ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রশ্নফাঁসের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা : মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বেরোবি,(রংপুর):  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি)  ২০১৪-১৫  স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে  ভর্তি করানো ও প্রশ্ন ফাসের অভিযোগে অভিযুক্ত পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কর্মচারী আবুল কালাম আজাদকে আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া ভর্তি পরীক্ষায় সম্পৃক্ত করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।  তাই আবারও ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের আশঙ্কা করছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। শাস্তিপ্রাপ্ত ঐ কর্মচারী বর্তমানে উপাচার্যের একান্ত সহকারী (পিএ)হওয়ায় আশঙ্কা কয়েকগুন বেড়ে গেছে। যার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিগণ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় তৎকালীন ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সেমিনার সহকারী  আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে আর্থিক সুবিধা গ্রহণসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও ওই বছরের ভর্তি পরীক্ষায় নিজের এক স্বজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার  ঘটনা জানাজানি হলে সে সময় তোলপাড় শুরু হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড, একে এম নুরন্নবী পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেন।  তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৫ সালের সালের ২৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭-তম সিন্ডিকেট সভায় ঐ কর্মচারীর বিরুদ্ধে ৫ বছরের জন্য আপগ্রেডেশন/প্রমোশন বন্ধসহ ইনক্রিমেন্ট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, আবুল কালামের সেই স্বজন পরীক্ষার সময় ধরা পড়লে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে জানতে চাইলে সেই পরীক্ষার্থী আবুল কালাম আজাদের নাম প্রকাশ করে দেয় ।
এ ঘটনার পর ওই কর্মচারী  আগের উপাচার্য অধ্যাপক নুর উন নবীর ৪ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ার পর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ দায়িত্ব নেয়ার পর একটি বিশেষ মহলের মাধ্যমে তাকে ম্যানেজ করে উপাচার্যের পিএ’র মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি হাতিয়ে নেন। বর্তমানে তিনি দাপটের সাথে এই দায়িত্ব পালন করছেন। এ বছরের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক(সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা যা আগামীকাল ২৬ নভেম্বর রোববার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে সেখানে উপাচার্যের পিএ হিসেবে ভর্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন ওরিয়েনটেশন কোর্সসহ ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি অংশ নিতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এক শিক্ষক জানান, উপাচার্যের পিএ হিসেবে আবুল কালাম আজাদ সার্বক্ষণিক্ষ উপাচার্যের সাথে থাকেন আর উপাচার্য নিজেই সামাজিক বিজ্ঞান ও জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ফলে ওই অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করার পর তার মাধ্যমে থাকার কথা। কিন্তু যেখানে সকল ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট সেই শাস্তি এখনও চলমান থাকা অবস্থায় ভর্তি পরীক্ষায়   অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা প্রবল।
এ বিষয়ে সরকার সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সভাপতি আপেল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, উপাচার্যের উচিৎ সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো। এমন প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত ব্যক্তিকে ভর্তি পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট করা সিন্ডিকেট কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সামিল।তিনি যদি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে কে মানবে?
অন্যদিকে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কিভাবে উপাচার্যের পিএ হিসেবে নিয়োগ পান তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাকে সেখান থেকে না সরালে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, যাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার শাস্তি চলাকালীন এ ধরনের কাজে জড়িত করার ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলবে।  আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব)  ড. ফরিদ উল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি উপাচার্য স্যারকে জানাবো। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর মোবাইলে  কল   করা হলেও তিনি  রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ সংবাদ