উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদ-উল-ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদ-উল-ফিতরের ১৮৮তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কর্মকা- সম্পন্ন করেছে। ঈদ জামাত নির্বিঘেœ সম্পন্নের লক্ষ্যে বর্তমানে মাঠ জুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক কর্মকান্ড। এর অংশ হিসাবে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কাতারের লাইন টানা, মাঠ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করণ, ধোয়া মুছা ও রংয়ের প্রলেপ দেওয়ার কাজে। যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ বর্তমানে প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে ঈদগাহ কমিটি। নিরাপদে জামাত অনুষ্ঠানের জন্য কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারী প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সনে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। এ হিসাবে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের ঈদের জামাতটি হবে ১৮৮তম ঈদের জামাত। প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় “সোয়া লাখি মাঠ”। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠে। বিশাল এই মাঠের মধ্যে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি। প্রতি কাতারে ৫ শতাধিক মুসুল্লি নামাযে অংশগ্রহণ করে থাকেন। সেই সাথে মাঠের বাইরে আশে পাশের বিরাট এলাকা জুড়ে ঈদের জামাতে অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা মিলিয়ে জামাতে অংশগ্রহনকারী মুসুল্লির সংখ্যা আড়াই থেকে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায় বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
মাঠের সুনাম ও জনশ্রুতির কারণে বাংলাদেশের দূর দূরান্তের জেলাসহ এমনকি বিদেশ থেকেও আগত ভিনদেশী মুসুল্লিরা ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতি বছরই এ সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জামাতে অংশগ্রহনের জন্য ঈদের ২/৩ দিন পূর্ব থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসুল্লিদের আগমন শুরু হয়। আগত মুসুল্লিরা ঈদগাহ মসজিদ, গেষ্ট হাউস এমনকি ঈদগাহ’র খোলামাঠে রাত্রি যাপন করে থাকেন।
এবারের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। ঈদের জামাতে ইমামতী করবেন আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। জামাতে শরীক হওয়া বিপুলসংখ্যক মুসুল্লির দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য নামায শুরুর ৫ মিনিট পূর্বে ৩টি, ৩ মিনিট পূর্বে ২টি ও ১ মিনিট পূর্বে ১টি শটগানের গুলি ফোটানো হবে। দূর দূরান্ত থেকে আসা মুসুল্লিদের অংশগ্রহনের সুবিধার্থে “শোলাকিয়া ষ্পেশাল” নামে দুইটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে সরকারীভাবে। একটি ট্রেন ভোর সাড়ে ৫টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অপর ট্রেনটি সকাল ৬ টায় ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া মাঠের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। নামায শেষে ট্রেনগুলো দুপুর ১২টায় স্ব স্ব গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মসজিদের ইমাম আবদুস সালাম গোলাপ বলেন, ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া মাঠে লাখ লাখ মুসলমান অংশগ্রহণ করে থাকে। বড় জামাতে অংশগ্রহণ করলে বেশি সোওয়াব হয় আর এ জন্যই দেশ বিদেশ থেকে লাখ লাখ মুসল্লি ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে নামাজে অংশ নিতে আসেন।
বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন এই জামাতে দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু অপর্যাপ্ত অযুখানা, টয়লেট ও বাথরুম সমস্যার কারণে ভোগান্তির মুখে পড়ে মুসুল্লীরা। এ ছাড়া পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় কাঁদার মধ্যে দাঁড়িয়ে অনেক মুসল্লি নামায আদায় করেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. আতাউর রহমান বলেন, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে প্রতিবছর মুসুল্লীর সংখ্যা বাড়ছে। মুসুল্লীর অনুপাতে যে পরিমাণ যে রকম সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার সে রকম সুযোগ সুবিধা এখানে নেই। তাই মাঠের পরিধি বৃদ্ধি, অযুখানা ও টয়লেটের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি জি.এস.এম জাফর উল্লাহ্ বলেন, নিরাপদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত একাধিকবার মাঠ পরিদর্শনসহ বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠে পানি সরবরাহ, পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন, সহ মুসুল্লীদের নামায পড়ার উপযোগী করে তোলার জন্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মাঠের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার প্রণয়নে কার্যক্রম চলছে। ঈদগাহ মাঠের আয়তন বাড়ানোসহ যাবতীয় উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সকল মহলের সঙ্গে আলোচনা করে ঈদগাহ মাঠ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, ঈদ-উল-ফিতরের জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদ-উল-ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ। ওই জামাতে অংশগ্রহণ করবেন দেশ- বিদেশের লাখ লাখ মুসুল্লী। মুসুল্লীরা যাতে নির্বিঘেœ জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারে সে জন্য চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ময়দানে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের ১৮৮তম জামাত সুষ্টুভাবেই সম্পন্ন হবে এবং মাঠের পরিধি বৃদ্ধিসহ সার্বিক উন্নয়নে সরকার এগিয়ে আসবে এমনটাই আশা করছেন কিশোরগঞ্জবাসী।

সর্বশেষ সংবাদ