পোল্ট্রি খাত কর অবকাশ প্রত্যাহার হলে বাজার অস্থির হবে

পোল্ট্রি খাতে কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে এ খাতের ডিম, মুরগি ও একদিনের বাচ্চার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। ঘোষিত বাজেটে এ খাতের কর অবকাশ সুবিধা বাতিল করে এ খাতকে করের আওতায় আনার ফলে হতাশা দেখা দিয়েছে এ খাতের উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও এ খাতে খামারি-উদ্যোক্তা তৈরিতে চলতি অর্থবছরের ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৯ সাল পর‌্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা বহাল রাখার জোর দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর নিকেতনে পোল্ট্রি শিল্পের ৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটি (বিপিআইসিসি) কার‌্যালয়ে নেতারা এসব দাবি জানান।
বিপিআইসিসি’র আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, তিন দশক আগেও পোল্ট্রি একটি শতভাগ আমদানি নির্ভর খাত ছিল। সরকার এ খাতকে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করে। ২০০৭-১১ সাল পর্যন্ত বার্ড ফু’র ফলে এ খাতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। বন্ধ হয়ে যায় ৫০ শতাংশের বেশি খামার। কিন্তু কর অব্যাহতি সুবিধার ফলে থেমে থাকেনি এ শিল্পের অগ্রগতি।
তিনি বলেন, এ খাতে উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পোল্ট্রি শিল্পের কর অব্যাহতি সুবিধা ২০১৯ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করে, যদিও আমাদের দাবি ছিল ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
সদ্য ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটে স্পর্শকাতর এ খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করে করারোপ করা হয়েছে। যা এ শিল্পের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে ও নিরুৎসাহিত করবে বিনিয়োগ।
কর অব্যাহতি পুন:বহাল ও ঘোষিত কর প্রত্যাহার না হলে ডিম, মুরগি ও একদিন বয়সী বাচ্চার দাম বাড়বে, অস্থির হবে বাজার। এতে ক্রেতা, খামারি ও শিল্প-উদ্যোক্তা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মশিউর রহমান বলেন, বার্ড ফু’র কারণে অর্ধেকের বেশি খামারি এ পেশা ছেড়ে চলে গেছে। খামারের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছিল ৪০-৫০ হাজারে।
কর অব্যাহতি পেয়ে তা ৮০ হাজারে উন্নীত হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে হাজার হাজার কর্মসংস্থান। নতুনভাবে করারোপ হলে এ শিল্পে আবারও বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা’র (ওয়াপসা-বিবি) মহাসচিব সামছুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন, ঘোষিত বাজেটে পোল্ট্রি শিল্পের আয়ের ওপর করহার ‘শূন্য’ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ, পোল্ট্রি ফিডের আয়ের ওপর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
হাঁস-মুরগির-হ্যাচারির ক্ষেত্রেও ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে গভীর সংকটে পড়বে নতুন উদ্যোক্তারা। আগ্রহ হারাবে বিনিয়োগে আগ্রহীরা।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (বিএবি) মহাসচিব সাইদুর রহমান বাবু বলেন, পোল্ট্রি ফিডের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল সয়ামিল ও অয়েল কেক’র শুল্কহার শূন্য থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করার ফলে ফিডের দাম অনেকাংশেই বাড়বে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিইএ) মহাসচিব ডা. এম এম খান বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ দৈনিক প্রায় ৪ কোটি ২৬ লাখ ডিম ও প্রায় সাড়ে তিনহাজার মেট্রিক টন মুরগির মাংসের প্রয়োজন হবে। বিনিয়োগ দরকার হবে প্রায় ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে পোল্ট্রি শিল্পের উপর নতুনভাবে করারোপ হলে এ শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। মুরগির ডিম ও মাংসের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং এ শিল্পে বিনিয়োগের গতি শ্লথ হয়ে পড়বে।
এগ প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ইপিএবি) সভাপতি তাহের আহম্মেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজেটে কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা না থাকায় এ খাতে হতাশা নেমে এসেছে।
দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও আগামি দিনের প্রাণিজ আমিষের সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ সংবাদ