ওয়াসার পানিতে মিলছে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান

রাজধানীর মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার এবং খাবার পানির প্রধান উৎস ওয়াসা। এবার সেই পানিতে পাওয়া গেছে ক্যান্সারসহ মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর মারাত্মক সব রাসায়নিক উপাদান। ক্ষতিকারক এসব উপাদানের মধ্যে আছে- টেক্সটাইল, জাহাজ ভাঙাড়ি, তেল পরিশোধন, প্রসাধন সামগ্রী, পরিষ্কারক এবং শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ।

বিশ্বব্যাপী শিল্প উৎপাদনে বহুল ব্যবহৃত দুই রাসায়নিক যৌগ হল পারফ্লুরোঅকটানোয়িক এসিড (পিএফওএ) এবং পারফ্লুরোঅক্টেন সালফোনিক এসিড (পিএফওএস)। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় সারফেস বা পৃষ্ঠজল এবং কলের পানি উভয় জায়গাতেই উপাদান দুটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি ‘পিএফএএস বাংলাদেশ সিচুয়েশন রিপোর্ট ২০২০’ নামে একটি গবেষণা করা হয়। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ঢাকার লালমাটিয়ার পানিতে সর্বোচ্চ ৮ পিপিটি (পার্টস পার ট্রিলিয়ন) মাত্রার পিএফওএ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে পানপাড়া এবং বনানীর পানির নমুনায় এ মাত্রা যথাক্রমে ৬.৮ এবং ৫.১৮ ।অন্যদিকে, পানপাড়া, লালমাটিয়া এবং বনানীতে পিএফওএসের পিপিটি মাত্রা যথাক্রমে ২.৬, ২.৩ এবং ১।

পিএফওএ এবং পিএফওএস দুটো যৌগই মানবদেহের জন্য বিষাক্ত পার এন্ড পলিফ্লুরো অ্যালকাইল সাবটেন্স (পিএফওএস) রাসায়নিক গোষ্ঠীর সদস্য। প্রায় সাড়ে চার হাজারের বেশী মানবসৃষ্ট রাসায়নিক পদার্থ পিএফএওএস গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।

২০১৭ সালে পার্সিস্টেন্ট অরগানিক পলিউট্যান্টসের (পপস) সম্পর্কিত স্টকহোম কনভেনশনের পর্যালোচনা পরিষদ পিএফওএ যৌগের সাথে উচ্চ কোলেস্টেরল, আলসারেটিভ কোলাইটিস, থাইরয়েড, টেস্টিকোলার ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার এবং গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপসহ মানব দেহের জটিল সব রোগের সম্পৃক্ততা চিহ্নিত করে।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, পরিবর্তিত প্রাকৃতিক অবস্থাও পিএফওসের কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। এই দুটি রাসায়নিক পদার্থের সাথে অনান্য পিএফএএস মিলিতভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বহুগুণে বাড়িয়ে তুলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন ড. আবু জাফর মাহমুদ দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘পিএফএএস অত্যন্ত বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ। মানব দেহের রক্ত থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত উপাদানগুলো প্রভাব রাখে। এদের প্রভাবে ক্যান্সার হতে পারে। আমরা মার্কারি এবং সীসার ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জানি। তবে পিএফএএসের সংস্পর্শে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, তা এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। এই উপাদানগুলো জন্মের আগেই শিশুকে আক্রান্ত করতে পারে।’

এদিকে, তুরাগ নদীর পানির নমুনায়, নদী মধ্যবর্তী অংশের পানিতে ৬৫.৯৬ পিপিটি মাত্রায় পিএফওএ পাওয়া গেছে। পিএফওএ এবং পিএফওএস ছাড়া এই এলাকাগুলোতে কলের পানি ও পৃষ্ঠজলে পিএফএএস রাসায়নিক গোষ্ঠীর আরও ১০টি ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ সংবাদ