রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, জনভোগান্তি নিরসনে পদক্ষেপ·নিন

কয়েকদিনের দাবদাহের পর মুষলধারে বৃষ্টি রাজধানীতে যে স্বস্তি বয়ে এনেছিল তা বলার অপো রাখে না। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক নিয়তি, অল্প সময়েই সেই স্বস্তি পরিণত হলো জলাবদ্ধতা আর যানজটের ভোগান্তিতে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, বৃষ্টি হলেই রাজধানীবাসীকে যে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হবে এটাই কি নিয়তি হয়ে দাঁড়াচ্ছে? প্রতিবছরই দেখা যায় বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যার নেতিবাচক প্রভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। একটি দেশের রাজধানীর এই চিত্র কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। উল্লেখ্য, গত বুধবার থেকে কয়েক দফায় হালকা বৃষ্টি, মাঝে মাঝে চারদিক অন্ধকার করে রাজধানীতে শুরু হয় বজ্রবৃষ্টি। এতে অফিসগামী যাত্রী ও স্কুল-কলেজমুখী শিার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। তেমনি বিভিন্ন সড়কে পানি জমে গিয়ে সৃষ্টি হয় যানজট। এমনকি পুলিশ প্লাজা কনকর্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকালে গুলশানে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু শুটিং কাবের উল্টো দিকের পার্কের ভেতরে ওই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও মধ্যরাতের পর থেকে কয়েক দফার বৃষ্টিতে সেখানে পানি জমে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভেন্যু বদলে পুলিশ প্লাজার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান হয়। ফলে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা কী রূপ নিয়েছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে এখনো যদি সংশ্লিষ্টরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদপে গ্রহণ না করে তবে তা অত্যন্ত শঙ্কাজনক।
এটা বলাই বাহুল্য যে, রাজধানী ঢাকা জনসংখ্যাবহুল শহর। আর এই শহরে যখন এক পশলা বৃষ্টি হলেও ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন তার পরিপ্রেেিত সঠিক পদপে গ্রহণের বিকল্প থাকা উচিত নয়। কোনোভাবেই এটা প্রত্যাশিত হতে পারে না যে, বৃষ্টি হবে আর তার একটু পরেই রাজধানীর নিম্নাঞ্চল ছাড়াও ব্যস্ততম সড়কগুলোয় পানি জমে থেকে নগরবাসীর জীবনে নেমে আসবে চিরচেনা হতাশা আর অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। যেহেতু প্রতি বর্ষায় এই একই চিত্র পরিলতি হচ্ছে তখনথ পরিস্থিতি পর্যবেণসাপেে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্টদের পদপে নেয়া জরুরি বলেই আমরা মনে করি।
আমরা বলতে চাই, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে নগরজুড়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির হিড়িক পড়ে যায়, যার ফলে জলাবদ্ধতায় নতুন মাত্রা যোগ করে। এমনকি পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণেই কুফল ভোগ করছে রাজধানীর ১ কোটিরও বেশি মানুষ। ফলে যখন এত মানুষের এই দুর্ভোগ পোহানোর বিষয়টি নিয়মিত হয়ে দাঁড়াচ্ছেথ আর এর পরিপ্রেেিত সমস্যা সমাধান হচ্ছে না তখন এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি আর কী হতে পারে!সঙ্গত কারণেই, রাজধানীর এই জলাবদ্ধতা এবং এর জনদুর্ভোগ নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধান ছাড়াও গড়ে তুলতে হবে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ-ব্যবস্থা। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক পাম্প বসানো, নর্দমা, কালভার্ট এবং খালগুলো পরিষ্কার নিশ্চিত না হলে দুর্ভোগের অধ্যায় শেষ হবে না বলেই প্রতীয়মান হয়। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সেই অতীতের ভুলের মাশুল এখন দিতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ব্যবস্থাপনা কতটা বিপর্যস্ত করতে পারে নাগরিক জীবন, একই সঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব কত সমস্যাকীর্ণ হতে পারে; জলাবদ্ধতা তার একটি অন্যতম উদাহরণ। আমরা প্রত্যাশা করি, রাজধানীবাসীকে জলাবদ্ধতা এবং তাকে কেন্দ্র করে যানজটের এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে হলে সরকারের সুষ্ঠু পর্যবেণসাপেে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। যা পুরো রাজধানীবাসী ও সামগ্রিক অর্থে নাগরিক জীবনযাপনের স্বাভাবিকতার জন্যই অপরিহার্য।

সর্বশেষ সংবাদ