অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াই শুরু চার দেশে যান চলাচল

সম্প্রতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরিত মোটরযান চুক্তি বিবেচনায় নিলে শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন ইন সাউথ এশিয়া থ্রু ট্রান্সপোর্ট কানেক্টিভিটি: অপারেশনালাইজেশন দ্য মোটর ভেহিকল এগ্রিমেন্টস (এমভিএ)’ শীর্ষক সেমিনারটির বিষয়বস্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। লিখিতভাবে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে যে মোটর ভেহিকল এগ্রিমেন্টস (এমভিএ) হলো, তার জন্য এখনো চূড়ান্ত হয়নি রুট। অথচ রুট নির্ধারণ ছাড়া এমভিএ কার্যকরের প্রশ্ন তোলাই হাস্যকর।প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক পদস্থ কর্মকর্তা আমাদের প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বিবিআইএনের যান চলাচলের জন্য সড়ক উন্নয়নে সাত প্রকল্প চিহ্নিত করেছেন তারা। সে ক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, জয়দেবপুর-এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-বাংলাবান্ধা (বুড়িমারী) সড়ক, পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক, যশোর-বেনাপোল সড়ক, ঢাকা-নরসিংদী-সিলেট-তামাবিল সড়ক, বারইয়ার-রামগড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং পদ্মা সেতু, দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতুর নির্মাণ আবশ্যক। অনুমান করা যায়, সে ক্ষেত্রে বিবিআইএনের মধ্য দিয়ে এমভিএর আওতায় সম্ভাব্য রুট হতে পারে চারটি।এক. কলকাতা থেকে পেট্রাপোল, বেনাপোল, ঢাকা, আখাউড়া হয়ে আগরতলা পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ রুট; দুই. আগরতলা থেকে আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রুট; তিন. সমদ্রুপ ঝংকার হয়ে গুয়াহাটি, শিলং, তামাবিল, সিলেট হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ভুটান-ভারত-বাংলাদেশ রুট এবং চার. কাঠমান্ডু থেকে কাঁকরভিটা, ফুলবাড়ি, বাংলাবান্ধা, মংলা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ত্রিদেশীয় রুট। কাজগুলো মোটেই সহজ নয়। বরং বিশেষজ্ঞরা যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতে আলোচ্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আনুমানিক ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন। তার সঙ্গে দরকার সময়।প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, চুক্তিটি বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তিন বছর সময়ের কথা বলছে। কিন্তু আমরা বলেছি, ছয় মাসের বেশি সময় দেওয়া যাবে না। কারণ চুক্তি বাস্তবায়ন দেরি হওয়া মানে এটি অকার্যকর হয়ে পড়া। তার এ মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই বললেই চলে। তার আশাবাদ বাস্তবে পরিণত হোক, সে কামনাই করবেন সবাই। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কাক্সিক্ষত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বন্দরের সক্ষমতা কতটা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে, বলা সহজ নয়।কেননা ওই সময়সীমায় কার্য সম্পাদন করতে চাইলে অবশ্যই জুলাইয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় ও চতুর্পক্ষীয় চুক্তি বা প্রটোকলের অনিষ্পন্ন কাজ সম্পন্ন করতে হবে; বিস্তারিতভাবে সমঝোতা ও অনুমোদনের জন্য সেপ্টেম্বরের পর সময় হয়তো মিলবে না; পরীক্ষামূলক যান চলাচলের সময়সীমা অক্টোবরের বাইরে যাওয়া চলবে না এবং যান ট্র্যাকিং, আইসিটি ব্যবস্থা ইনস্টলেশনসহ গোটা নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো বসাতেই হবে ডিসেম্বরের মধ্যে। কাজগুলো ওই সময়সীমায় করা অসম্ভব, সে কথা কেউ বলবেন না। কথা, কাজের তালিকা ও বাস্তবায়নকারীদের হাল দেখে খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না অনেকে।
তা ছাড়া ওই আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ ঘিরে ট্রানজিট ফি, বাণিজ্য না বিনিয়োগ সুযোগ প্রভৃতি জটিল ইস্যুর মীমাংসা হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি, এসব গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা সংশ্লিষ্টদের মাথায় আছে এবং তারা এগুলোর সুরাহার লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উপযুক্ত অবকাঠামো ছাড়া কিন্তু এমভিএ’র প্রাক্কলিত সুবিধাগুলো দুর্ভোগে পরিণত হতে পারে।

সর্বশেষ সংবাদ