কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত।

লেখক মোঃ হায়দার আলী-কি নিয়ে লিখবো, চিন্তা ভাবনা করছিলাম, এমন সময় কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বন্ধু কক্সবাজার, বান্দরবন ট্যুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, আমিও গেলাম, সত্যি খুব ভাল লেগেছে।  সবাই বেশ মজা করেছি, তাই এ সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত নিয়ে লিখার চেষ্টা করচ্ছি,  জানি না কতটা পাঠদের উপকারে আসবে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত (Samodra Soikot)। ১২০ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এ সমুদ্র সৈকতে বৈশিষ্ট হলো পুরো সমুদ্র সৈকতটি বালুকাময়, কাদা অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। বালিয়াড়ি সৈকত সংলগ্ন শামুক ঝিনুক নানা প্রজাতির প্রবাল সমৃদ্ধ বিপণি বিতান, অত্যাধুনিক হোটেল মোটেল কটেজ, নিত্য নব সাজে সজ্জিত বার্মিজ মার্কেট সমূহে পর্যটকদের বিচরণে কক্সবাজার শহর পর্যটন মৌসুমে প্রাণচাঞ্চল্য থাকে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও স্থানীয় সী-বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কার্যক্রম দৃশ্যমান। পুরনো ঝিনুক মার্কেট ভেংগে আটটি রঙ্গের ছাতার আদলে নতুনভাবে নির্মিত আধুনিক ঝিনুক মার্কেট ‘বীচ পার্ক মার্কেট’ সত্যি দেখার মতো। প্রতিটি মার্কেটে আটটি করে দোকান নির্মাণের স্পেস থাকলেও দোকানীরা নিজেদের সমঝোতার মাধ্যমে আটটি দোকানকে ষোলটি, ক্ষেত্রবিশেষে বিশটি দোকান ঘর তৈরী করেছে।

পাশে অনুরূপ আরো তিনটি ছাতা মার্কেট নির্মাণাধীন রয়েছে। শামুক-ঝিনুক ও প্রবালের দোকানের পাশাপাশি বার্মিজ পণ্যসামগ্রী, কস্মেটিক, ফাস্টফুড, কুলিং কর্ণার, শুটকি, স্টুডিও, মোবাইল সপসহ নানা দোকানের সমাহার রয়েছে এসব মাকের্টে। সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ মুখে কক্সবাজার জেলা পরিষদের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় দৃষ্টিনন্দন বীচ গার্ডেন কাম পার্ক ও ২৬ টি দোকান সমৃদ্ধ ঝিনুক মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। বাগানের সম্মুখে লাবনী পয়েন্টে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির তত্ত্বাবধানে দু’তলা বিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও জেলা প্রশাসনের স্থায়ী মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা রয়েছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি মায়াবী ও রূপময়ী সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এর রূপ পরিবর্তন করে। শীত-বর্ষা-বসন্ত-গ্রীস্ম এমন কোন সীজন নেই সমুদ্র সৈকতের চেহারা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রত্যুষে এক রকম তো মধ্যাহ্নে এর রূপ অন্য রকম। গোধুলি বেলার বীচের হাওয়া-অবস্থা আর রাতের বেলার আবহাওয়া-অবস্থার মধ্যে বিস্তর ফারাক।

তাই তো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য ক্যাপ্টেন কক্স এর সমুদ্র সৈকত এত কদরের, এত পছন্দের। তারা আসে সী-বীচের সাথে আলিঙ্গন করতে, স্নান করতে, এর সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে আর নির্ভেজাল নির্ঝঞ্জাট ও নিরাপদ পরিবেশে বিশুদ্ধ বাতাস খেতে।

কর্তৃপক্ষ সী-বীচের জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন্ জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিবসে ওপেন কনসার্ট, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বীচ-ফুটবল, বীচ-ভলিবল, বীচ-ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, জাতীয় ঘুরি উত্তোলনের উৎসব, বালু স্কালপ্চার নির্মাণসহ অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে।

