রাণীনগরে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ॥ চারা সংকটে বেশির ভাগ কৃষকই ব্যার্থ

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় ধান লাগানোর উপযুক্ত জমিতে রোপা-আমন ধানের চারা সংকটের কারণে পকেটে টাকা থাকলেও জমি লাগাতে পাড়ছে না উপজেলার প্রায় ২৪ হাজার কৃষক। তবুও কিছু কৃষক নানা কায়দায় চারা সংগ্রহ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। গত মধ্য আগষ্টের বন্যায় নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানির প্রবল চাপে নওগাঁর রাণীনগর-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের চার জায়গায় ভেঙ্গে গেলে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির রোপা-আমন ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পানি কমতে থাকায় বিশেষ করে উচু এলাকার জমি গুলোতে ধান লাগানোর উপযুক্ত হওয়ায় মৌসুমের কিছুটা সময় হাতে থাকলেও চারা সংকটের কারণে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বার্থ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা চাহিদা মত সহজ মূল্যে আমন ধানের চারা পাচ্ছে না। বুক ভরা আশা নিয়ে প্রান্তিক ও বর্গা চাষিরা তাকিয়ে আছে কৃষি বিভাগের দিকে। বন্যা কবলিত এলাকার উত্তর জেলা গুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রান সামগ্রীর পাশাপাশি কৃষকদের কমড় খাড়া করে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ধানের চারা বিতরণ করা হলেও নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে কোন প্রকার চারা প্রদান করা হয়নি। যদিও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কিছু পরিমাণ চারা দেখা গেলেও চরা মূল্য এবং ব্যাপক চাহিদার কারণে অনেক কৃষকই কিনতে সাহস পাচ্ছে না। যে পরিমাণ চারা পাওয়া যাচ্ছে দামের দিক দিয়ে আগের তুলনায় তিন/চার গুন বেশি। তাই অধিকাংশ কৃষকের নতুন করে ধান লাগানোর চিন্তা মাথায় নিয়েও কুলে উঠতে পারছে না। ধান উৎপাদনের দিক দিয়ে এই উপজেলার ব্যাপক কদর থাকলেও এবারের বন্যার কারণে প্রধান এই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সরেজমিন উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানিতে শত শত বিঘার রোপণকৃত রোপা-আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমে যাওয়ায় জমি গুলো খালি পড়ে আছে। চারা সংকটের কারণে সময় থাকলেও কৃষকরা নতুন আবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।
উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক আত্তাব হোসেন ও সিম্বা গ্রামের কাজী মোশারফ হোসেন জানান, বন্যার পানি সড়ে যাওয়ায় আমার কিছু জমি ধান লাগানোর উপযুক্ত হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) ত্রিমোহনী হাটে আমন ধানের চারা কিনতে এসেছি। যে পরিমাণ চারা আমদানি হয়েছে তার তিন গুন ক্রেতা রয়েছে। কোন মতে আমি পাঁচ পোন চারা কিনেছি। প্রতি পোন চারার দাম ৩ হাজার ২শ’ টাকা। ইচ্ছে থাকলেও চারার দামের কারণে সমদয় জমি লাগাতে পারছি না।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, বন্যার কারণে রাণীনগরে চলতি মৌসুমে রোপা-আমন ধান সহ বীজ তলার ব্যাপক ক্ষতি হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় কিছু জমিতে ধান লাগানোর উপযোগী হলেও কৃষি গবেষকদের মতে ১৫ সেপ্টেম্বরের পরে ধান লাগানোর জন্য উপযুক্ত সময় নয়। তারপরও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বি-৩৪ জাতের ২ শ’ কেজি ধানের আপদকালীন বীজ তলা তৈরি করায় ইতিমধ্যেই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রায় ২ শ’ কৃষকের মাঝে চারা বিতরণ করা হয়েছে। এবারের বন্যায় রোপা-আমন ধানের ক্ষতি (টাকার অংকে) ১ শ’ ৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার মত।

সর্বশেষ সংবাদ