রাজশাহীতে ২০ টাকার তরমুজ এক লাফে ৮০ টাকা, ১৫ টাকা খিরা ৮৫ টাকা

মোঃ হায়দার আলী  রাজশাহী থেকে।। রমজান মাসে ইফতারিতে বাহারি ফলের সমাহারের মধ্যে তরমুজ অন্যতম। এক টুকরা তরমুজ রোজদারদের মাঝে এনে দেয় তৃপ্তি। তার উপর তীব্র গরমে মানুষ অতিষ্ঠ। এই গরমে মানুষের শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে খাবারেও খোঁজে তরল-পানীয়। তরমুজ তার মধ্যে অন্যতম। এবার গরম আর রোজায় গোদাগাড়ীসহ রাজশাহীতের তরমুজ হয়ে উঠেছে বিলাসবহুল ফল। যেখানে মাত্র সপ্তাহ  আগেও ২৫/৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০/৭০ টাকা কেজি দরে।
পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে দেখার যেন কেউ নেই। এমন দামে ক্রেতারা আক্ষেপ করে বলছেন,  তরমুজ এবার যেন বড় লোকের ফল। তরমুজের সাথে পাল্লা দিয়ে বড়ছে খিরার দাম। কোন কারণ ছাড়াই ১৫ টাকার খিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০/৮৫ টাকা। রোজার আগে যে আগে যে খিরা ১২/১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে সে খিরা এখন  সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই।
মঙ্গলবার গোদাগাড়ী  উপজেলার ও পৌরসভার মহিশালবাড়ী, গোদাগাড়ী, রেলগেট, কদমহাজির মোড়,  পিরিজপুর, বিদিরপুর, প্রেমতলী, কুমুরপুর, রাজাবাড়ী, আলিমগঞ্জ, সুলতানগঞ্জ, কামারপাড়া, বাসুদেবপুর, বালিয়াঘাটা, কাঁকনহাট,  গোগ্রাম,  বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
জানা গেছে, রমজান মাসের পূর্বে গোদাগাড়ীতে  তরমুজের দাম তেমন বেশি ছিল না, চাহিদাও ছিলো কম। ছোট সাইজের একটি তরমুজ ১৭/২০ টাকা কেজি দরে মধ্যম সাইজের ২০-২২ টাকা কেজি দরে, আর  বড় সাইজের তরমুজ ২৫/৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। রোজা শুরু ও গরম বাড়তে থাকায় ফল ব্যবসায়ীরা তরমুজের দাম বাড়িয়ে দেন প্রায় কয়েকগুণ। শুরুতে তরমুজ ২০/২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি বিক্রি করলেও হঠাৎ করে তারা এখন ৬৫/৭৫ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি শুরু করেছেন । বর্তমানে তরমুজের আকাশচুম্বী দামে ক্রেতারা একবারে দিশেহারা! মঙ্গলবার দুপুরে গোদাগাড়ী বাজারে তরমুজের দোকানে তরমুজ কিনতে আসেন শিক্ষক রেদওয়ান ফেরদোস সাহেব  কিন্তু তরমুজের এমন আগুনে দাম শুনে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। তাই ছোট একটি তরমুজ কিনে বাড়ী ফিরেছেন।
তিনি বলেন, এই গরমে এক টুকরো তরমুজ একটু তৃপ্তি দেয়। তাই কিনি।
রিকশা চালক রুবেল বলেন, লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ রসালো ফল তরমুজ কেনা সম্ভাব হলো না। কিন্তু এই দামের কারণে সেই তৃপ্তি আর পূরণ করা গেলো না বলেন তিনি।
মহিশালবাড়ী বাজারে তরমুজ কিনতে আসা আজিজ বলেন, হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধির কারণে গোটা তরমুজ কেনা সম্ভাব হচ্ছে না তাই আলম ও আমি ভাগে তরমুজ কিনলাম।
মহিশালবাড়ী এলাকার গৃহবধু মোসাঃ জোহরুন নেসা জানান, তরমুজ ছাড়া আমি আমার ইফতারিতে তৃপ্তি পাই না। সে তৃপ্তি মেটাতে তরমুজ আমার চাই চাই, আমার ছোট ছেলে জীম তরমুজ খেতে ভাল বাসে তাই ১০০ টাকা কেজি হলেও আর কয়েকটি রোজাতে তরমুজ কিনতে হবে।
সচেতন মহল বলেন,  বিক্রেতেরা পিস হিসেবে কিনে আনলেও বিক্রি করছে কেজি হিসেবে। প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে।
তারা  বলেন, বাজার মনিটরিং এর অভাবে ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেট তৈরি করে তরমুজ বিক্রি করছেন গোদাগাড়ী  উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য আপনাদের যদি কিছু করার থাকে, তাহলে করুন। কারণ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা যাই করুক, দোষ কিন্তু সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদেরকে দিবেনা, দিবে সরকারকে। আর প্রশাসনতো সরকারেরই অংশ।