বাংলাদেশে সার্ফিং-কে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সী-বীচের লাবণী পয়েন্টে সার্ফিং ক্লাবের জন্য অস্থায়ী সার্ফিং কুটির স্থাপনের জন্য সাময়িক অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সম্প্রতি বীচ পুলিশ সংযোজন নিঃসন্দেহে সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

জোয়ার ও ভাটার সময় প্রদর্শনের জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে রয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী বিলবোর্ড ও ব্যানার। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক ঘূর্ণিঝড় ও জোয়ার-ভাটার জনসচেতনতা ও শিক্ষামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য সমুদ্র সৈকতে কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবনী পয়েন্টে এলসিডি টিভি মনিটর স্থাপনের জন্য কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজার রূপালী সমুদ্র সৈকতে বীচ বাইক, জেট স্কী, ঘোড়ার গাড়ি বা ঘোড়া পর্যটকদের জন্য আনন্দের খোরাক যোগায়। সমুদ্র সৈকতে অনেক চেঞ্জিংরুম, বাথরুম, টয়লেট স্থাপনের কারণে পর্যটকদের প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না।

কখন যাবেন
কক্সবাজারের পীক সিজন বলে অক্টোবর থেকে মার্চ। এ সময়টায় বৃষ্টি কম হওয়ায় বেশি ট্যুরিস্ট আসে। এ ছাড়াও শীত থাকাতে বীচগুলো বেশি উপভোগ্য লাগে, কিন্তু ভিড়টাও বেশি থাকে। অফপিক সিজন থাকলেও দুই ঈদের পরে এবং তিন দিনের বন্ধে অনেক ট্যুরিস্ট থাকে। এ সময়টায় বুকিং না দিয়ে যাওয়াটা ঠিক নয়। অফসিজনে হোটেলগুলো ৩০% থেকে ৬০% পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকে। এ ছাড়াও বর্ষার সময়টা ঢেউ গুলো অনেক বড় থাকে। সেন্টমার্টিনের জাহাজ চলে সাধারণত অক্টোবর থেকে এপ্রিল। সেন্টমার্টিন জাহাজে যাবার ইচ্ছা থাকলে ওই সময়টায় যেতে পারেন।

থাকার ব্যবস্থা
বর্তমানে কক্সবাজারে হোটেলগুলো প্রায় ১লাখ ৫০ হাজার  জন ধারণ ক্ষমতা আছে। সুতারাং বুক না দিয়ে গেলেও হোটেল পাবার সম্ভাবনা থাকে। তবে ডিসেম্বরের শেষ দিকে এবং নতুন বছরের শুরুতে এ ঝুকিটা নেয়া ঠিক হবেনা। কক্সবাজার হোটেল/মোটেল/রিসোর্ট গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় দামানুসারে।

৬০০০-১০.০০০: মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বীচ, কক্স টুডে, হেরিটেজ ইত্যাদি ৩,০০০-৬,০০০: সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রীফ, নিটোল রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, সী ক্রাউন, ইউনি রিসোর্ট ইত্যাদি। ৮০০ – ৩,০০০: উর্মি গেস্ট হাউজ, কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, অভিসার, মিডিয়া ইন, কল্লোল, হানিমুন রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট ইত্যাদি। এর কমেও হোটেল পাওয়া যায় (যেমন জিয়া গেস্ট হাউজ), খোজাখুজি করে দেখবেন।

হোটেল ভাড়া অফসিজনে অর্ধেকেরও বেশী ছাড়ে পাবার সম্ভাবনা থাকে। সুযোগ থাকলে কক্সবাজার নেমে একজন যেয়ে হোটেলের সাথে দরদাম করে হোটেল খুজে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। রিকশাওয়ালা বা সিএনজিওয়ালার পরামর্শে হোটেল খোজাটা উচিত নয়। এখন প্রায় সব হোটেলরই ফেইসবুক পেইজ বা ওয়েবাসাইট থাকে, সেখান থেকে নাম্বার নিয়ে আগে যোগাযোগ করেও যেতে পারেন। কিন্তু ডিসেম্বরের ১৫ থেকে জানুয়ারী ১৫ তারিখ পর্যন্ত বুকিং দিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। এছাড়া কর্মদিবসগুলোতে গেলে উইকএন্ডের তুলনায় বেশী ছাড়া পাওয়া যাবে।

