পদ্মা সেতু প্রকল্পের অনুদান অন্য খাতে কেন ব্যয় হবে

সম্প্রতি বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দেয়া ভারতীয় অর্থায়ন অন্য প্রকল্পে ব্যয় করার অভিযোগ মিলেছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ভারত সরকার ২০ কোটি ডলার বাংলাদেশকে অনুদান দিয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প ও সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের যে কেলেংকারি ঘটেছে তা সারা বিশ^ মিডিয়া জানে। অথচ,সেই পদ্মা সেতুর অনুদান নিয়ে আবারও উলট পালট কেন? বুঝতে বাকি নেই এই প্রকল্পের প্রতি সরকারের সদ্বিচ্ছার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত। একই ভুলের বারবার কেন পূনরাবৃত্তি হচ্ছে তা দেশের মানুষ জানতে চায়।
বাংলাদেশ সরকার ভারতের এই অনুদানের টাকা কয়েক দফায় চেকের মাধ্যমে গ্রহণ করেছে। আবার, সেই অনুদানের চেক অর্থ বিভাগের সাধারণ হিসাবে জমা করাও হয়েছে। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যাংক হিসাবে সে অর্থ পৌঁছায়নি। ২০১৩ সালের শেষদিকে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরের সময় অনুদানের ৫ কোটি ডলারের চেক হস্তান্তর করা হয়। জানা গেছে, গতবারই অনুদানের অর্থ দেওয়া সম্পন্ন করেছে ভারত। অথচ পদ্মা সেতু প্রকল্পে এখনও সে টাকা জমা হয়নি। পদ্মা সেতু প্রকল্পে জমা দেয়া ভারতীয় অনুদান অন্য প্রকল্পে ব্যয় করা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, একটি প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের অনুদানের অর্থ একটি প্রকল্পের পরিবর্তে অন্য প্রকল্পে ব্যয় করা কতটা যৌক্তিক হয়েছে? সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর পদ্মা সেতু প্রকল্প দেশে-বিদেশে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও প্রতিবেশী দেশ এ প্রকল্পে অনুদান দিয়েছে। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রটি এত কিছু জানার পর অন্য খাতে অনুদান জমা দেয়াটা তাদের সৎ মনোভাব প্রশ্নবিদ্ধ থাকছে! সরকারও দ্বিতীয়বার একই ভুল করে সমালোচনা থেকে পার পাবে না।

সরকার এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত ছিল, অনুদানের অর্থের সদ্ব্যবহার কঠোরভাবে নিশ্চিত করা। একই ঘটনা যদি বারবার ঘটতে থাকে এবং বন্ধুসম রাষ্ট্রগুরো যখন জানতে পারবে অনুদানের অর্থ যথাযথ কাজে ব্যবহার করা হয়নি তখন স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অন্যদিকে এক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অনুদানের অর্থ অন্য প্রকল্পের জন্য ব্যয় হয় কী করে? কেন করা হল? কেন বা নেয়া হল? তা জনগণের কাছে প্রকাশ করা উচিত ছিল। জনগণকে বারবার ধোকা দিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থাপনাই বারবার প্রতারিত হচ্ছে। বাজেট ঘোষণা হয়েছে। এ ঘোষণাটি একদিনে আসে না। অনেকদিন ধরে গবেষণা আলোচনা এবং পর্যালোচনার পর আমরা অর্থমন্ত্রীর মুখে ঘোষণা পাই। সেই ঘোষনায় পদ্মা প্রকল্প ছিল? থাকলে কেন অনুদানের টাকা সেখানে? জাতি জানতে চায় কে বা কারা কোনো প্রকল্পে ভারতীয় অনুদানের অর্থ ব্যয় করেছে এবং কিভাবে করছে? কার নির্দেশে কারা এই অনুদানের অর্থ যথেচ্ছভাবে ব্যয় করা হলো সেটা দেশবাসীকে জানার অধিকার রাখে। গণমাধ্যমকে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেওয়া ভারতীয় অনুদানের অর্থ অন্য প্রকল্পে ব্যয় করার সুযোগ নেই। আমরা জানতে চাই, সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও এত বড় অনিয়ম ঘটতে পারল কী করে। এটি অনুসন্ধান করা দরকার এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও দরকার। নইলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে। পদ্মা সেতু শুধু একটি অঞ্চলের জন্যই নয়, গোটা দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের আভাস অনুযায়ী, পদ্মা সেতু তৈরি হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর ০.৫৬ শতাংশ বাড়বে। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ায় সরকার সেতু নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। তারপরও ভারতীয় অনুদানের অর্থ ব্যবহারে অনিয়ম করা হলো কেন বা অনিয়ম করে কী বার্তা দেওয়া হলো সেটা জানা জরুরি। সরকার বারবার অভিযোগ করছে, একটি মহল চায়নি বলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করেনি। ভারতীয় অনুদানের অর্থ পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যবহার করতে দিচ্ছে না কোনো মহল সেটা আমরা জানতে চাই। এ মহলটি কি সরকারের ভেতরেই রয়েছে? অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা নিশ্চুপ কেন? আমরা চাই, সরকার এ মহলটিকে খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সর্বশেষ সংবাদ