালিত হতে থাকবে। মানুষ এখন ধর্ম সম্পকে সেচেতন,এধরনের ফতোয়া দিলে মানুষ ফতোয়া প্রদানকারীর পিঠে বসেই নামাজ অাদায় করবে। আল্লাহ আমাদেরকে ঐ সকল বাজে ফতোয়াবাজদের থেকে হেফাজত করুন আমিন।