আর ব্যবসায়ীগণ বলছেন, আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনে আনছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ সময় তার কাছে তরমুজ কেনার রশিদ দেখতে চাইলে তিনি বলেন, রশিদ সাথে নেই বাসায় আছে পরে দেখাতে পারবো।
তরমুজ রফিক  বলেন, আমরা তরমুজ আনি ঢাকা, বরিশাল গাজীপুর থেকে। তরমুজের দাম বেশি বলেই আমাদেরকে বেশি দামে কিনতে হয়। তরমুজ কিনে গোদাগাড়ী বাজার পর্যন্ত আনতে আমাদের খরচ হয় কেজিতে ২২-২৫ টাকা। প্রতিদিনই ৫-৭টা তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়। যার জন্য আমাদেরকে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।  উল্লেখ্য, তরমুজের দাম নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার হচ্ছে কিন্তু  ভ্রাম্যমাণ আদালত কোন অভিযান পরিচালনা করছেন না।
 এদিকে  মাত্র কয়েক দিন আগেও রাজশাহীর  বাজারে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল তরমুজ। তবে কোনো কারণ ছাড়ায় সেই তরমুজ রাতারাতি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা  ৮০ টাকা কেজি দরে। ৭ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি তরমুজের দাম বেড়েছে থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
বর্তমানে বাজারে খুচরায় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। হঠাৎ করে তরমুজের দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে দাম নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে বরিশাল, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালীর তরমুজ দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু বাজারে চাহিদা কমেনি। এখন বাজারে তরমুজের চাহিদা থাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার রাজশাহী নগরীর শালবাগানে আড়তগুলোতে পাইকারে তরমুজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা দরে। খুচরায় তরমুজ ক্রেতা সম্রাট করিম বলেন, গত শনিবার তরমুজ কিনেছিলাম প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে। তরমুজ আকারে ছোট ছিল। বড়গুলো ৫৫ টাকা প্রতি কেজি চাচ্ছিল। পাশেই ছোট আকারের বাহানের (মাচায় ঝুলন্ত) তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। তরমুজের এতো দাম বেশি হলে মানুষ কিনে খাবে কীভাবে।
শফিক ইসলাম নামের একজন জানান, এ বছর তরমুজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে গেল বলে মনে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে সব জায়গায় তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেল। কিন্তু এখন সেইভাবে চোখে পড়ছে না। তিনি বলেন দুদিন আগেও ২০ টাকা দরে তরমুজ কিনেছেন তিনি। তবে এখন সেই তরমুজের দাম ৮০ টাকা।
রাজশাহীর ফল বিক্রেতা খন্দাকার মনিরুজ্জামান মিনার বলেন, সাধারণত রাজশাহীতে বরিশাল, পটুয়াখালী থেকে তরমুজ নিয়ে আসেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০টি ট্রাকে তরমুজগুলো আনা হতো। কিন্তু সেখানে বৃষ্টির কারণে আগেই নষ্ট হয়ে গেছে তরমুজ। ফলে সেই জায়গাগুলো থেকে তরমুজ আসছে না। তবে এখন খুলনা, দিনাজপুর ও জয়পুরহাট থেকে রাজশাহীতে তরমুজ আসছে। তিনি বলেন, রাজশাহীতে তরমুজের চাহিদা ভালো আছে। তবে তরমুজ কম। প্রতিদিন দুই থেকে তিন ট্রাক তরমুজ রাজশাহীতে নিয়ে আসা হচ্ছে। চাহিদা বেশি থাকায় ট্রাক থামার পরেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তরমুজগুলো।
খুচরা বিক্রেতা শমসের আলী বলেন, ৮০ টাকা দরে তরমুজ অনেকেই কিনছেন। আবার অনেকেই দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। রাজশাহী ফল ব্যবসায়ী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি শাহিন হোসেন কালু জানান, বাজারে তরমুজ অল্প। তার উপরে চাহিদা বেশি। এখন দাম বেশি চাষি পর্যায়ে। তাই গ্রাহক পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা তরমুজ বিক্রি করছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে।

সর্বশেষ সংবাদ