নিরবে নিভৃতে মা বাবার পাশেই ঘুমিয়ে আছেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর জলিল

শাফায়াত সজল, নওগাঁ থেকে ফিরেঃ নওগাঁর জলিল বলেই তাকে বেশি চিনতো। হ্যাঁ আমি মরহুম আব্দুল জলিল এমপি’র কথায় বলছি। আব্দুল জলিল ১৯৩৯ সালের ২১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চকপ্রাণ গ্রামে। তার বাবার নাম ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং মাতার নাম জারিনা ফায়েজ। তাদের কবরের পাশেই ছায়া ঘেরা পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এই কর্মবীর। বাবা ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ব্যবসায়ী। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনের শুরু। স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেই তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
আব্দুল জলিল ছিলেন একজন খ্যাতিমান দেশবরেণ্য অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ এর দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালে নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬০ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (সম্মান) এবং ১৯৬৪ সালে এমএ পাস করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ নম্বর সেক্টরের মুখ্য সমন্বয়কারী ছিলেন আব্দুল জলিল। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে নওগাঁ সদর আসন থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
পরপর দুইবার আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হোন এই রাজনীতিবিদ। ১৯৯৬ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হলে ১৯৯৮ সালে তাঁকে টেকনোক্র্যাট কোটায় বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০১ এবং ২০০৮ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি কিডনির সমস্যায় এবং হৃদরোগে ভুগছিলেন। তার হৃৎপিণ্ডের তিন তিনবার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল।
২০১৩ সালে ফেব্রুয়ারিতে নওগাঁয় অবস্থানকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ঢাকায় নেয়া হলে তিনি কিছুটা সুস্থ হন। ২৬ ফেব্রুয়ারি উন্নততর চিকিৎসার লক্ষ্যে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৪ মার্চ সোমবার তার হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়। অপারেশন সফল হয়। কিন্তু ডায়ালাইসিস জনিত জটিলতায় ৬ মার্চ ভোর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হয়। ঐদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সময় সাড়ে ছয়টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এসময় তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বৎসর। তাকে তার নিজ বাসভবন নওগাঁ জেলার সদর থানার চকপ্রান গ্রামে দাফন করা হয়।

সর্বশেষ সংবাদ