যশোরে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ৫০ মামলার রায় দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক শিমুল কুমার বিশ্বাস। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার পর থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় তিনি এ রায়গুলো ঘোষণা করেন। মাদক, চোরাচালান ও চেক জিডঅনারের অভিযোগে মামলাগুলো চলছিল। এ রায়ে ৩১টি মামলায় ৩২ জনকে কারাদণ্ড ও ১৯ মামলার আসামিদের খালাস দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর একদিনেই ৪১টি মামলার রায় দিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এপিপি অ্যাডভোকেট লতিফা ইয়াসমীন কমল ও বেঞ্চ সহকারী আব্দুল কাইয়ুম। আদালত সূত্রে জানা গেছে, চোরাচালান দমন আইনের মামলার মধ্যে ফেনসিডিল চোরাচালানের দায়ে বেনাপোলের কাগমারী গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আকরাম আলীকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত আকরাম আলী কারাগারে আটক আছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর থানার যদুরগাটি গ্রামের আব্দুল আজিজ মাস্টারের ছেলে রাজিব হোসেনকে ১ বছরের সাজা দিয়ে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। বেনাপোলের গাতিপাড়া মাঠপাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলামকে ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত জহিরুল ইসলাম পলাতক আছে। বেনাপোলের বলফিল্ড এলাকার বাসিন্দা মৃত খোরশেদ মোল্লার ছেলে আব্দুল মজিদ মোল্লাকে ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদেয় আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আব্দুল মজিদ পলাতক আছে। চেক ডিজঅনারের ২২ মামলার রায়ে শার্শার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলেকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যশোর শহরতলীর শেখহাটির শাহীন মাহমুদকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে। যশোর সদর উপজেলার তরফ নওয়াপাড়ার মৃত আফছার আলী সরদারের ছেলে আশরাফ হোসেনকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা কারা হয়েছে। ঢাকার মতিঝিলের ৬ সি/এ’র বাসিন্দা এম আশরাফ আলীর ছেলে একে আজাদকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা জরিমানা, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পুরন্দরপুর গ্রামের মৃত আক্তার আলীর ছেলে শেখ আব্দুল ওয়াহীদকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৯৩ হাজার ৯৫১ টাকা জরিমানা, নড়াইলের লোহাগড়ার জয়পুর গ্রামের নগেন বিশ্বাসের ছেলে মিলন বিশ্বাসকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা, যশোরের অভয়নগর উপজেলার বিভাগদি গ্রামের ক্ষিতীশ হালদারের ছেলে গোবিন্দ হালদারকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ ২০ হাজার ১৩০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীর মৃত রওশন আলম হায়দারের ছেলে মোহাম্মদ ইয়াকুবকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৯৫ হাজার ৫০০ জরিমানা, ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বুজিডাঙ্গা মুন্দিয়া গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে আব্দুস সবুরকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা, যশোরের চৌগাছা উপজেলার আফরা গ্রামের রহমত হোসেনের স্ত্রী মিনারা বেগমকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা, যশোর সদর উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামের আহম্মদ আলীর স্ত্রী ফিরোজা খাতুনকে ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা, অভয়নগর উপজেলার পালপাড়া গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে শরিফুল ইসলামকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩০ টাকা জরিমানা, কুষ্টিয়া মিরপুরের পুরাতন বাজার এলাকার মৃত মেহের আলী মণ্ডলের ছেলে মনোয়ার হোসেন মানুকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৪৯ হাজার ৪৪২ টাকা জরিমানা, খুলনা বিকে মেইন রোডের পূর্ব বানিয়া খামার এলাকার সায়েদ আলীর ছেলে জিএম আব্দুল ওহাবকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২৬ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, ২২টি মাদক মামলায় ১২জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বিভিন্ন শর্তে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছেন বিচারক। প্রবেশনে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোলের কেলেকান্দা গ্রামের মোস্তফার ছেলে মিলন, সাদীপুর গ্রামের মফিজ মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া, গাজীপুরের হিম্মত খানের ছেলে সালাহউদ্দিন খান, মৃত আলী আকবরের ছেলে বকুল হোসেন, গয়ড়া গ্রামের সাহাজুল ইসলাম সাজুর স্ত্রী মাজেদা খাতুন, বড় আঁচড়া গ্রামের অশোক দের ছেলে চঞ্চল দে, যশোর শহরতলীর কিসমত নওয়াপাড়ার মৃত মোজাম মোল্লার ছেলে শফিকুল ইসলাম নান্নু, চৌগাছা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের শাহাদৎ হোসেন ঢালীর ছেলে আতিয়ার রহমান ঢালী, ঝিকরগাছা উপজেলার শিয়ালখোলা গ্রামের গ্রামের ফিরোজ উদ্দিনের ছেলে আসাদুজ্জামান রনি, বল্লা গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম ও ফুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে ইমদাদুল। এ বিষয়ে যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, মামলার জট কমানোর জন্য বিচারক একইদিনে একাধিক মামলার রায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত প্রতিটি মামলার যুক্তিতর্কের এসব মামলার রায় লেখা সম্পন্ন করেছেন বিচারক। তারপর সকল মামলার রায়ের দিন একটি নির্দিষ্ট তারিখে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ১২টি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরা প্রবেশনের আওতায় মুক্তি পেয়েছেন। তাদের অসুস্থতাকে আমলে নিয়ে প্রবেশনের রায় দিয়েছেন বিচারক।
যশোরে আড়াই ঘণ্টায় ৫০ মামলার রায় দিলেন বিচারক
December 15, 2021
27 Views
You may also like
সর্বশেষ সংবাদ
সারিয়াকান্দিতে থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ৫
3 months ago
শোক সংবাদঃ নৈশ্য প্রহরী শাহজাহান আলীর ইন্তেকাল
3 months ago
কাজিটুলা থেকে বৃদ্ধ নিখোঁজ; ১৯ দিনেও মেলেনি খোঁজ
3 months ago