হোটেলের পাশাপাশি কিছু ফ্ল্যাটও ভাড়া পাওয়া যায়। আপনি যদি বড় পরিবার নিয়ে যান, এ ধরণের ফ্ল্যাট আপনার জন্য বেশী উপযোগী হতে পারে। ২/৩/৪ বেড রুম এসি/নন এসি, রান্নঘর সহ এ ধরণের ফ্ল্যাটের ভাড়া পড়বে ২,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা প্রতিদিন।

খাওয়ার ব্যবস্থা

কক্সাজারে খাওয়ার মত অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে। বাজেট রেস্টুরেন্টের মধ্যে ঝাউবন ও পৌষির নামই সবার আগে আসে। এধরণের বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে, খাবারের মান মোটামুটি একই। রোদেলা, ধানসিঁড়ি, নিরিবিলি। মেনু অনুসারে দামের তালিকা নিচে দেওয়া হল। সিজনে কম/বেশী হতে পারে: ভাত: ২০-৪০ টাকা মিক্সড ভর্তা: ৭৫/১৫০/৩০০ (৮-১০ আইটেম) লইট্যা ফ্রাই: ১০০-১২০ (প্রতি প্লেট ৬-১০ টুকরা) কোরাল/ভেটকি: ১৫০ (প্রতি পিচ) গরু: ১৫০-২০০ (২ জন শেয়ার করতে পারবেন) রপচাঁদা ফ্রাই/রান্না: ৩০০-৪০০ (বড়, ২জন খাওয়ার মত) ডাল: ৩০-৬০ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য নাম পৈাষী । হোটেল জোন থেকে কিছুটা দুরে শহরে এর অবস্থান। রিকশা/অটো ৫০ টাকা নিবে। দাম মোটামুটি একই। কিন্তু খাবার ভালো হবার কারণে ভিড়টা খুব বেশী থাকে। এছাড়া হান্ডি রেস্তারায় হায়দারাবদী বিরাণী খেতে পারবেন ২০০-২৫০ টাকায়। অবস্থান লাবণী পয়েন্টে। কেএফসিও আছে, যদি কারো খেতে ইচ্ছা করে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মোৎসব শারদীয় দূর্গা পূজার মহান বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময় সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের পদচারণায় সমুদ্র সৈকতটি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বান্দরবান পাবর্ত্য জেলা থেকেও প্রতিমা বিসর্জন দিতে এখানে সমাবেত হয়। আবহমানকাল থেকে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিসর্জন অনুষ্ঠান উপভোগের নিমিত্তে লক্ষাধিক পূজারী ও পর্যটকের অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলা ঘটে সমুদ্র সৈকতে। এ উপলেক্ষে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে গুরুত্ব সহকারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হয়। এছাড়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বর্ষাবাস আরম্ভ হওয়ার আগে বর্ষা মৌসুমে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন সমুদ্র সৈকতের পাশে স্থিত ঝাউবিথির ভেতরে গ্রুপে গ্রুপে পিকনিক আয়োজন করার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে পর্যটকদের ধারণা হতে পারে যে, সমুদ্র সৈকতে কোন উৎসব হচ্ছে কিনা। এটি কোন সামাজিক উৎসব নয়, ধর্মীয় উৎসবতো অবশ্যই নয়। অতি উৎসাহী কতিপয় সংবাদকর্মী এটিকে রাখাইন সম্প্রদায়ের উৎসব হিসেবে প্রচার করে থাকে। বছরে এক থেকে দেড় মাস সময়কালে (জুন-জুলাই) সাপ্তাহিক বন্ধের   দিনে  এ ধরনের  পিকনিক   তথা  বর্ষার   উৎসব   আয়োজন   চলে আসছে

 কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সে অনেক দিন আগে থেকে। আনন্দের আতিশয্যে পিকনিকের নামে যাতে কেউ অনাকাঙ্খিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা অবতারণা করে পিকনিকের আনন্দঘন পরিবেশকে কলূষিত করতে না পারে এ বিষয়ে সচেতন থাকার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সকলেরই

যে সব স্থানে যাবেনঃ

কলাতলী বিচ
কলাতলী বিচ কক্সবাজারের আরেকটি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। এটা কক্সবাজারের মধ্যে অবস্থিত। বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন মানুষ এখানে ভ্রমণ করতে আসেন, সমুদ্রে গোসল করতে আসেন, আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কলাতলী বিচে নানা ধরনের খাবারের রেস্টুরেন্টসহ আরো অনেক পর্যটন সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে চাঁদনি রাতে বিচে হাঁটা সত্যিই রোমঞ্চকর সকল বয়সী মানুষের জন্যই। সকাল এবং সন্ধ্যাতে এখানে উপভোগের জন্য রয়েছে নানা ধরনের শুকনো মাছ, খাবার ইত্যাদি।

লাবনী বিচ
বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত বললে প্রথমেই চোখে ভেসে ওঠে কক্সবাজারের কলাতলীতে অবস্থিত কক্সবাজার পুরাতন সি-বিচ যা লাবণী পয়েন্ট বা পুরাতন সি-বিচ হিসেবেও পরিচিত। সমুদ্র দেখতে বাঙালি মাত্রই ছুটে যান কক্সবাজারের এই সি-বিচে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারগামী বাসে করে কলাতলী সি-বিচ রোডে নেমে রিকশা অথবা পায়ে হাঁটা পথে যেতে পারবেন এই বিচ দুটোতে। কক্সবাজার শহর থেকে নৈকট্যের কারণে লাবণী বিচকে কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত বলে বিবেচনা করা হয়। নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে সৈকত সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ছোট বড় অনেক দোকান যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এছাড়া এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। সীমান্তপথে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মার্কে

হিমছড়িঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হিমছড়ি পর্যটন কেন্দ্র। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এ সমুদ্র সৈকতের নাম হিমছড়ি। এখানকার সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নির্জন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। এর সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম নয়। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হিমছড়ি যত না সুন্দর তার চাইতে সুন্দর ও রোমাঞ্চকর হল কক্সবাজার থেকে এ সৈকতে যাওয়ার পথটি। একপাশে বিস্তৃর্ণ সমুদ্রের বালুকা বেলা আর এক পাশে সবুজ পাহাড়ের সাড়ি। মাঝে পিচ ঢালা মেরিন ড্র্রাইভ। এমন দৃশ্য সম্ভবত দেশের আর কোথাও পাওয়া যাবে না। কেউ কক্সবাজার এলো অথচ এই পথ ধরে ছুটলো না তার পুরো ভ্রমনই মাটি। পাহাড়ে উঠলে চোখের সামনে ভাসবে নীল দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া বিশাল সমুদ্র।

 ইনানি বি
হিমছড়ি থেকে আরো ০৫ কিলোমিটার গেলেই ইনানী বীচ বা ইনানী সমুদ্র সৈকত। ইনানী বীচে প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি। অনেকটা সেন্টমার্টিনের মতই। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মত এখানে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে না সৈকতের বেলাভূমিতে। অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির সৈকত এই ইনানী। জোয়ারের সময় এলে প্রবাল পাথরের দেখা পাওয়া যাবে না। ভাটার সময়েই কেবল মাত্র বিশাল এলাকা জুড়ে ভেসে উঠে এই পাথর। প্রবাল পাথরে লেগে থাকে ধারালো শামুক-ঝিনুক। তাই এখানে বেশী লাফালাফি করা বিপদজনক। ইনানী সৈকতের প্রধান আকর্ষণ প্রবাল পাথর। প্রায় প্রতিটা পাথরই নানা আকার আর ধরণের।

