জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির উদ্যোগে বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস পালিত 

প্রেস বিজ্ঞপ্তি-গতকাল মঙ্গলবার ২১ মার্চ বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস ২০২৩। প্রতিবছর ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে দিবসটি উদ্‌যাপিত হয়। জাতিসংঘ ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবসকে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকেই ডাউন সিনড্রোম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের মানবাধিকার, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিবসটি উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে।
বৈশ্বিক পথচলার সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশে ২০১৪ সাল থেকে দিবসটি উদ্‌যাপিত হয়। বাংলাদেশের রোগীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির ফেনী জেলা শাখার উদ্যােগে জেলা শাখার কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ডা.শাহাদাৎ হোসাইনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা.মোতাহের হোসাইন, কেন্দ্রীয় সদস্য মোবারক হোসাইন।
জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা.আবদুল মান্নানের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন শাহাদাৎ শাফিয়া দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রের দাতা সদস্য মুহাম্মাদ মোয়াজ্জেম হোসাইন, রোগী কল্যাণ সোসাইটির সদস্য মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম ভূইয়া, নোয়াখালী জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা.আনোয়ার হোসাইন সহ জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন,ডাউন সিনড্রোম সমন্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সামাজিক অধিকার আদায়ে, সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচীতে সাধারণ জনগণের ন্যায় ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সর্বোপরি ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ভালোবাসাময় একটি পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যেই দিবসটি ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
তবে অনেকে হয়তো ডাউন সিনড্রোম  বিষয়টি কি তা জানেনই না। এটি বিশেষ ধরনের জেনেটিক বা জিনগত অবস্থা। ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্ম নেয়া মানুষের ক্রোমোজোমের গঠন সাধারণ মানুষের ক্রোমোজমের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে।
ডাউন সিনড্রোম একটি শিশুর বংশানুগতিক সমস্যা। আর মানবদেহে প্রতিটি কোষে ক্রমোজমের সংখ্যা থাকে ৪৬টি। ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রমোজমে একটি অতিরিক্ত ক্রমোজম থাকে, যাকে ‘ট্রাইসমি ২১’ বলা হয়। এই অতিরিক্ত ক্রমোজমটির কারণে বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি নিয়ে ডাউন সিনড্রোম শিশুর জন্ম হয়। ১৮৮৬ সালে ইংল্যান্ডে জন ল্যাংডন ডাউন নামে এক ব্যক্তি এটি আবিষ্কার করেন। তখন থেকেই এটি ডাউনস সিনড্রোম বা শুধু ডাউন সিনড্রোম বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্থান পায়।
আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতি ৮০০ শিশুর মধ্যে একজন ডাউন সিনড্রোম শিশু জন্মগ্রহণ করে থাকে। পৃথিবীতে প্রায় ৭০ লাখ ডাউন সিনড্রোম লোক রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৫ জন ডাউন শিশু জন্ম নেয় এবং দেশে প্রতি বছর পাঁচ হাজার ডাউন শিশু জন্মায়। দেশে প্রায় দুই লাখ শিশু এ সমস্যায় ভুগছে।
পরিশেষে বলতে চাই, মায়ের বয়স ২০ বছরের কম বা ৩৫ বছরের বেশি হলে গর্ভস্থ শিশুর এ ঝুঁকি বাড়ে। বয়স যত বাড়বে শিশুর ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তের শঙ্কা তত বাড়বে। ৩৫ বছর বয়সের প্রতি ৩৫০ জন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে একজনের এবং ৪০ বছর বয়সের প্রতি ১০০ জন মায়ের একজনের ডাউন শিশু হতে পারে। অন্যদিকে কোনো মায়ের আগে একটি ডাউন শিশু থাকলে পরবর্তীতে ডাউন শিশু হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বাবা-মা ক্রটিযুক্ত ক্রোমোজমের বাহক হলে সন্তানও ডাউন শিশু হতে পারে। যদি বাহক বাবা হন তবে সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে ৩ শতাংশ, আর মা হলে তা বেড়ে হয়ে যায় ১২ শতাংশ। এটি প্রতিরোধে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা দরকার। যেহেতু মায়ের কম বা বেশি বয়সের সঙ্গে ডাউন শিশু হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধিক বয়সে, বিশেষ করে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে মা হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। মায়ের আগের বাচ্চাটি যদি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত থাকে তবে পরে বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।আর সবাই যদি সচেতনতা সৃষ্টি করতে এগিয়ে আসে, তবেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি হবে।এবং ডাউন শিশুদের প্রতি আমাদের মমতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তারা সমাজের বোঝা নয়। পর্যাপ্ত যত্ন এবং সহযোগিতাই পারে তাদের সমাজের সম্পদ হিসাবে গড়ে তুলতে। অনুষ্ঠান শেষে শাহাদাৎ শাফিয়া দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ করা হয়।

সর্বশেষ সংবাদ