জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া জামায়াত নিষিদ্ধ সহজ নয়

দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে জামায়াতে ইসলামি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে । নানা জন নানা মতো প্রকাশ করছেন পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টকশোতে। অধিকাংশই বলছেন দেরি না করে দলটি নিষিদ্ধ করতে। তাদের সহিংসতামূলক কর্মকা- দেখে এ দাবি জোরালো হয়েছে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ায় এবং ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ায় তাদের নিষিদ্ধ করার আইনি দাবি পোক্ত হয়েছে।
এরই মধ্যে গত সোমবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন, সরকার যখন মনে করবে, তখনই জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করার বিল সংসদে উত্থাপন করা হবে। তিনি জানান, জামায়াত ও তার অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা রয়েছে। সরকার যখন মনে করবে, বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে তা পাসের জন্য সংসদে আনা হবে।
এর আগে, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাজনীতিক দলের বিচারের বিধিসম্বলিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ পরিবর্তনের সংশোধনী মন্ত্রিসভায় উঠবে। নতুন বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরই আইনটি পাস হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এর আগে ও পরে বিভিন্ন সময় আইনমন্ত্রী একই কথা বলেছেন। সম্ভবত আরও বলবেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, জামায়াত নিষিদ্ধ প্রশ্নে সরকারের মধ্যে এক ধরনের ডিলেমা কাজ করছে।জামায়াত নিষিদ্ধ প্রশ্নে সরকারের মধ্যে এক ধরনের ডিলেমা কাজ করছে
জামায়াত নিষিদ্ধ প্রশ্নে সরকারের মধ্যে এক ধরনের ডিলেমা কাজ করছে যদিও ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনীতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। নিবন্ধন বাতিল মানেই রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। সাধারণের দাবি, স্বাধীনতাবিরোধী এই দলের রাজনীতিক অধিকার কেড়ে নিতে হবে। কেন, কী কারণে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাওয়ার দরকার আছে বলে মনে করি না। দেশবিরোধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী একটি দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক করারই-বা কী আছে? নিষিদ্ধ করতে কোনো আইন দরকার, আন্তর্জাতিক বিশ্বে এর উদাহাণ কী কী আছে সেটিও-বা খুঁজে বের করত হবে কেন?
আইন না থাকলে আইন করা যাবে। নিষিদ্ধ করতে হলে আইনকানুন ফ্যাক্টর নয়। আর তারা যে অপরাধ করেছে, এজন্য নতুন কোনো যুক্তিও খুঁজে বের করতে হবে না। দরকার রাজনীতিক ইচ্ছে ও সক্ষমতা। প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতিক ইচ্ছে থাকলেও তারা কি জামায়াত নিষিদ্ধ করতে রাজনৈতিকভাবে সক্ষম?আমি ব্যক্তিগতভাবে জামায়াতের মতো সকল সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতিক দলের তৎপরতা নিষিদ্ধের দাবির সঙ্গে শতভাগ একমত হলেও এটা বিশ্বাস করি, এই ‘মহান’ দায়িত্ব আওয়ামী লীগের একার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। ইচ্ছে থাকলেও এই মুহূর্তে তা করার রাজনীতিক সক্ষমতা তাদের নেই। এজন্য জাতীয় ঐকমত্য দরকার। আওয়ামী লীগ ও তার বামপন্থী মিত্রদের প্রতি এদেশের কমবেশি ৪০ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে। হতে পারে জামায়াতের সমর্থন ৫ শতাংশের বেশি নয়। কিন্তু জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল বিএনপি নেতৃত্ব যদি জামায়াত ছেড়ে না আসে তা হলে নিষিদ্ধ-পরবর্তী তৎপরতা আওয়ামী লীগের একার পক্ষে সামলানো সম্ভব হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সেই যোগ্যতা এখন নেই। এ জন্যই বলছি, জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য দরকার। কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারেন, সংসদে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও এবং সারাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে থাকলেও কেন তা সম্ভব নয়? এ কারণে যে, জামায়াতের পক্ষে বিএনপির মতো একটা শক্তিশালী দল রয়েছে যাকে এদেশের ৩৩-৩৫ শতাংশ মানুষ সমর্থন করে। কাগজে কলমে একে নিষিদ্ধ করা তো তো কয়েক মিনিটের ব্যাপার, একটি প্রজ্ঞাপনে সই করা বা একটি বিল পাস করতে যা সময় লাগে। অনেক আইন ও বিধান এখনই বিদ্যমান যা দিয়ে তা করা যায়। নতুন আইন পাস করতেও আওয়ামী লীগের পক্ষে একদিনই যথেষ্ট। কিন্তু নিষিদ্ধ করে কী হবে সেটিও ভাবতে হবে। জামায়াতি তা-ব হয়তো পুলিশ, বিজিবি বা র‌্যাব দিয়ে সামলানো যাবে; কিছু প্রাণহানির ঘটনাও মেনে নেওয়া যাবে। এরপর কী হবে?
জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া জামায়াত নিষিদ্ধ সহজ নয়
দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে জামায়াতে ইসলামি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে । নানা জন নানা মতো প্রকাশ করছেন পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টকশোতে। অধিকাংশই বলছেন দেরি না করে দলটি নিষিদ্ধ করতে। তাদের সহিংসতামূলক কর্মকা- দেখে এ দাবি জোরালো হয়েছে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ায় এবং ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ায় তাদের নিষিদ্ধ করার আইনি দাবি পোক্ত হয়েছে।
এরই মধ্যে গত সোমবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন, সরকার যখন মনে করবে, তখনই জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করার বিল সংসদে উত্থাপন করা হবে। তিনি জানান, জামায়াত ও তার অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা রয়েছে। সরকার যখন মনে করবে, বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে তা পাসের জন্য সংসদে আনা হবে।
এর আগে, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাজনীতিক দলের বিচারের বিধিসম্বলিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ পরিবর্তনের সংশোধনী মন্ত্রিসভায় উঠবে। নতুন বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরই আইনটি পাস হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এর আগে ও পরে বিভিন্ন সময় আইনমন্ত্রী একই কথা বলেছেন। সম্ভবত আরও বলবেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, জামায়াত নিষিদ্ধ প্রশ্নে সরকারের মধ্যে এক ধরনের ডিলেমা কাজ করছে।জামায়াত নিষিদ্ধ প্রশ্নে সরকারের মধ্যে এক ধরনের ডিলেমা কাজ করছে
জামায়াত নিষিদ্ধ প্রশ্নে সরকারের মধ্যে এক ধরনের ডিলেমা কাজ করছে যদিও ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনীতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। নিবন্ধন বাতিল মানেই রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। সাধারণের দাবি, স্বাধীনতাবিরোধী এই দলের রাজনীতিক অধিকার কেড়ে নিতে হবে। কেন, কী কারণে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাওয়ার দরকার আছে বলে মনে করি না। দেশবিরোধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী একটি দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক করারই-বা কী আছে? নিষিদ্ধ করতে কোনো আইন দরকার, আন্তর্জাতিক বিশ্বে এর উদাহাণ কী কী আছে সেটিও-বা খুঁজে বের করত হবে কেন?
আইন না থাকলে আইন করা যাবে। নিষিদ্ধ করতে হলে আইনকানুন ফ্যাক্টর নয়। আর তারা যে অপরাধ করেছে, এজন্য নতুন কোনো যুক্তিও খুঁজে বের করতে হবে না। দরকার রাজনীতিক ইচ্ছে ও সক্ষমতা। প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতিক ইচ্ছে থাকলেও তারা কি জামায়াত নিষিদ্ধ করতে রাজনৈতিকভাবে সক্ষম?আমি ব্যক্তিগতভাবে জামায়াতের মতো সকল সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতিক দলের তৎপরতা নিষিদ্ধের দাবির সঙ্গে শতভাগ একমত হলেও এটা বিশ্বাস করি, এই ‘মহান’ দায়িত্ব আওয়ামী লীগের একার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। ইচ্ছে থাকলেও এই মুহূর্তে তা করার রাজনীতিক সক্ষমতা তাদের নেই। এজন্য জাতীয় ঐকমত্য দরকার। আওয়ামী লীগ ও তার বামপন্থী মিত্রদের প্রতি এদেশের কমবেশি ৪০ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে। হতে পারে জামায়াতের সমর্থন ৫ শতাংশের বেশি নয়। কিন্তু জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল বিএনপি নেতৃত্ব যদি জামায়াত ছেড়ে না আসে তা হলে নিষিদ্ধ-পরবর্তী তৎপরতা আওয়ামী লীগের একার পক্ষে সামলানো সম্ভব হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সেই যোগ্যতা এখন নেই। এ জন্যই বলছি, জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য দরকার। কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারেন, সংসদে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও এবং সারাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে থাকলেও কেন তা সম্ভব নয়? এ কারণে যে, জামায়াতের পক্ষে বিএনপির মতো একটা শক্তিশালী দল রয়েছে যাকে এদেশের ৩৩-৩৫ শতাংশ মানুষ সমর্থন করে। কাগজে কলমে একে নিষিদ্ধ করা তো তো কয়েক মিনিটের ব্যাপার, একটি প্রজ্ঞাপনে সই করা বা একটি বিল পাস করতে যা সময় লাগে। অনেক আইন ও বিধান এখনই বিদ্যমান যা দিয়ে তা করা যায়। নতুন আইন পাস করতেও আওয়ামী লীগের পক্ষে একদিনই যথেষ্ট। কিন্তু নিষিদ্ধ করে কী হবে সেটিও ভাবতে হবে। জামায়াতি তা-ব হয়তো পুলিশ, বিজিবি বা র‌্যাব দিয়ে সামলানো যাবে; কিছু প্রাণহানির ঘটনাও মেনে নেওয়া যাবে। এরপর কী হবে?

সর্বশেষ সংবাদ