সোনাদিয়া
সোনাদিয়া দ্বীপ কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার একটি সুন্দর দ্বীপ। এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৯ বর্গ কি.মি.। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণে সোনাদিয়া দ্বীপটি অবস্থিত। একটি খাল দ্বারা এটি মহেশখালী দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তিন দিকে সমুদ্র সৈকত, সাগর লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি,কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন এবং বিচিত্র প্রজাতির জলচর পাখি দ্বীপটিকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। কক্সবাজারের বিপরীতে উপকূলীয় ছোট একটি দ্বীপ সোনাদিয়া। এটি পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গ। মনোরম এ দ্বীপের পশ্চিমাংশে বালুকাময় ও ঝিনুকের জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজার থেকে প্রায় ০৭ কিলোমিটার দূরে মহেশখালী উপজেলায় এর অবস্থান।
রামু
বৌদ্ধ কৃষ্টির জন্য বিখ্যাত কক্সবাজারের রামু থানা। কক্সবাজার থেকে ঢাকার পথে আসতে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রসিদ্ধ দর্শণীয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান। এখানে রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির, প্যাগোডা, ধাতু ও ব্রোঞ্জের তৈরি বৌদ্ধ মূর্তি, ছোট-বড় ১৩টি বৌদ্ধ মূর্তি নিয়ে লাল সিং ও পাশে সাদা সিং নামের বৌদ্ধ বিহার। আরো আছে ১৩ ফুট উচু ব্রোঞ্জের বুদ্ধ মূর্তি যা পর্যটকদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। এছাড়া রাবার বাগান, স্থানীয় রাখাইন ও বড়–য়া সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে এই এলাকায়।
মহেশখালী
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মাঝে অবস্থিত একটি দ্বীপ মহেশখালী। মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ হিসেবে পরিচিত মহেশখালীতে রয়েছে হিন্দুদের তীর্থস্থান বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এ মন্দির সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র স্থান। প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো এ প্রাচীন সভ্যতা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। নেপালের রাজদরবারের বদান্যতায় ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় এটি নতুন রূপ ধারণ করেছে।

আদিনাথ মন্দির
আদিনাথ মন্দির সমুদ্র স্তর থেকে ৮৫.৩ মিটার উচুঁ মৈনাক পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত মহেশখালী উপজেলার স্বাধীন গোরখঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রাম আদিনাথ মন্দির এর অবস্থান। এটি মূলত মহাদেব-এর মন্দির। জনশ্রুতি আছে, কোনো এক কৃষক এই দ্বীপের একটি বনের ভিতর মহেশ (হিন্দু পৌরাণিক দেবতা মহাদেব-এর অপর নাম)-এর মূর্তি পান। এরপর এই দেবতার নামে একটি মন্দির তৈরি করে, সেখানে ওই বিগ্রহটি স্থাপন করেন। পরে এই দেবতার নামের সাথে খালী (খাল অর্থে) শব্দ যুক্ত হয়ে-এই স্থানটি মহেশখালী নামে পরিচিত লাভ করে।

ডুলাহাজারা
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কটি কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে এবং চকরিয়া থানা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার জেলা সদরের দক্ষিণ বন বিভাগের ফাসিয়াখালি রেঞ্জের ডুলাহাজারা ব্লকে অবস্থিত। মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সাফারি পার্কটি ৯০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ডুলাহাজারা সাফারি পার্ককে কেউ কেউ সাফারি পার্ক বলতে রাজি নন, কারণ এখানে প্রাকৃতিক অবকাঠামোর বদলে অত্যাধুনিক ও কৃত্রিম অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে বেশি। আটটি ব্লকে ভাগ করে গড়ে তোলা এ পার্কে মুক্ত পরিবেশে হাঁটাচলা করা যায়, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনায়াসে বেড়ানো যায়।

