গুদামে পচছে ৪১ লাখ টাকা

জিটিবি বিনোদন: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসিতে) যথেষ্ট পরিমাণ রাসায়নিক মজুদ থাকা সত্ত্বেও ৪১ লাখ ৬৬ হাজার ২৫০ টাকার অতিরিক্ত রাসায়নিক কেনা হয়েছে। অপ্রয়োজনে এত বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক কেনার নেপথ্যে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও অজ্ঞতার কারণেই এই ‘অপচয়’ হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট এক শীর্ষ কর্মকর্তা।সম্প্রতি স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তরের এসএএস সুপারিনটেন্ডেট শাহাজাহান নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অতিরিক্ত রাসায়নিক কেনার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাসায়নিক কেনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আপত্তিকৃত টাকা আদায় করে করপোরেশনের তহবিলে জমা দিয়ে প্রমাণিক অডিট অফিসে পাঠানোরও সুপারিশ করেছেন শাহাজাহান।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ঢাকা কার্যালয়ের ২০১২-১৪ হিসাব নিরীক্ষাকালে ফিল্মের নেগেটিভ তৈরির কাছে ব্যবহৃত থায়োসালফেট (ঃযরড়ংঁষঢ়যধঃব) ক্রয়ের বিল ভাউচার, পূর্বের মজুদ ও খরচের হিসাব পর্যালোচনা করে নিরীক্ষক দেখেছেন, ২০১২ সালের ১ জুলাইয়ের আগে এই রাসায়নিকের ছিল ৪ হাজার ৪০০ কেজি। এরপর সে বছরেরই ১৫ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার কেজি কেনা হয়। যদিও ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর খরচ হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৩০০ কেজি। আর ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মজুদ রয়েছে ৬ হাজার কেজি।অপরদিকে পড়ষড়ঁৎ ফবাবষড়ঢ়বৎ-ঈউ-২ ক্রয়ের ২০১২-১৪ সালের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, থায়োসালফেটের মতো একই সময়ের আগে পূর্বে মজুদ ছিল ৫২৫ কেজি। ১৫ সেপ্টম্বর কেনা হয়েছে ৪২৫ কেজি। কিন্তু কেনার আগের দিন পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ২৭৫ কেজি। আর ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মজুদ রয়েছে ৫৭৫ কেজি।
সে হিসাবে, অতিরিক্ত থায়োসালফেট কেনার জন্য ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং পড়ষড়ঁৎ ফবাবষড়ঢ়বৎ-ঈউ-২ কেনার জন্য ব্যয় করা হয়েছে ২১ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা।অথচ বিএফআর এর পরিশিষ্ট ৩ এর ক্রমিক ৭ অনুযায়ী, প্রয়োজনের অতিরিক্ত মালামাল কিনে সংরক্ষণ করা যাবে না।তবে বিএফডিসির স্থানীয় অফিস এর জবাবে বলেছে, ফিল্ম আর্কাইভের কাজ শুরু হলে মজুদ রাসায়নিক শেষ হবে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তপন কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একটি মিটিং আছি, পরে কথা বলবো।’
পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সবকিছুতো আর ফোনে বলা যায় না। আপনি সময় করে আমার অফিসে আসেন এ বিষয়ে কথা বলবো।’তবে এফডিসির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এ রাসায়নিক কেনার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না।সূত্র আরও জানায়, একটা সময় অনেক রাসায়নিক ব্যবহার করা হতো, তখন দুনীর্তির সুযোগও কম ছিল। কিন্তু ডিজিটাল সিনেমার যুগে এসে রাসায়নিক ব্যবহার কমে যাওয়ায় অসাধু কর্মকর্তারা অতিরিক্ত রাসায়নিক কিনে কমিশন খান।
বিএফডিসির প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক ও সেই সঙ্গে প্রকল্প পরিচালক লক্ষ্মণ চন্দ্র দেবনাথ এ ব্যাপারে বলেন, ‘যখন ৩৫ মি.মি. ফিল্ম ছিল তখন এ কেমিক্যালগুলো কেনা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দু’বছরের মধ্যে যে ৩৫ মি.মি. এর ফিল্ম বন্ধ হয়ে যাবে তা আমরা বুঝতে পারিনি। এখনতো আর কেউ ৩৫ মি.মি. দিয়ে ফিল্ম বানায় না, সবাই ডিজিটালে ছবি বানায়। যার কারণে কেমিক্যালগুলো এখন আর ব্যবহার করা হয় না।’তবে এফডিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কর্মকর্তারা জেনেবুঝে কমিশনের জন্য সরকারি অর্থের অপচয় করেছেন।

সর্বশেষ সংবাদ