 টেকনাফ
টেকনাফ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ-পূর্ব কোনায় অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার। টেকনাফ উপজেলার পূর্ব প্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে নাফ নদ;এই নাফ নদের থেকেই এই অঞ্চলটির নামকরণ হয়েছে। টেকনাফ উপজেলার দর্শণীয় স্থানগুলোর মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, টেকনাফ সমুদ্র সৈকত, পৌরসভার কাছাকাছি থানা প্রাঙ্গণে মাথিনের কূপ, বাংলাদেশ-মায়ানমার ট্রানজিট জেটিঘাট, টেকনাফ নেচার গেম রিজার্ভ, শিলখালী চিরহরিৎ গর্জনগাছ বাগান, মারিশবনিয়া সৈকত, কুদুমগুহা অন্যতম।

সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ
সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবালদ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ০৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ০৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। প্রচলিত আছে অনেক অনেক বছর আগে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে এখানে দারুচিনি বোঝাই আরবের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ পানির নীচে থাকা একটি বিশাল পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে পড়ে, যার ফলে জাহাজে থাকা দারুচিনি এই দ্বীপের সবখানে ছড়িয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাম হয়ে যায় ‘দারুচিনির দ্বীপ’।

 দুপুর বা রাতের খাবারের জন্যে বেছে নিতে পারেন যে কোনও রেস্টুরেন্টকেই। উল্লেখযোগ্য রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে আছে কলাতলীতে অবস্থিত শালিক, ধানসিঁড়ি, নিরিবিলি, কাশফুল, স্যান্ডি বীচ রেস্টুরেন্ট, তরঙ্গ, রুপসী বাংলা ইত্যাদি।

ঝাউতলার দুটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্টের নাম সবার মুখেই শোনা যায়, পউশী ও ঝাউবন রেস্টুরেন্টের রুপচাঁদা ভুনা কিংবা লইট্টা মাছের ফ্রাই এর স্বাদ মুখে লেগে থাকার মতই। এছাড়া লাবণী পয়েন্টে কাসুন্দি, সুগন্ধা বীচে কড়াই, দারুচিনি, আল গনি, ইত্যাদি রেস্টুরেন্টেও খেয়ে দেখতে পারেন।

সমুদ্র এলাকায় যাবেন আর সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ খাবেন না, তা তো হতেই পারে না। এখানে অবস্থিত প্রায় সব তিন থেকে পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতেই বারবিকিউ এর ব্যবস্থা থাকে, তবে একটু আগে থেকে বুক করে রাখতে হবে। এছাড়া সুগন্ধা বীচের আশেপাশে প্রচুর রেস্টুরেন্টে বারবিকিউ খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। রাতে বারবিকিউ করতে চাইলে, অন্তত সকালের মধ্যে অর্ডার কনফার্ম করতে হবে।

এছাড়া সৈকতের আশেপাশেই প্রচুর স্ট্রিট শপ পাবেন, ফিশ ফ্রাই খাওয়ার জন্যে। আর এই ফুডশপগুলোতে রাত ১২টার পর প্রায় অর্ধেক দামে ফিশ ফ্রাই বিক্রি হয়। সামর্থ্য থাকলে, বিভিন্ন হোটেল/রিসোর্টের ক্যান্ডেল লাইট ডিনারও চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

ইনানির দিকে গেলে পালংকি রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন, দাম একটু বেশি হলেও খাবারের মান ভাল। মারমেইড ক্যাফেতে একবেলা খাওয়াটা অনেকেই মিস করতে চান না, এখানকার জ্যুসের প্রশংসা সবার মুখেমুখে।

ঘোরাঘুরি

কক্সবাজার গিয়ে আপনি চাইলে শুধু সমুদ্রটাকেই মনের মত করে উপভোগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময়টা, অবশ্যই সৈকতে বসে উপভোগ করার চেষ্টা করবেন। পূর্ণিমা রাত হলে, চেষ্টা করবেন রাতের বেশ খানিকটা সময় সৈকতে বসে কাটাতে। অসাধারণ অনুভূতি হবে, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।

সর্বশেষ সংবাদ